ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটের ২০ টন চামড়া ভাগাড়ে

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 সিলেটের ২০  টন চামড়া ভাগাড়ে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সিলেটের বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। অধিকাংশ চামড়া ইতোমধ্যে ভাগাড়ে চলে গেছে। রাষ্ট্রের এমন সম্পদ নিয়ে তামাসার কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নজিরবিহীন এই ঘটনার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে সেটা জনসাধারণের জানা প্রয়োজন। কোরবানির দিন বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বিকেলে চামড়া ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য তারা ধর্না দিয়েছেন। বিশেষ করে নগরীতে বাসা বাড়ির কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে মাঠে নেমেছিলেন বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা। প্রতিবছর এমনটি হয়ে থাকে। মাদ্রাসা ছাড়াও ক্ষুদ্র মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাসা-বাড়ি থেকে টাকা দিয়ে চামড়া কিনে নিয়ে থাকেন। গত ক’বছর চামড়ার বাজার ভাল না থাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই পথ থেকে সরে এসেছেন। এবার কোরবানির চামড়া নিয়ে সংগ্রহকারীরা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে বিক্রি করতে না পেরে এক পর্যায়ে বাকিতে বিক্রি করারও প্রস্তাব দেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাতেও আগ্রহ প্রকাশ করেননি। প্রতি পিস চামড়ার মূল্য ২৫/৩০ টাকা শোনার পর চামড়া বিক্রেতারা ক্ষোভে দুঃখে সেই চামড়া কেউ রাস্তায় ফেলে, কেউ মাটিতে পুঁতে, আবার কেউবা পানিতে ফেলে দিয়েছেন। সিলেটে ২৫/৩০ টন চামড়া এইভাবে বিনষ্ট হয়েছে। কোরবানির পশুর বেশিরভাগ চামড়াই অবিক্রীত থেকে গেছে। সুবিধামতো সময়ে চামড়ার মূল্য পরিশোধের শর্তে এই সকল চামড়া ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে নিতে পারতেন। ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার এই সিদ্ধান্ত ঈদের আগে নেয়া হলে সিলেটের কোরবানি গরুর কোটি কোটি টাকা মূল্যের চামড়া বিনষ্ট হতো না। বিগত সময়ে কোরবানির চামড়া সীমান্তের ওপারে চলে যাওয়া নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়ে যেত। মাটিতে পুঁতে না ফেলে এই চামড়া সীমান্তের ওপারে বিক্রি করে দেয়ার সুযোগ করে দিলেও অন্তত বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজেদের হাতে থাকতো। ঈদ-উল-আজহায় নগরীর বাসা-বাড়ি থেকে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। এ চামড়া বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে মাদ্রাসার কিছুটা ব্যয় নির্বাহ করা হয়। কিন্তু অন্যবারের মতো এবারো চামড়াগুলো সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় সেগুলো রাস্তায় ফেলে এসেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সারাদিনে সংগ্রহ করা ৮০০টি পশুর চামড়া রাতে আম্বরখানায় বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন নগরীর দারুসসালাম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্রেতারা মাত্র ২৫-৩০ টাকা দাম করছিলেন প্রতি পিস চামড়া। এ সময় চামড়া ব্যবসায়ীরা অজুহাত দেখান তারা গতবারের দেয়া চামড়ার টাকাই এখনো ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাননি। সেগুলো বকেয়া থাকায় এবার তারা দাম দিয়ে চামড়া কিনতে পারছেন না। এমনকি এই টাকায় তারা যে চামড়াগুলো কিনছেন সেগুলোও বিক্রি করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একপর্যায়ে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাম দেয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয় প্রয়োজনে বাকিতে চামড়াগুলো কিনে নিতে। ছয়মাস পরে টাকা দিলেও হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেটিও মানেননি। ফলে প্রতিবাদস্বরূপ ৮০০ চামড়া আম্বরখানার রাস্তায় ফেলে চলে যান তারা। এমনিভাবে কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন সিলেট নগরীর কোরবানিদাতারা ও বিভিন্ন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। পরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০ ট্রাক চামড়া ময়লার সঙ্গে সংগ্রহ করে ডাম্পিং স্পটে পুঁতে ফেলেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)।
×