ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝাড়খন্ডে নির্মাণ হচ্ছে এক হাজার ৬শ’ মেগাওয়াটের কেন্দ্র

বাংলাদেশে বিদ্যুত দেবে আদানি পাওয়ার লিমিটেড

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 বাংলাদেশে বিদ্যুত দেবে আদানি পাওয়ার লিমিটেড

রশিদ মামুন ॥ ভারতে নির্মাণ হচ্ছে কেন্দ্র। বিদ্যুত আসবে বাংলাদেশে। এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে ভারতের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ আদানি পাওয়ার লিমিটেড। ঝাড়খন্ডে কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে শীঘ্রই। আদানির পক্ষ থেকে বিদ্যুত বিভাগকে জানানো হয়েছে কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। ঠিকাদার নির্মাণ সামগ্রী প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যেতে শুরু করেছে। বিদ্যুত বিভাগ এক নির্দেশনায় প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতি মাসে প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে। আদানি বলছে ইতোমধ্যে প্রকল্পটি নির্মাণে ১৪ ভাগ ভৌত অগ্রগতি এবং ১৩ ভাগ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। এখন প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৯০০ শ্রমিক কাজ করছে। ভারত থেকে এখন সরকার এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কিনছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে আসছে এক হাজার মেগাওয়াট। এছাড়া কুমিল্লা দিয়ে ত্রিপুরা থেকে আসছে আরও ২০০ মেগাওয়াট। তবে আদানির বিদ্যুত রফতানির ক্ষেত্রে একটি বিশেষত্ব রয়েছে। কেবল বাংলাদেশে রফতানির জন্যই কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে আদানি। বাংলাদেশ দেশের মধ্যে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে যেভাবে বিদ্যুত কেনে একইভাবে আদানির কাছ থেকেও বিদ্যুত কেনা হবে। শুধু কেন্দ্রটি নির্মাণ হবে ভারতে। আদানি অগ্রগতি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ২ মে বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। প্রকল্পের সাইট অফিস এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শেষ হয়েছে, নির্মাণ কাজের জন্য পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ও রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, ইউনিট ১ ও ২-এর বয়লার ফাউন্ডেশনের খনন কাজ শেষ হয়েছে এবং বয়লার ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে, মেন পাওয়ার হাউসের ফাউন্ডেশন কাজ শেষ হয়েছে, নির্মাণ কাজের জন্য ১৪ কি.মি. ট্রান্সমিশন লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, ১৩২ কেভি সুইচইয়ার্ডের কাজ শেষ হয়েছে, প্রকল্প এলাকা থেকে ইন্দো-বাংলাদেশ সীমানা পর্যন্ত ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু হয়েছে, চিমনি নির্মাণের ফাউন্ডেশনের জন্য খনন কাজ শেষ হয়েছে। আদানি বলছে, কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ঝাড়খন্ড সরকার ৫৫০ একর জমি দিয়েছে আদানিকে। কেন্দ্র সরকার নতুন এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রির অনুমতিও দিয়েছে। প্রথম দফায় ভারত সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ সফরে নরেন্দ্র মোদি দেশটির শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা আদানি এবং রিল্যায়েন্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আসেন। তখনই বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুত বাণিজ্যের বিষয়টি চূড়ান্ত করে যায় দুই শিল্প উদ্যোক্তা। এর মধ্যে রিল্যায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও খুব একটা আশা জাগানোর মতো কিছু করে উঠতে পারেনি রিল্যায়েন্স। অন্যদিকে শুরু থেকেই আদানি তাদের দেশের অভ্যন্তরে কেন্দ্র নির্মাণ করে সেই বিদ্যুত বাংলাদেশে বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে আসছিল। আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুত বিভাগের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এ চুক্তির আওতায় উৎপাদিত এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে বিক্রির কথা রয়েছে। পিডিবির সঙ্গে ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ টাকা। ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে বিদ্যুত দেবে আদানি। প্রতিবছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। সে হিসেবে আগামী ২০২১ সালে দেশে দৈনিক ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। আদানি বলছে, কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আর একই বছর মে মাসে উৎপাদনে আসবে ২য় ইউনিট। আদানি বলছে, বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকার, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনাপত্তিপত্র সংগ্রহের দায়িত্বও আদানি পাওয়ারের। ইতোমধ্যেই ভারত সরকার প্রস্তাবিত বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে শর্তসাপেক্ষে বিদ্যুত সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে। বিদ্যুত সরবরাহের জন্য প্রকল্পের আওতায় ঝাড়খ- থেকে বাংলাদেশের সীমানা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে আদানি। ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আনা হবে এই বিদ্যুত। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য লাইন নির্মাণ করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি। এখানে বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন নির্মাণের প্রয়োজন হবে না। বিদ্যুত বিভাগ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার আগের বছর ২০২১ সালের মধ্যে পিজিসিবিকে প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছে।
×