ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সচল হচ্ছে কাশ্মীর

ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত বৈধ নয় ॥ চীন

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত বৈধ নয় ॥  চীন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছে চীন। শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে চীন কাশ্মীর পরিস্থিতিকে ভয়াবহ ও বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছে। খবর এনডিটিভির। চীনা কূটনীতিক নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, ভারত সরকারের এমন ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত ‘বৈধ নয়’। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে চীন। জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিলে জাতিসংঘে বৈঠকের আবেদন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি চিঠি দেন নিরাপত্তা পরিষদে। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি জোয়ানা রোনেকাকে এই চিঠি দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালেহা লোদি। পরে কোরেশি সমর্থন আদায়ে চীন সফর করেন। নিরাপত্তা পরিষদের এক কূটনীতিক জানান, বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হওয়ার কারণে পাকিস্তান ও ভারত তাতে অংশগ্রহণ করেনি। এই ধরনের বৈঠক সম্প্রচার বা সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এক সংবাদ সম্মেলনে চীন দাবি করে, সংবিধান সংশোধন করে ভারত সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ‘পুরোপুরিই অভ্যন্তরীণ বিষয়’, রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর বলল ভারত ॥ ৩৭০ ধারা নিয়ে ভারতের জাতীয় অবস্থান যা ছিল, সেটাই থাকবে এবং এটি পুরোপুরিই অভ্যন্তরীণ বিষয়। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহারের পর, নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর এমনটাই জানাল ভারত। নিরাপত্তা বিষয়ক দফতরে ভারতের স্থায়ী দূত সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ধীরে ধীরে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বদ্ধপরিকর সরকার এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পদক্ষেপ করছে সরকার। তিনি বলেন, ‘অন্য কোন বিষয় নেই, ভারত সরকারের নেয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এবং আমাদের আইনসভা সুনিশ্চিত করতে চায়, যাতে ভাল পরিষেবা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পৌঁছে দেয়া যায় জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের বাসিন্দাদের।’ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকটি আনুষ্ঠানিক না হওয়ায় তার ফলাফলের কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে না। বৈঠকে হাজির হয়নি ভারত ও পাকিস্তান। এই বৈঠকে পাঁচটি স্থায়ী এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য যোগ দিতে পারে। ফোন চালু, খুলছে স্কুল ॥ অবরুদ্ধ করে রাখা কাশ্মীর আবার সচল হচ্ছে। চালু হচ্ছে ফোন লাইন। খুলে যাচ্ছে স্কুলও। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যসচিব বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম একথা জানিয়েছেন। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের কিছু এলাকায় সরকারী যানবাহন সচল হয়েছে শুক্রবার থেকে। চালু হয়েছে কিছু ফোন লাইনও। আজ শনিবার সকালেই শ্রীনগরের একটা বড় অংশ সচল হবে। সোমবার থেকে খুলবে স্কুল। খবর এনডিটিভির। সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথাই জানিয়েছেন মুখ্যসচিব সুব্রহ্মণ্যম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাশ্মীরের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন সেবা কখন থেকে চালু হবে তা বলেননি সুব্রহ্মণ্যম। জঙ্গী দলগুলো নেট এবং মোবাইল কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভারত সরকার গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ এবং রাজ্য ভাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই প্রায় গোটা অঞ্চলে কারফিউ জারি ছিল। সুব্রহ্মণ্যম জানান, জম্মু-কাশ্মীরের ২২ জেলার ১২টিতেই স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। তবে ৫ জেলায় রাত্রীকালীন নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। ধাপে ধাপে এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে এবং সোমবার থেকে পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটতে থাকবে। ইমরান খানের অভিযোগ ॥ ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর সেখানকার পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায় নীরবতা পালন করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বিশ্ব সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, ওই অঞ্চলে যদি আদিবাসী মুসলমানদের হত্যা করা হয় তাহলে সেটার পরিণতি হবে ভয়াবহ। খবর ডন ও অনলাইনের। গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওই দিন থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। মোবাইল-ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে সেখানকার জনশূন্য রাস্তায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র সেনারা। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাসসহ ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় দূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। স্থগিত করা হয়েছে সব বাণিজ্য চুক্তি ও পরিবহন যোগাযোগ। এক টুইট বার্তায় ইমরান খান লেখেন, ‘ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে ১২ দিন ধরে কারফিউ, ইতোমধ্যেই অতি সামরিকায়িত অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন...সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা...এর আগে গুজরাটে মোদির মুসলিম নিধনের উদাহরণের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে’। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিশ্ব কী আরেকটি সার্বিয়া ধরনের হত্যাযজ্ঞ ও মুসলিম নিধন কাশ্মীরে প্রত্যক্ষ করবে? বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমি সতর্ক করে দিতে চাই যে, এটা যদি ঘটতে দেয়া হয় তাহলে মুসলিম বিশ্বে এর প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক, সৃষ্টি হবে উগ্রপন্থা আর সহিংসতার এক চক্র। করাচির সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ করল ভারত ॥ জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে ভারত-পকিস্তানের মধ্যে। এক দেশ আরেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য তুলে নেয়া হয়ে গেছে এরইমধ্যে। এমনকি কূটনীতিক সম্পর্কও ছিন্ন প্রায়। প্লেন-ট্রেনসহ অন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাকিস্তান দেশটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বেশ আগেই। নীরব ছিল ভারত। এবার পাল্টা জবাবে ভারতও সে পথেই হাঁটছে। কেননা, নিজেদের রাজস্থান থেকে করাচিগামী সাপ্তাহিক থার লিঙ্ক এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। ভারতের রাজস্থান থেকে পাকিস্তানের করাচিতে প্রতি সপ্তাহে যে থার লিঙ্ক এক্সপ্রেস ট্রেন চলত, তা বাতিল করেছে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। ভারতের নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা অভয় শর্মা বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত থার লিঙ্ক এক্সপ্রেসের যাত্রা স্থগিত থাকবে। এ ট্রেনে পাকিস্তান যাওয়ার জন্য ৪৫ জন টিকেট বুক করেছিলেন। এর একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে গত ৯ আগস্ট ইসলামাবাদে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, আজকে ভারতের যোধপুরের উদ্দেশে পাকিস্তান থেকে যে ট্রেন ছেড়েছে, সেটিই সর্বশেষ। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ সুবিধা’ তুলে নেয়া সিদ্ধান্তের জেরে এ ঘোষণা আসে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে।
×