ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ আছে গিজগিজ নেই- ফাঁকা ঢাকা ঘুম ঘুম নগরী

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৮ আগস্ট ২০১৯

মানুষ আছে গিজগিজ নেই- ফাঁকা ঢাকা ঘুম ঘুম নগরী

মোরসালিন মিজান ॥ কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে...। না, এখন আর মনে মনে নয়। যেখানে খুশি, যাও। যত খুশি ঘুরে বেড়াও। বাধা দেয়ার কেউ নেই। কিছু নেই। ফাঁকা ঢাকা। প্রশস্ত সড়ক। যেটুকু বাতাস, ফুরফুরে হাওয়া- গায়ে এসে লাগছে। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বৃষ্টির শব্দ। এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? মেদহীন ঢাকায় মানুষ আছে। গিজগিজ নেই। ঘুম ঘুম নগরী। অকারণ হাউকাউ হুলস্থূল বিতণ্ডা চোখে পড়ছে না। উপভোগ্য এই সময় উপহার দিয়েছে ঈদ-উল-আজহা। বড় উৎসব শেষ হলেও, রেশ রয়ে গেছে। তবে আজ রবিবার থেকে বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য। ক্রমে চিরচেনা চেহারায় ফিরবে রাজধানী। ঈদের মূল আনুষ্ঠানিকতা একদিনের হলেও, উৎসব যেন ফুরোবার নয়। শুরু হয় দু’একদিন আগে। তার পর থেকে চলতে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। গত সোমবার ছিল ঈদ-উল-আজহা। এ উপলক্ষে সরকারি ছুটি ছিল তিন দিনের। এর সঙ্গে বাড়তি ছুটি যোগ করে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে যান। গত ৮ আগস্ট থেকে শহর ছেড়ে যাওয়ার শুরু। বৃহস্পতিবার অফিস করে বহু মানুষ ট্রেনে বাসে উঠে যান। ৯ আগস্ট ছিল শুক্রবার। শনিবার ১০ আগস্ট। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে মোটামুটি খালি হয়ে যায় রাজধানী। ধারণা করা হয়, রাজধানী শহরের জনসংখ্যা এখন প্রায় পৌনে ২ কোটি। আর ঈদে ঢাকা ছেড়ে গেছে প্রায় ১ কোটি মানুষ। এবার ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে ঢাকার বাইরে না যাওয়ার একটা মৃদু আহ্বান ছিল। তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা অসংখ্য হওয়ায় ফাঁকা মনে হচ্ছে ঢাকাকে। এখন আশপাশে তাকালে কত যে পরিবর্তন চোখে পড়ে! ঈদ শেষ হলেও, গ্রামের বাড়িতে আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে এখনও সময় কাটাচ্ছেন বহু মানুষ। আরেকটি অংশ ভ্রমণপ্রিয়। সিলেট কক্সবাজার রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি বান্দরবান চষে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আছেন বিদেশ ভ্রমণে। এ সবের প্রভাবেই ফাঁকা ঢাকা। অসংখ্য বাসা বাড়ির দরজায় তালা। আলো জ্বলছে না। সীমিত আসা যাওয়া। ঘরে যেমন নির্জনতা, বাইরেও। রাস্তাগুলোকে অনেক বেশি প্রশস্ত মনে হয়। কোন কোন রাস্তা যেন খেলার মাঠ! যানজট তো দূরে থাক, গাড়ির সংখ্যা হাতে গোনা যায়। সেইসঙ্গে নেই শব্দ দূষণ। অহেতুক ভেঁপু বাজিয়ে শহর মাথায় তুলছে না কেউ। কানে আসছে না হাইড্রোলিক হর্ন। বরং একটা শান্ত নগরী। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে। ব্যবহারকারী বা চালক ছুটিতে থাকায় অনেক গাড়ি রাস্তায় নামতে পারছে না। গণপরিবহনের সংখ্যা কম। ব্যক্তিগত গাড়িও খুব বেশি চোখে পড়ছে না। রিক্সা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সব রাস্তায় ঢুকতে পারছে এখন। কোন বাধা নেই। প্রিয় বাহনে চড়ে শরতের নীল আকাশ দেখতে দেখতে যাওয়া। বেড়ানো। মিস করতে চাইছে না কেউ। ফাঁকা রাস্তায় নির্ভয়ে চলছে শখের বাইসাইকেল। স্কেটিং হচ্ছে। পায়ে চাকা লাগিয়ে দৌড়চ্ছে তরুণরা। সব মিলিয়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর ছবি। এ ছবিটাই বেশি দেখা যাচ্ছে এখন। গত কয়েকদিন শহর ঘুরে মনে হয়েছে, ছোট হয়ে গেছে ঢাকা। এত ছোট যে, পুরোটা দেখতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। শনিবার সকালে বাংলামোটর এলাকায় কথা হচ্ছিল রাইড শেয়ারিং এ্যাপ উবারের চালক রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, মোটরসাইকেলে মিরপুর ১৩ নম্বর থেকে বাংলামোটর পৌঁছতে তার সময় লেগেছে মাত্র ২৫ মিনিট। স্বাভাবিক সময়ে ১ ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা সময় খরচ করতে হয়। রাস্তা ফাঁকা থাকায় আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ট্রিপ নিতে পারছেন বলে জানান তিনি। একই দিন ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কলাবাগান থেকে মতিঝিলে পৌঁছতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম। বলেন, ঈদের আগে কয়েকদিন গাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখে হেঁটে অফিসে গিয়েছি। এখন ছবিটা একেবারেই ভিন্ন। যেখানে খুশি যেতে পারছি। ফিরতে পারছি। কি যে ভাল লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। ফুটপাথটাও আগের মতো নোংরা নয়। দখলমুক্ত। চায়ের দোকান বিড়ির দোকান গুটিয়ে রাখা হয়েছে। হাঁটার পথ বন্ধ করে দিয়ে দোকানদারি হচ্ছে না। বৃষ্টিতে ধোয়া পরিচ্ছন্ন ফুটপাথ ধরে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে মানুষ। কোন কোন পথিককে দেখে মনে হয়, এই হেঁটে যাওয়াটাও উপভোগ করছেন তিনি। আসলেই কি? জানতে চাইলে গ্রিনরোডের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া আরেফিন বলেন, সাধারণ সময় এই ফুটপাথের চেহারা দেখা যায় না। হাঁটতে গেলে এর সঙ্গে ওর সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ঈদের ছুটিতে সুনসান। হাঁটতে ভাল লাগছে। হেঁটে সাইন্সল্যাব পর্যন্ত যাবেন বলে জানান তিনি। তবে আজ রবিবার থেকে সব অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই খুলবে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্রমে ব্যস্ততা বাড়বে। বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য। আবারও শুরু হবে জীবন সংগ্রাম। টিকে থাকার লড়াই। চিরচেনা চেহারায় ফিরবে রাজধানী ঢাকা। আপাতত সে অপেক্ষা।
×