ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে রাসেল ডোমিঙ্গোই প্রধান কোচ

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৮ আগস্ট ২০১৯

অবশেষে রাসেল ডোমিঙ্গোই প্রধান কোচ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবশেষে রাসেল ডোমিঙ্গোই প্রধান কোচ হয়ে গেলেন। এ দক্ষিণ আফ্রিকান কোচকেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ করা হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণাও দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের কোচ স্টিভ রোডসের স্থলাভিষিক্ত হলেন ডোমিঙ্গো। ডোমিঙ্গোকেই নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিল বিসিবি। সামনেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট ও ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ রয়েছে। এর আগেই ডোমিঙ্গো বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। এ মুহূর্তে দুই বছরের জন্য ডোমিঙ্গোকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূলত আপাতত টি২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাবেন ডোমিঙ্গো। দুই বছরের জন্য নিয়োগ মানে হচ্ছে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ডোমিঙ্গোর সঙ্গে বোর্ডের চুক্তি থাকছে। যদি টি২০ বিশ্বকাপে আশানুরূপ ফল মিলে এবং তার দল পরিচালনা মনমুগ্ধ করে, তাহলে সেই চুক্তি স্বাভাবিকভাবেই ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত হবে। আজ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরু হচ্ছে। ডোমিঙ্গো ২১ আগস্ট বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। দায়িত্ব বুঝে নেবেন। বাংলাদেশ দলের কোচ হওয়ার দৌড়ে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে একমাত্র ডোমিঙ্গোই বাংলাদেশে এসে সাক্ষাতকার দিয়ে গেছেন। তার পরিকল্পনা, উপস্থাপনায় সন্তুষ্ট বিসিবিও। তিনিই শেষ পর্যন্ত কোচ হলেন। কোচ হওয়ার দৌড়ে শুরুতে বিসিবির তালিকায় ছিল অনেক নাম। গ্যারি কার্স্টেন, টম মুডি, মিকি আর্থার, ওটিস গিবসন, মাহেলা জয়বর্ধনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের পল ফারব্রেস, জিম্বাবুইয়ের গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও শ্রীলঙ্কার চন্দিকা হাতুরাসিংহে এবং নিউজিল্যান্ডের মাইক হেসন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডোমিঙ্গো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ হওয়ার দৌড়ে শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন দুইজনই হেসন ও ডোমিঙ্গো। ডোমিঙ্গো সাক্ষাতকার দিয়ে গেলেও হেসনের নামটিই বেশি উচ্চারিত হয়। তিনি আবার ভারতের কোচ হওয়ার আশায় ছিলেন। ভারত ক্রিকেট বোর্ডের কাছে সাক্ষাতকারও দিয়েছেন। কিন্তু কোচ হতে পারেননি। একদিন পরে বিসিবিও তাকে কোচ করল না। ডোমিঙ্গোকেই বেছে নিল। সব কোচকে পেছনে ফেলে ডোমিঙ্গোই হয়ে গেলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ। বিশ্বকাপ শেষে কোচ নিয়োগের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। সেই প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের সাবেক সফল কোচ হেসন যেন এগিয়ে ছিলেন। আগামী বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে টি২০ বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপে ভাল করতে সবাই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কন্ডিশন এক থাকা নিউজিল্যান্ড কোচের দিকেই ঝুঁকছে। এমনই ধারণা করা হয়। হেসনও সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চেয়েছেন। আর তা নিতে গিয়ে বাংলাদেশকেও ঝুলিয়ে রেখেছেন। তার আশা যে ছিল ভারতের কোচ হওয়ার। যদি ভারত কিংবা অন্য দলের কোচ হওয়া যায় সেই সুযোগ নিতে চেয়েছেন হেসন। তাতে করে স্বাভাবিকভাবেই হেসনের জন্য আশায় থাকলে