ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে আড়ত ও ট্যানারি মনিটরিং আজ থেকে

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে আড়ত ও ট্যানারি মনিটরিং আজ থেকে

এম শাহজাহান ॥ কাঁচা চামড়ার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে আজ শনিবার থেকে বাজার মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে চামড়ার বাজার খ্যাত পোস্তার আড়ত ও সাভারের শিল্পনগরী তদারকির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নির্ধারিত দামে চামড়া না কিনলে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে শুধু আবেদনের প্রেক্ষিতে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেয়া হবে। আগামীকাল রবিবার চামড়া রফতানি সংক্রান্ত জরুরী বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া ট্যানারিগুলোর ভূমিকা পর্যবেক্ষণে কাজ শুরু করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিকের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ পেয়েছে ট্যানারি মালিকরা। জাতীয় সম্পদ চামড়া ধ্বংসে ট্যানারি মালিকদের কারসাজি প্রমাণ হলে প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হতে পারে। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সরকার। জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে লাখ লাখ পিস লবণবিহীন চামড়া নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। কোরবানির ছয় ঘণ্টার মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা এবার কোন চামড়া কেনেনি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ফলে ওই সময়ের পরই বেশিরভাগ চামড়ায় পচন শুরু হয়। ভয়াবহ দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে চট্টগ্রামের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ পিস চামড়া মহাসড়কে ফেলে যায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া পুঁতে ফেলা হয়েছে। বেসরকারী তথ্যগুলো বলছে, কয়েক হাজার কোটি টাকার কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছে ট্যানারি মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিকদের গাফিলতির কারণে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তাদের গাফিলতির কারণেই এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল চামড়া জাতীয় সম্পদ, এই শিল্প রক্ষার দায়িত্ব সকলের। কিন্তু এবার কোরবানির সময় চামড়া নিয়ে যা হয়েছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, আজ শনিবার থেকে কাঁচা চামড়ার বাজার মনিটরিং করতে কয়েকটি টিম কাজ করবে। নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা না হলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে সরকার। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেস টু কেস ভিত্তিতে এবার কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেবে। এক্ষেত্রে শুধু আবেদন করলেই সরকার রফতানির অনুমোদন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, গভীরভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া আগামীকাল রবিবার চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকেই এসব বিষয়ে চামড়া রক্ষায় করুণীয় সবকিছু করা হবে। জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হলে প্রতিটি গরুর চামড়ার দাম হবে প্রায় ৮১০-১৭৫০ টাকা। বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের মতে, বড় সাইজের একটি গরুতে প্রায় ৩৫ বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। ওই হিসেবে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৫০ টাকা হলে একটি গরুর চামড়ার দাম হয় ১৭৫০ টাকা। ঢাকায় এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫-৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঝারি সাইজের একটি গরু থেকে ২৬ থেকে ২৮ বর্গফুট এবং ছোট সাইজের একটি গরু থেকে ১৮ বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। ওই হিসাবে প্রতিটি ছোট আকারের গরু থেকেও ৮১০ টাকার চামড়া পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রতিটি খাসি ও বকরি থেকে প্রায় ৬-৭ বর্গফুট চামড়া আসে। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সভাপতি হাজী মোঃ দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হলে গড়ে প্রতিটি গরুর চামড়াই হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হবে। কিন্তু ওই দামে চামড়া বেচাকেনা হয়নি। ট্যানারি মালিকরা পাওনা ও বকেয়া পরিশোধ না করায় পাইকারি ও আড়তদারদের চামড়া কিনতে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে এবার কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়ায় পাইকারি ও আড়ত মালিক খুশি হয়েছেন। তারা সরাসরি চামড়া বিদেশে রফতানি করতে পারবেন। এদিকে, কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় কার্যকর নজরদারি ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারণে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যা খুশি করতে পেরেছেন। ঈদের দিন বিকেলে ঢাকায় ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রি হয়। ওই দিনই পোস্তার চামড়ার আড়তে বিক্রি হয় ১৫০-২০০ টাকায়। এতে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পড়ে ৩ থেকে ১৫ টাকার মতো। কিন্তু এবার সরকার নির্ধারিত দর ছিল প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫-৫০ টাকা। এদিকে, ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়া ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। এছাড়া সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় বেচাকেনার ঘোষণা দেয়া দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্বের কোন দেশে এত কম দামে আর চামড়া বিক্রি হয় না। কিন্তু এই কম দামও এবার কার্যকর করেনি এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি টাকার চামড়া নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। দাম না পেয়ে চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এমনকি ডাস্টবিন ও ময়লার ভাগাড়ে চামড়া ফেলে দেয়াসহ ও মাটিতে পুঁতে রাখার মতো ঘটনা ঘটেছে। অথচ কাঁচা চামড়ার কদর রয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশে।
×