ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ঈদের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৮ আগস্ট ২০১৯

দুই ঈদের অর্থনীতি

জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আজহা- দুই পবিত্র ঈদের কোনটির অবদান বেশি ও ব্যাপক, তা একটি মধুর আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে। চাই কি এর তুলনামূলক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে রীতিমতো গবেষণায়ও নিরত হতে পারেন অর্থশাস্ত্রের নবীন শিক্ষার্থীরা। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দুটো ঈদকে ঘিরেই বিশেষভাবে গত কয়েক বছর ধরে প্রবলভাবে আবর্তিত ও স্ফীত হয়ে উঠছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ঈদ উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আমদানি-রফতানিও বাড়ছে ক্রমশ। মোটা দাগে বলা যায়, ঈদ-উল-ফিতরের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি যদি হয় পোশাককেন্দ্রিক, তাহলে ঈদ-উল-আযহার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি পশুকেন্দ্রিক। অর্থাৎ গবাদিপশুসহ ছাগল-ভেড়ার খামার প্রতিষ্ঠা, লালন-পালন, দুধ ও মাংসজাত পণ্যদ্রব্য বিপণন সর্বোপরি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাদুকা শিল্পের বিকাশ ও রফতানি ইত্যাদি। এই ঈদে মাংস বিতরণের মাধ্যমে গরিবের প্রোটিনের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হয়। দুটোতেই কমবেশি সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হয় বটে, তবে দ্বিতীয়টিতে প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিক উপকার সাধিত হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে যে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বিদ্যুত উৎপাদনসহ নানাবিধ শিল্পকারখানার বিকাশ ও উন্নয়ন সত্ত্বেও জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি অদ্যাবধি কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য। খাদ্য উৎপাদন বিশেষ করে ধান-চাল উৎপাদনে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এবার ঈদে এক কোটির বেশি গবাদি পশু কোরবানি হয়েছে, যার নিরানব্বই শতাংশের বেশি দেশীয় গরু। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়ে থাকে এই ঈদকে ঘিরে। ব্যবসায়ীদের কারসাজিসহ সরকারের হঠকারী নীতির জন্য কাঁচা চামড়া আহরণে প্রায় পাঁচ শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হলেও চামড়াজাত পণ্যের রফতানির সম্ভাবনা অত্যুজ্জল, প্রায় ১০৯ কোটি ডলার। এ খাতে আরও আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। মোটকথা, দুই ঈদকে ঘিরে ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও এর অবদান কম নয়। আরও যা আশার কথা, এর পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন। আবহমানকাল থেকেই ঈদ কিংবা পূজা উপলক্ষে বাঙালীর নাড়ির টানে ঘরে ফেরার প্রবল আগ্রহ ছিলই। এখন সে ঈদের ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে সপরিবারে বেড়াতেও যায়Ñ কক্সবাজার, কুয়াকাটা, কলকাতা, ব্যাংকক, হংকং, সিঙ্গাপুর এমনকি ইউরোপ-আমেরিকা পর্যন্ত। এবারও লঞ্চ স্টিমার-ট্রেন-বাসের পাশাপাশি আকাশপথেও টিকেটের হাহাকার লক্ষ্য করা গেছে। প্রতি বছর এ নিয়ে হয়ে থাকে ব্যাপক বাণিজ্য। অনেকেই দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া সত্ত্বেও টিকেট পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন খবরও মিলেছে। বলতেই হয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য এসবই শুভ লক্ষণ। এত বিপুল ব্যয় ও অর্থ খরচের পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে যেটি কাজ করেছে তা হলো ইতোমধ্যে মানুষের আয়-উপার্জন বেড়েছে বহুগুণ। সরকারী, আধা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, উৎসবভাতা বেড়েছে। বেড়েছে প্রবাসী আয়। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হারও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক, আট শতাংশের ওপরে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। গ্রাম ও শহরের অর্থনীতির পাশাপাশি চাঙ্গা হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি। এতে বহির্বিশ্বে সমুজ্জ্বল হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও।
×