ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ-রুটে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ-রুটে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পবিত্র ঈদ-উল-আজহার ছুটি কাটিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ-রুট হয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসে বাড়তি ভাড়া দিয়েই বাসে করে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। আর এসব যাত্রীর ভোগান্তি ও দুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও কিছুতেই যেন কমছে না এ নৌ-রুটে চলাচলরত যাত্রীদের ভোগান্তি। তবে শিমুলিয়া ঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ডিএম পরিবহনের দুটি বাসকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রম্যমাণ আদালত। সরেজমিনে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, এ নৌ-রুটের পদ্মা পাড়ি দিয়ে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৪-৫ গুণ যাত্রী বহন করে লঞ্চগুলো শিমুলিয়া লঞ্চ ও ১নং ফেরি ঘাটে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। এসব যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ৩৩ টাকা লঞ্চ ভাড়ার স্থলে ৪০ থেকে ৫০ টাকা আদায় করছে এ নৌ-রুটের এক শ্রেণীর লঞ্চ মালিক ও স্টাফরা। আর এসব দেখার জন্য বিআইডব্লিউটিএর সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর থেকে স্ব স্ব ঘাটে টিআই ও সহকারী পরিচালক নিযুক্ত থাকলেও এসব বিষয়ে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে কয়েক লঞ্চের স্টাফদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রত্যেক লঞ্চ থেকেই ট্রিপ প্রতি দুই শ’ টাকা করে ঘাটের সুপার ভাইজারদের মাধ্যমে ঘাট খরচার নামে আদায় করা হচ্ছে। আর এ টাকা দিয়েই ম্যানেজ করা হচ্ছে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে দায়িত্বরত টিআইকে। এছাড়াও ওই টাকার সঙ্গে যোগ করে আরও টাকা রাখা হচ্ছে। এ দিয়ে ঘাটে দায়িত্বরত অন্য সংস্থার লোকজনদের ম্যানেজ করা হচ্ছে। যার ফলে অতিরিক্ত যাত্রী ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারছে লঞ্চ মালিকরা। অথচ ঈদের পূর্বে শিমুলিয়া ঘাটে এসব যাত্রীদের নিরাপদে পারাপার করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যেগে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি ও র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজনদের সামনে লঞ্চ মালিক সমিতির এক নেতা সংশ্লিষ্ট সকলের সামনে কথা দেয় কোন প্রকার অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না লঞ্চ মালিকরা। তবে এসব মালিক সমিতির নেতাদের কথা ছিল শুধুই সান্ত¦না। বাস্তবতা হচ্ছে এক শ্রেণীর লঞ্চ মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশেই এ নৌ-রুটের লাখ লাখ যাত্রীকে অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্তযাত্রী হয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিতে হচ্ছে এ নৌ-রুট ব্যাবহারকারীদের। এদিকে ঈদের পরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েক দফা এ নৌ-রুটে লঞ্চ ও সিবোট চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সে সময়ে আটকে পরা হাজারও ঘরে ফেরা যাত্রী চরাও হয় বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের ওপর। এ সময়েও লঞ্চ মালিকরা অটকে পড়া যাত্রীদের সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। অপরদিকে এ নৌ-রুটে চারটি রোরোসহ মোট ১৮ ফেরি চলাচল করছে এসব ফেরিগুলো শিমুলিয়া ঘাটে এসে যানবাহন নামিয়ে দিয়ে খালি চালিয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্তযাত্রী বহন করার বিষয়ে কয়েক দফা বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ি ঘাটের টিআই আক্তার হোসেন ও এডি শাহদাৎ হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তারা কেউ ফোন ধরেনি। মাওয়া ট্রাফিক জোনের টিআই মোঃ হিলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাসে ঢাকার ভাড়া যাত্রীদের নিকট থেকে ৭০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা আদায় করছিল ডিএম পরিবহন। এ সময় দুটি বাসকে আটক করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে। পরে লৌহজং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোরাদ আলী বাস দুটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সাত হাজার টাকা জরিমানা করে। কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বাড়ছে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের প্রতিটি লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। যাত্রীরা দীর্ঘ সময় লাইন দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট কেটে লঞ্চ ও স্পিডবোটে উঠছেন। তবে প্রতিবারের মতো এবারও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঈদে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে এ নৌরুটে ১৮ ফেরি, ৮৭ লঞ্চ, দেড় শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। যাত্রী ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কথা মাথায় রেখে বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়া যাত্রীসেবা নির্বিঘœ করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিমও কাজ করছে ঘাট এলাকায়। যাত্রীরা কোন রকম হয়রানি ছাড়াই তাদের গন্তব্যস্থলে যাতায়াত করছে। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম জানান, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ শেষে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের জন্য কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট ব্যবহার করেন। ঈদে যাত্রী সেবায় ১৮ ফেরি, ৮৭ লঞ্চ, দেড় শতাধিক স্পিডবোট রাখা হয়েছে। এছাড়া তিন শতাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
×