ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজ শুরু করতে পেরেছে মাত্র ৩ প্রতিষ্ঠান

এখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ১৭ আগস্ট ২০১৯

  এখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিন বছর মেয়াদী প্রকল্প শেষ হওয়ার বাকি আর মাত্র ১১ মাস। এতদিনে প্রকল্পের অর্ধেক কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কাজ শুরুই করতে পারেননি অনেক ঠিকাদার! চট্টগ্রাম নগরীর ‘জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ মেগাপ্রকল্পের এই চিত্র। ১৫টির অধিক প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের কাজ পেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পেরেছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান। অন্যরাও এখনও কাজ শুরুই করতেই পারেনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ’র প্রকল্পের নক্সা প্রণয়নে দেরি এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরে সময়ক্ষেপণের কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেনি। এছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এ্যান্ডভায়রনমেন্ট এ্যান্ড জিওগ্রাফি ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) অসযোগিতার কারণেও বেশিরভাগ ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারছে না। তবে সিডিএ’র দাবি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত এপ্রিলে বিস্তারিত নক্সা বুঝিয়ে দিয়েছে। এরপরই তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নক্সা বুঝিয়ে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আহমেদ মঈনুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তদারকি করছে জানিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫টির অধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্পেক্ট্রা, এনডিই ও বিশ্বাস ট্রেডিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া আমেনা গ্রুপ, বিবিএল-বিটিসি-এমএলবি জয়েন ভেঞ্চার ও ই-ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। এক বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো প্রকল্পের ৫ শতাংশ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি। প্রকল্প শুরুর ১৫ মাস পার হলেও এখনও খালগুলোর পুনর্খনন কাজও পুরোপুরি শুরু হয়নি। খালের পাশে প্রতিরোধ দেয়াল ও রাস্তা নির্মাণসহ অন্যান্য কাজও চলছে ধীরগতিতে। বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নগরের ১০টি খালের উন্নয়নের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। খালগুলো হলো- রাজাখালী-১, রাজাখালী-২, সদরঘাট-১, সদরঘাট-২, চাক্তাই ডাইভারশন, বাকলিয়া, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গীবাজার ও মোগলটুলী খাল। কার্যাদেশের মেয়াদ এই বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কোন খালের কাজই এখনও শেষ করতে পারেনি। দুটি খালের আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। একই অবস্থা এনডিই লিমিটেডের। এই প্রতিষ্ঠান ছয়টি খালের কাজ পেয়েছে। তিনটি খালে কাজ শুরু করলেও এখন পর্যন্ত বাকি তিনটির কাজ শুরুই করতে পারেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রকল্পের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সময়মতো ডিজাইন না বুঝিয়ে দেয়ার কারণেই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনভাবেই এই প্রকল্প শেষ করা সম্ভব নয়।’ এই প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে ৩১টি খালের পূর্ণাঙ্গ নক্সা প্রণয়ন করতে এক বছর সময় লেগেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এপ্রিল মাসে বিস্তারিত নক্সা বুঝিয়ে দেয়। এরপর আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝিয়ে দিয়েছি। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তদারকি করছে। ঠিকাদাররা কেন কাজ শুরু করতে পারছেন না। সেটি তারা বলতে পারবেন।’ এই প্রসঙ্গে জানতে মেগা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক কর্নেল শাহ আলীর মোবাইলফোনে ২২ জুলাই কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন করা হবে। এছাড়া নগরের কোন খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কতটুকু হবে, কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করা প্রয়োজন ও প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের জন্য নক্সা প্রণয়ন করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এ্যান্ডভায়রনমেন্ট এ্যান্ড জিওগ্রাফি ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) দায়িত্ব দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসের আবাসিক প্রকৌশলী শেখ আব্দুল মমিন বলেন, ‘একটি প্রকল্প যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাস্তবায়ন করা হয়, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। প্রকল্পের ডিজাইন শেষ করার আগেই ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ঠিকাদার নামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু ঠিকাদারের কাছে রেট নেই, ডিজাইন নেই। কীভাবে কাজটা সম্পাদন করবে, তার কোন আউট লাইন নেই। তড়িঘড়ি করে তাদের কাজ করার জন্য মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। এ কারণেই ঠিকাদাররা এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি।’ প্রকৌশলী শেখ আব্দুল মমিন আরও বলেন, ‘যাই হোক ইতোমধ্যে ডিজাইন দেয়া হয়ে গেছে। শুরুতে যে ডিজাইনটা তাদের হাতে দেয়া হয়েছে আমরা মাঠে নিরীক্ষা চালিয়ে দেখলাম, ওই রিপোর্টগুলো বাস্তবসম্মত নয়। কারণ চট্টগ্রাম নগরীর মাটি খুব ভাল নয়। আমরা যখন সয়েল টেস্ট করে আবার ডিজাইন তৈরি করলাম। এখন দেখা যাচ্ছে, এটি ঠিকাদারদের সঙ্গে যে রেটে কথা হয়েছে, তার সঙ্গে যাচ্ছে না। তারা যে সম্ভাব্য খরচ ধরে কাজটা নিয়েছিল, সেটিও হচ্ছে না।’ প্রকৌশলী শেখ আব্দুল মমিন বলেন, ‘রাজাখালী খালের কল্পলোক অংশে আমরা পাইলিং ছাড়াই রিটেইনিং ওয়াল তুলতে পেরেছি। কিন্তু, অন্যান্য খালে এটি করা যাচ্ছে না। খালগুলোর মাটি এত নরম, সেখানে পাইলিং করে তারপর রিটেইনিং ওয়াল তুলতে হবে। এ রকম অনেক জায়গায় ডিজাইন পরিবর্তন করতে হচ্ছে।’
×