বিসিবিকে আরও অপেক্ষাতে থাকতে হতো। তাছাড়া হেসনের চাহিদারও তো শেষ নেই। হেসনকে তাই কোচ করা হলো না। সেই তুলনায় ডোমিঙ্গোর আসলে বিশেষ কোন চাহিদা নেই। বিসিবি যেমনভাবে দলের সঙ্গে সবসময় থাকা, জাতীয় দলের খেলা না থাকলেও ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রস্তুতি ক্যাম্প করা, লীগে ক্রিকেটারদের খেলা দেখা এবং একটি ভাল দলে পরিণত করার চাহিদা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। ডোমিঙ্গোর মাধ্যমে সেই চাহিদা পূরণ হবে। ডোমিঙ্গোও সেই প্রতিশ্রুতি দেন। আর তাই ব্যাটে-বলে মিলে যায়। ডোমিঙ্গোই তাই শেষ পর্যন্ত কোচ হয়েও যান। ডোমিঙ্গোর কোচিং ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ। তিনি জাতীয় দলে কখনও খেলেননি। তবে কোচিং ক্যারিয়ারে সাফল্য কুড়িয়েছেন। ডোমিঙ্গো দ্রুত খেলা ছেড়ে স্পোর্টস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং মার্কেটিংয়ের ওপর ডিগ্রী অর্জন করেন। ২৫ বছর বয়সেই দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন প্রভিন্স যুব দলের কোচের দায়িত্ব পালন করা শুরুও করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অনুর্ধ-১৩, অনুর্ধ-১৯ , ‘বি’ দল ও ‘এ’ দলের দায়িত্ব পালন করেন ডোমিঙ্গো। ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দল ওয়ারিয়র্সে কোচের দায়িত্ব পান ডোমিঙ্গো। দায়িত্ব নিয়ে ডোমিঙ্গো আমূল বদলে ফেলেন। ওয়ারিয়র্সকে দুটি ট্রফি এনে দেন। জাতীয় দলে ওয়ারিয়র্সের ছয় ক্রিকেটার সুযোগ পান। ২০১২ সালে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের দায়িত্ব পান ডোমিঙ্গো। সেখানেও সাফল্য মিলে। স্পেশালিস্ট টি২০ কোচ হিসেবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রোটিয়াদের টি২০ দলের দায়িত্ব পালন করেন ডোমিঙ্গো। সেই সময় দলও অনেক সাফল্য কুড়ায়। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি২০ সিরিজ খেলেই ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১৯ বছর পর কোন সিরিজ জিততে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন অসাধারণ সাফল্যের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও টি২০ সিরিজ জিতে প্রোটিয়ারা। গ্যারি কার্স্টেনের সহকারী ছিলেন ডোমিঙ্গো। কার্স্টেন যখন দায়িত্বের ভার কমাতে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের কোচিং থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান, তখনই ডোমিঙ্গো সেই দলের দায়িত্ব পান। সেই দায়িত্ব পেয়ে সাফল্যও দেখান। আবার যখন ২০১৩ সালের জুলাইয়ের পর কার্স্টেন পুরোপুরি কোচিং ছেড়ে দেন, তখন ডোমিঙ্গো টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০; সব ফরমেটের দায়িত্ব পেয়ে যান। কখনই দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে না খেলা এ কোচ এখানেও সাফল্য দেখান। তার তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতেও ভালই সাফল্য মিলে। যদিও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ওয়ানডে সিরিজে হারে প্রোটিয়ারা। তবে সার্বিকভাবে ভাল সাফল্য কুড়ান। তার অধীনে ১৩ টেস্ট সিরিজের মধ্যে ৮টিতে, ২২ ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে ১৪টিতে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে যে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমবারের মতো জিতে, সেটিও ডোমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানেই। টি২০তে ৪২ ম্যাচের মধ্যে ২৩ জয় মিলে। ডোমিঙ্গোও কোচ হিসেবে সফল হন। শেষ মুহূর্তে ডোমিঙ্গোকে ‘এ’ দলের দায়িত্ব দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এবার আবার বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হয়ে ফিরছেন ডোমিঙ্গো। অবশেষে ডোমিঙ্গোই বাংলাদেশের প্রধান কোচ হয়ে গেলেন।
×