ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যাম্পে সক্রিয় দু’টি সশস্ত্র গ্রুপ ;###;ব্যানার-ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড সরবরাহ

রোহিঙ্গাদের আন্দোলনমুখী করছে কারা?

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৮ আগস্ট ২০১৯

রোহিঙ্গাদের আন্দোলনমুখী করছে কারা?

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজ ভূমে এত তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে না বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা আগে মিয়ানমারে গিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো আদায় করতে পারলে স্বদেশে ফিরে যাবে রোহিঙ্গারা। শনিবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে প্রত্যাবাসন বিরোধী প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। জানা যায়, উখিয়া টেকনাফের ৩৩ ক্যাম্পে বর্তমানে উত্তেজিত ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রতিটি শেডের সম্মুখে মারমুখী হয়ে মহড়া চালাচ্ছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। আগামী ২২ আগস্ট যাতে একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে না যায়, এজন্য বিদ্রোহী রোহিঙ্গারা অস্ত্র হাতে এ মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সচেতন মহল বলেন, আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন উপেক্ষা করার কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম চালানো দরকার। বিভিন্ন মহল থেকে জানানো হয়েছে, অনুপ্রবেশকারী ও আশ্রিত রোহিঙ্গারা যেমন শরণার্থী আইন মানছে না, তেমনি কিছু কিছু এনজিও মোটেও তোয়াক্কা করছে না দেশের প্রচলিত আইন। তারা রোহিঙ্গাদের ফিরে না যেতে ষড়যন্ত্র করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালুখালী ক্যাম্পের ৫৫ বছর বয়সের এক রোহিঙ্গা জানায়, রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিয়ে এনজিও প্রতিনিধিরা শনিবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের বলছে, কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে হঠাৎ প্রত্যাবাসনের কথা বললে কে যাবে। সেখানে (মিয়ানমার) এখনও রোহিঙ্গা নির্যাতন চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, এনজিও কর্মীরা রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে বাংলাদেশে আসলেও এখানে একটা যে দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে করছে না তারা। রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে একাধিক এনজিও। রোহিঙ্গারা শিবিরে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের দোকান খুলে নিয়মিত ব্যবসা করে বাংলাদেশী নগদ টাকা জোগাড় করছে। বিভিন্ন এনজিও’তে মোটা দাগের টাকায় তথা বেশি বেতনে চাকরি করছে রোহিঙ্গারা। কিছু কিছু ক্যাম্প ইনচার্জ অফিসের কতিপয় কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করে ক্যাম্প অভ্যন্তরে ও ক্যাম্পের বাইরে দোকান খুলে বসেছে রোহিঙ্গারা। আশ্রিতদের পক্ষে দোকান খুলে বিকিকিনি করা, বিনাঅনুমতিতে ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া, যেদেশে আশ্রিত ওই দেশের নগদ মুদ্রা রাখা, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা এবং আশ্রিত দেশের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া শরণার্থী আইন বহির্ভূত। এদিকে এনজিওব্যুরোর নিয়ম অনুসারে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো আশ্রিতদের সেবা প্রদানকল্পে শুধু দেখভাল করবে। তাদের বিভিন্ন সংস্থায় চাকরিতে নিয়োজিত করা, দিনমজুর বা শ্রমিক হিসেবে খাটানো, নিজ দেশে ফিরে না যাবার উস্কানি দেয়া, বিভিন্ন দাবি দাওয়ার পক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড সংগ্রহ করে দেয়া, তাদের আন্দোলনমুখী করে গড়ে তোলা এবং যেদেশে আশ্রিত-ওইদেশের পাঠ্যবই শিক্ষা দেয়া শরণার্থী আইনে স¤পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। অথচ কিছু কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের অতি উৎসাহী হয়ে ওসব সংগ্রহ করে দিয়ে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করে চলেছে। তাই রোহিঙ্গা শিবিরে প্রত্যেহ ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। এদিকে আইন অনুসারে আশ্রিতদের কাছে (কক্ষে) গৃহস্থালী উপকরণ তথা দা-ছুরা ব্যতীত অস্ত্র বা ধারালো কিরিচ রাখাও যায় না। অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২টি বাহিনী অস্ত্রহাতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় রেখে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা রাতের বেলায় শিবির অভ্যন্তরে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। জনবল কম হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অভিযানের উদ্যোগ নিলেও পাহারাদার রোহিঙ্গার মুঠোফোনে খবর ফাঁস হয়ে পড়ে। ভেস্তে যায় প্রশাসনের অভিযান। রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট থাকায় এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞ মহল। এছাড়াও সুচতুর রোহিঙ্গারা দেশের অভ্যন্তরীণ অনেক তথ্য বহির্বিশ্বে পাচার করছে। এখন সরকার ওসব রোহিঙ্গাদের ক্রমান্বয়ে প্রত্যাবাসন করার উদ্যোগ নিয়েছে দেখে কয়েকটি এনজিও এবং রোহিঙ্গাদের মেজাজ গরম হয়ে উঠেছে। অভিজ্ঞজনরা বলেছেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রশিক্ষিতদের বেশির ভাগ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা এতদিন যারা বনজঙ্গলে, বিদ্রোহীদের (পুরনো রোহিঙ্গা নেতা) বাসাবাড়িতে ঘাপটি মেরে অবস্থান