ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফটোশপের পেছনের গল্প

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 ফটোশপের পেছনের গল্প

আমাদের জীবনের সঙ্গে যেসব সফটওয়্যার জড়িয়ে গেছে তাদের মধ্যে একটি হলো ফটোশপ। ছবি সম্পাদনার এই সফটওয়্যারটির নাম শুনেননি এমন লোকের সংখ্যা মনে হয় খুবই কম, নেই বললেও ভুল হবে না। আনাড়ি ফটোগ্রাফার থেকে শুরু করে পেশাদার ছবি সম্পাদনা এমনকি সিনেমার কাজেও ব্যবহার হয়ে আসছে অ্যাডোবি ফটোশপ। ফটোশপের সূচনা এমন এক সময়ে যখন ইন্টারনেট কি সেটাই হাতেগোনা মানুষ জানতো। গল্পের শুরু দ্বীপে তোলা এক ছবি থেকে। ১৯৮৭ সালে জন নোল অবকাশ যাপনের সময় সমুদ্রসৈকতে তার বান্ধবীর (পরে স্ত্রী) একটি ছবি তোলেন। কেউ কি ভেবেছিল এই এক ছবিই ইতিহাস সৃষ্টি করবে? তখন ছবি সম্পাদনার জন্য পিক্সার ইমেজ নামের এক বিশেষ কম্পিউটার ব্যবহার হতো। কিন্তু জন বেশকিছু সমস্যায় পড়েন। ছবিটি ডিজিটালাইজ করতে গিয়ে কারিগরি সীমাবদ্ধতা চোখে পড়ে। একই সময়ে মার্কিন প্রকৌশলী থমাস নোল ১৯৮৭ সালে খেয়াল করেন তার ম্যাক প্লাস কম্পিউটারটি ‘গ্রেস্কেল’ ছবি প্রদর্শন করতে পারছে না। ১ বিটের সাদা কালো ডিসপ্লেতে ছবিটি দেখতে না পেরে তিনি সেটা সমাধানের পথ খুঁজতে থাকেন। থমাস নোল এবং জন নোল ছিলেন আপন দুই ভাই। জন ছিলেন স্পেশাল ইফেক্ট বিশেষজ্ঞ। স্টার ওয়ার্সের কয়েকটি ছবির নির্মাণে যুক্ত ছিলেন তিনি। দুই ভাই কম্পিউটারে ছবি সম্পাদনার একটি সফটওয়্যার দাঁড় করাবেন বলে ঠিক করেন। তারা এই প্রকল্পের নাম দেন ‘ডিসপ্লে’। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘ইমেজ-প্রো’ নাম পায় এটি। বেশ কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছিল এই সফটওয়্যারটিতে। কার্ড প্রিন্টিং এর জন্য তখন যে ধরনের সম্পাদনার প্রয়োজন হতো সেগুলো করা যেত ইমেজ-প্রো দিয়ে। প্রথমে শখের বশে শুরু করলেও একের পর এক ফিচার আনতে শুরু করেন তারা। ১৯৮৮ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে দুই ভাই সফটওয়ারটি বিক্রি করতে শুরু করেন। তার আগে আরেক দফা নাম পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাওয়া হয়। তখন সফটওয়্যারটি পায় আজকের নাম ‘ফটোশপ’। ফটোশপের সঙ্গে এ্যাডোবি তখনও যুক্ত হয়ে উঠেনি। এরই মধ্যে থমাস নোল এবং জন নোল বাণিজ্যিক প্রযুক্তি কোম্পানির দ্বারে দ্বারে ছুটতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য পুরো ফটোশপকে বিক্রি করে দেয়া। নতুন একটি উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বেশ ঝুঁকির বটে। অনেক প্রযুক্তি কোম্পানির কাছ থেকে তাদের ফিরতে হয় খালি হাতে। শেষ পর্যন্ত এ্যাডোবি পুরো ফটোশপকে কিনে নিতে রাজি হয়। পুরো স্বত্ব অর্জন করে এ্যাডোবি। ফটোশপকে পরিপূর্ণভাবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে বাজারে ছাড়তে আরো অনেক উন্নয়নের দরকার ছিল। থমাস নোল এবং জন নোলকে সম্পূর্ণ সাহায্য দিতে থাকে এ্যাডোবি। সফটওয়্যারটি গুছিয়ে তুলতে আর কোন বড় বাধা পোহাতে হয়নি তাদের। ১৯৯০ সালের বাজারে উন্মুক্ত করা হয় এ্যাডোবি ফটোশপের প্রথম সংস্করণ। রঙিন ডিসপ্লের কম্পিউটার, ২ মেগাবাইট র‌্যাম, ৬৮০০০ প্রসেসর আর ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে চলত ফটোশপ। এর পর থেকে প্রতি বছরই নতুন নতুন সুবিধা নিয়ে আসছে ফটোশপ। ফেরত যাওয়া যাক সেই ছবিটিতে। ফটোশপে সম্পাদনা করা প্রথম ছবিটি পরিচিত হয়ে উঠে জেনিফার ইন দ্য প্যারাডাইজ নামে। মূলত এই ছবিটি সম্পাদনা করতে করতেই নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট চালাতে থাকেন দুই ভাই। আর গড়ে উঠে আজকের ফটোশপের ভিত্তি। জেনিফার ইন দ্য প্যারাডাইজ হয়ে উঠে কালজয়ী ছবিতে!
×