ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রবি শাস্ত্রীই ভারতের কোচ পদে বহাল

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 রবি শাস্ত্রীই ভারতের কোচ পদে বহাল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপের পর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের পদ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্বে থাকা রবি শাস্ত্রী আর থাকছেন না এমন গুঞ্জনও শোনা গেছে। দেশ-বিদেশের অনেক কোচই সে জন্য বিরাট কোহলিদের প্রধান কোচ হওয়ার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে আবেদনপত্র দেয়। কিন্তু শুক্রবার সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে। রবি শাস্ত্রীর ওপরেই আস্থা রেখেছে বিসিসিআই। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করেছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দলের সঙ্গে থাকা শাস্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার টেলিকনফারেন্সে সাক্ষাতকার নেয় বিসিসিআই। ফলে কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা সদ্যই নিউজিল্যান্ড দলের সাবেক হয়ে যাওয়া কোচ মাইক হেসনের সুযোগ শেষ হয়ে গেল। তাকে পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং মূলত শুক্রবার বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তেরও অপেক্ষা করছিল। শাস্ত্রী ভারতের কোচ হওয়াতে এখন হেসনকে পেতে তেমন বাধা নেই বিসিবির। বিশ্বের নামী দামী ও অভিজ্ঞ সব কোচেরা আবেদন করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হওয়ার জন্য। তবে অধিনায়ক কোহলিসহ অনেক ক্রিকেটারই চাইছিলেন শাস্ত্রী কাজ চালিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখুন। কোচ হিসেবে একেবারে খারাপ করেননি শাস্ত্রী। যদিও এবার বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে কিন্তু সেটিকে বাজে পারফর্মেন্স বলা যায় না। সে কারণে বিসিসিআইও শেষ পর্যন্ত তার ওপরেই আস্থা রাখল। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি (সিএসি) শুক্রবার সারাদিনই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কোচ পদের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের নিয়ে পর্যালোচনায়। কপিল দেব, অংশুমান গাইকোয়াড় ও শান্তা রাঙ্গাস্বামীকে নিয়ে গঠিত সিএসি ৫ জন কোচ প্রার্থীর সাক্ষাতকারও নিয়েছেন। তবে এর মধ্যে বেশ এগিয়ে ছিলেন সদ্যই নিউজিল্যান্ডের সাবেক হওয়া কোচ মাইক হেসন ও শ্রীলঙ্কা এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সাবেক কোচ টম মুডি। বেশ আগে থেকেই হেসনের নাম জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু শাস্ত্রী টিকে গেলেন। তবে সিএসি সদস্যরা স্বীকার করেছেন তাদের পছন্দের তালিকায় দুই নম্বরে ছিলেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হেসন। এদিকে হেসনকে পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিসিবিও। কারণ পরপর দুই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। ২০১২ থেকে তিনি এ বছর বিশ্বকাপ পর্যন্ত কিউইদের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে জন্যই ভারত ও পাকিস্তানের কোচ হওয়ার জন্য বেশি আগ্রহী ছিলেন ৪৪ বছর বয়সী হেসন। এখন ভারতে চাকুরিটা না হওয়াতে হেসনকে পাওয়ার পথ অনেকখানিই খুলে গেল বিসিবির জন্য। শুক্রবার হেসন, মুডি ছাড়া কপিল, গাইকোয়াড় ও শান্তাসহ আরও তিনজনের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বসেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডার রবিন সিং। তিনি চারবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ভারতীয় জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচও ছিলেন। এছাড়া জিম্বাবুইয়ে ও আফগানিস্তানের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লালচাঁদ রাজপুতেরও সাক্ষাতকার নেয়া হয়। তিনি ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। হেসন, রবিন ও রাজপুত সরাসরি সিএসির সামনে প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন শুক্রবার। আর মুডি ও শাস্ত্রী টেলিকনফারেন্সে তাদের সাক্ষাতকার দিয়েছেন। আর সাবেক ক্যারিবীয় তারকা ফিল সিমন্স ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জানিয়ে সাক্ষাতকারে অংশ নেননি। শাস্ত্রী ও তার কোচিং স্টাফের মেয়াদ ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সবাইকে ৪৫ দিনের বর্ধিত চুক্তিতে রাখা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের কথা মাথায় রেখে। সেই সফরে যাওয়ার সময়ই ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলেন, তার তীব্র ইচ্ছা শাস্ত্রীই কোচ হিসেবে বহাল থাকুন। অধিনায়কের কথার মান রাখল বিসিসিআইও। শাস্ত্রী ২০১-১৬ পর্যন্ত টিম ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। একই সঙ্গে মূলত কোচের ভূমিকাও পালন করছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালের জুনে অনীল কুম্বলে কোহলিদের কোচ হয়ে যান। পরে কুম্বলের সঙ্গে কোহলির বিতর্ক হওয়ায় বিসিসিআই আবার ফিরিয়ে আনে শাস্ত্রীকে। কুম্বলে পদত্যাগ করলে শাস্ত্রী ২০১৭ সালের জুলাইয়ে কোচ হন। তখন থেকেই তিনি কোহলিদের গুরু হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ দুই বছরে শাস্ত্রীর অধীনে ভারত ১১টি টেস্ট জিতেছে ২১ ম্যাচ খেলে, হেরেছে ৭টি। যার ফলে ভারত বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল হিসেবে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে ৬১ ওয়ানডে খেলে ৪৪টিতে জয় পেয়েছে কোহলিরা। ৩৬ টি২০ খেলে জয় এসেছে ২৫টি।
×