করেছিল, বর্তমানে তারা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। রাখাইন রাজ্যে যাদের বিরুদ্ধে সরকারের হুলিয়া জারি ছিল, ওইসব দাগি আসামিরা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে চলে এসে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা জঙ্গীগোষ্ঠী (আরএসও) যোগাযোগ করে শিবিরে সন্ত্রাসী যুবকদের সংগঠিত করছে। এসব বুঝতে পেরে স্থানীয় মাতব্বরগণ বলেন, ওই সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যতে হুমকি হয়ে উঠতে পারে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য বিদেশ থেকে অর্থ জোগান দিচ্ছে পুরনো আরএসও নেতারা। আরএসও জঙ্গীগোষ্ঠীর অনেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে শিবিরে বেআইনী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। মূলত তারাই প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯১৩ জন। অপরদিকে যেসব ক্যাম্পে অপরাধ বেড়েছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ৩৩টি শিবিরে আলইয়াকিন ও আরএসও নামে দুইটি সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। যারা ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকানপাট, ইয়াবা ও মাদক বিক্রির, মানব পাচার, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি ও মাদকের টাকায় আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহসহ নানা অপরাধকর্ম করছে। আশ্রয় শিবিরে সর্বদা অশান্তি সৃষ্টি করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখতে আল ইয়াকিন নেতা চিহ্নিত রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিম বাহিনী বেশ তৎপর। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য যখন-তখন লোকজনকে অপহরণ করে থাকে। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। এ শীর্ষ সন্ত্রাসী হাকিমের বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের দক্ষিণ বড়ছড়ায়। ২০১৪ সালে রোহিঙ্গাদের পক্ষে স্বাধিকার আন্দোলনের ডাক দিয়ে আল ইয়াকিন বাহিনী গঠন করে বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। হাকিমের ভাই ও ক্যাডারদের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন আস্তানা থেকে ইয়াবার টাকা, মুক্তিপণের টাকা, মানব পাচারের টাকা সংগ্রহ করে হাকিমের কাছে পৌঁছে দেয়। তবে হাকিম কোন ক্যাম্পে অবস্থান করছে, তা সহজে জানতে দেয়া হয় না। হাকিম ডাকাতের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় খুন, অপহরণ ও ধর্ষণের আটটি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে ডাকাত হাকিমের স্ত্রী ও এক ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাকিম বাহিনীর কাছে ভারি আগ্নেয়াস্ত্র আছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ নিয়ে ফের ধূ¤্রজাল, আজ জরুরী সভা ॥ মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ নিয়ে আবারও ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার পক্ষ প্রথম পর্যায়ে যাদের নেবে তাদের কোন লিস্ট এখনও উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবিরগুলোতে যেমন পৌঁছেনি, তেমনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কোন পক্ষ এখনও সুনির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণও ঘোষণা করেনি। অথচ, উখিয়া-টেকনাফের ত্রিশ শিবিরে আগামী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে এ নিয়ে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম শনিবার সন্ধ্যায় জনকন্ঠকে জানিয়েছেন, তারা সরকার পক্ষের কোন ঘোষণা এখনও পাননি। সে হিসাবে ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর একটি চিন্তা ভাবনা থাকলেও তা এখনও অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। তবে তিনি জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ পক্ষ সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এছাড়া রোহিঙ্গারা স্বইচ্ছায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক কিনা সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, জাতিসংঘের আগামী ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন ১৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবার দিনক্ষণ ধার্য রয়েছে। এ অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ কারণে মিয়ানমার পক্ষ সে দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ইস্যুতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২৭ জুলাই বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। সে সময় তারা রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, শর্ত সাপেক্ষে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। পক্ষান্তরে, রোহিঙ্গারা তাদের জানিয়ে দিয়েছে, আগে নাগরিকত্ব না পেলে তারা যাবে না। প্রতিনিধিদল ওই সময় দুদিন রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন। পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর ঢাকায় দুুই দেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন ৬ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়। ওই বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যাবাসন শুরুর ক্ষেত্রে বিলম্বের জন্য মিয়ানমার পক্ষের আস্থার সঙ্কট রয়েছে। ওই সঙ্কটকে তারা সবচেয়ে বড় বলে চিহ্নিত করেছেন। