ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের জোড়া শিবমন্দির

দখল বিরোধে আড়াই বছর পূজা অর্চনা বন্ধ

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ১৭ আগস্ট ২০১৯

দখল বিরোধে আড়াই বছর  পূজা অর্চনা বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ রাজা লক্ষণ সেনের আমলে নির্মিত যশোরের ঐতিহ্যবাহী মুড়লি জোড়া শিবমন্দিরের কার্যক্রম আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। মন্দিরের কর্তৃত্ব দখল নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুটি সংগঠনের নেতাদের বিরোধে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদ ও সনাতন ধর্মসংঘ নামে দুটি সংগঠনের নেতারা মন্দির নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। নেতাদের বিরোধে জেরে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট ও নৈমিত্তিক পূজা অর্চনা বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। অবিলম্বে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার দাবি উঠেছে। সনাতন ধর্মসংঘের নেতৃবৃন্দের দাবি, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কতিপয় নেতা মন্দির দখল করে নিয়েছে। তাদের কারণে আড়াই বছর ধরে পূজা অর্চনা বন্ধ রয়েছে। তবে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের দাবি, মন্দিরে অনিয়ম সংশোধনের জন্যই মূলত নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নিয়মিত পূজা অর্চনা হচ্ছে। দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। জোড়া শিবমন্দিরে সেবায়েত ও সনাতন ধর্মসংঘের সম্পাদক অখিল কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যম-িত যশোরের মুড়লি জোড়া শিবমন্দিরে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ মন্দির সংস্কার, বিগ্রহ স্থাপন ও নিত্যাপূজার জেলা প্রশাসনের অনুমতি পায় সনাতন ধর্মসংঘ। এরপর মন্দিরের জমি অর্পিত সম্পত্তি হওয়ায় ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়। মামলার রায় মন্দির কমিটির পক্ষে যায়। ফলে এ জমি মন্দিরের নামপত্তন হয়। এরপর সনাতন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি নিয়মিত পালন করা হতো। এরপর ২০১৬ সালের ১৮ নবেম্বর যশোর সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবেন ভাস্করের নির্দেশে ১৮/২০ সন্ত্রাসী জোড়া শিবমন্দির হামলা চালিয়ে দখল করে নেয়। এসময় মন্দিরের সম্পাদক অধ্যাপক গোপীকান্ত সরকার আহত হন। এই ঘটনায় ওই সময় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসীম কুন্ড, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস রতনসহ শীর্ষ নেতাদের কারণে সমাধান হয়নি। উল্টো আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। অখিল চক্রবর্তী আরও বলেন, জোড়া শিবমন্দিরটি দখলের পর গত প্রায় আড়াই বছরে সেখানে নৈমিত্তিক পূজা অর্চনা নেই। সন্ধ্যার পর মন্দিরটি অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্দিরের অবৈধ দখলদারদের নোটিস দেয়া হলেও কর্ণপাত করেনি। অবিলম্বে মন্দিরটি দখলমুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। অভিযোগে প্রসঙ্গে যশোর সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবেন ভাস্করের দাবি, ওই মন্দিরের পুরোহিতকে মারপিট করা হয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পূজা পরিষদ হস্তক্ষেপ করেছে। নতুন কমিটি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে দখলের কোন ঘটনা ঘটেনি। নিয়মিত পূজা অর্চনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মন্দিরের নাম ও সম্পত্তি কেন অখিল চক্রবর্তীকে সেবাইত করে রেকর্ড করা হবে। এটা ঠিক না। কারণ মন্দিরের সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করে পরে বিক্রির নজির অনেক আছে। প্রসঙ্গত রাজা লক্ষণ সেনের আমলে (১১৮৯ খ্রিস্টাব্দে) যশোরের মুড়লিতে প্রতিষ্ঠিত জোড়া শিবমন্দিরটি ২০১৩ সালে সংস্কার শেষে ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
×