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করা যাবে। এর আগে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। ১৯৮২ সালে সে দেশের আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এছাড়া যারা তিনটি অবস্থানের প্রমাণ দিতে পারবে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। একইভাবে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড অনুযায়ী যারা কাগজপত্র দেখাতে পারবে তাদেরও নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি চলমান থাকা অবস্থায় গত দুদিন ধরে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চাউর হয়েছে যে আগামী ২২ আগস্ট থেকে চার শিবিরের ৩ হাজার ৫৪০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন কাজ শুরু হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি কোন এনজিও কর্মকর্তা, আরআরসি কর্মকর্তা এমনকি রোহিঙ্গা মাঝিরাও শনিবার পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে এ প্রচারণাটি শুরু করেছে বিদেশী কিছু বার্তা সংস্থা। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনও গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, তিনিও বিদেশী বার্তা সংস্থার খবরটি পড়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, আজ রবিবার কক্সবাজারে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত জরুরী সভা আহ্বান করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট গভীর রাতে রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হলে রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে আসে নানামুখী বর্বরতা। হত্যা, ধর্ষণ, বিভিন্ন সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে লাখে লাখে রোহিঙ্গা নাফনদী পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দেয়, যোগান দেয় খাবার ও ত্রাণসামগ্রী। এভাবে পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঢল নামে। বেসরকারী হিসাব অনুযায়ী যা ১২ লক্ষাধিক। সরকারী হিসাব অনুযায়ী বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ রোহিঙ্গা। এরা রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ত্রিশ শিবিরে। এদিকে, আগামী সেপ্টেম্বর না চলতি মাসের ২২ আগস্ট থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে তা শনিবার পর্যন্ত কোন মহলই নিশ্চিত করতে না পারায় এ ইস্যু নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা বলেছেন, এটি মিয়ানমারের নতুন একটি চাল। যেহেতু জাতিসংঘের আগামী অধিবেশন আসন্ন, তাই তারা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাইছে যে, তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করতে আগ্রহী। এর আগে গেল বছরের ১৫ নবেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করার দিনক্ষণ ধার্য ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব ছাড়া নিজ দেশে ফিরে যাবে না ঘোষণা দিলে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি ভ-ুল হয়ে যায়। বর্তমানেও অনুরূপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু রোহিঙ্গাদের প্রধান দাবি, তাদের নাগরিকত্ব প্রাপ্ত ছাড়া তারা নিজ দেশে ফেরত যাবে না এবং এর পাশাপাশি রয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে আরও পাঁচটি দাবি। অথচ, এর কোনটিই এখনও পূরণ হয়নি। তবে ফিরে যাবার পর নাগরিকত্ব প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে এবং তাও শর্তসাপেক্ষে। এ অবস্থায় লাখ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে কেউ এখনও প্রকাশ্যে বলেনি যে তারা নাগরিকত্ব ছাড়াই ফিরে যেতে আগ্রহী। অপরদিকে, রোহিঙ্গারা যাতে স্ব-ইচ্ছায়ও নিজ দেশে ফিরে যেতে না পারে এমন তৎপরতায় রয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন গ্রুপ। তারা প্রতিনিয়ত শিবিরে শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের হুমকি প্রদান করে থাকে। শুধু তাই নয়, ইতোপূর্বে যাওয়ার আগ্রহ দেখানো কেউ কেউ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে। অর্থাৎ, এদের সন্ত্রাসীরা খুন করেছে। সঙ্গত কারণে প্রত্যাবাসন বিষয়টি অত্যন্ত জটিল বলে পরিগণিত। সরকারী সূত্র মতে, নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে প্রাথমিকভাবে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থানের জন্য সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রিফিউজি ক্যাম্প। অথচ, এ ক্যাম্পেও তারা যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। যে কারণে সরকারের প্রায় ২৩শ’ কোটি টাকায় নির্মিত এ প্রকল্প থমকে আছে। বিভিন্ন সূত্র মতে, রোহিঙ্গারা যেহেতু স্বাভাবিকভাবে নিজ দেশে ফেরত যাবে না সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের কঠোর হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে এই ইস্যুর সমাধান মোটেই সহজ নয়। সম্প্রতি চীন সরকার এ ইস্যুতে ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর পর মিয়ানমার পক্ষ একটু নড়াচড়া দিয়েছে। চীন সরকারের চিন্তা ভাবনার পরই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে সরেজমিনে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে গেছে এবং প্রত্যাবাসনে তাদের ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করেছে। এখন সেই ইতিবাচক মনোভাব কার্যকর করার পালা। এ অবস্থায় হঠাৎ করে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে আগামী ২২ আগস্ট থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, আরআরসি কর্মকর্তাদের কেউ বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারলেও আজ রবিবার এ ইস্যুতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি বৈঠক আহ্বানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
×