স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঠপর্যায়ে কর্মী সংখ্যা বাড়ানো ও তাদের ওপর নজরদারি এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে সফল হয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। সংস্থা দুটির মেয়ররা বলছেন, বিগত বছরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে এবার নতুন আঙ্গিকে পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনায় ছিল মাঠকর্মীদের সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে কর্মীদের কার্যক্রম নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমরা যখন দেখলাম পরিচ্ছন্নতা কর্মীর যেমন সঙ্কট রয়েছে, তেমনি প্রয়োজন সঠিক মনিটরিং। তাই এ বছর মাঠ পর্যায়ে যেমন কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, তেমনি কঠোর করা হয়েছে মনিটরিং ব্যবস্থাপনা। এতে চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়েছে।’
‘আমি নিজেও বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত লাইভ মনিটরিংগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। এর ফলে পর্যাপ্ত কর্মী এবং সঠিক মনিটরিং ও কলিং সিস্টেমে নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছি। হটলাইনে প্রচুর সাড়া পেয়েছি। এতে যেসব স্থানে আমাদের কর্মীরা যেতে পারেনি সেসব স্থানেও ঠিকানা জেনে কর্মী পাঠাতে পেরেছি। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করেছি’- বলেন মেয়র।
একই কথা বললেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা এবার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। যে কারণে সকল কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে প্রায় ৯ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করেছি। সেই সঙ্গে আমি নিজেও মধ্য রাত পর্যন্ত অফিসে থেকে সকলে একই পরিবারের মতো কাজ করেছি। আমরা সর্বক্ষণিক ওয়াকিটকির মাধ্যমে কর্মীদের খোঁজ-খবর নিয়েছি।’
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর সংস্থাটিতে ^ ২ হাজার ৪০০ জন নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ মোট ৯ হাজার ৫০০ কর্মী বর্জ্য অপসারণে কাজ করেছেন। এবার প্রায় আড়াই লাখ পশু কোরবানি হয়েছে ওই এলাকায়। তাই ঈদের প্রথম দিন ১৩ হাজার ২৩৪ টন বর্জ্য অপসারণ করেছে সংস্থাটি। এ কাজে খোলা ট্রাক, কন্টেনার বক্স, কন্টেনার ক্যারিয়ার, ডাম্পার ট্রাক, কম্পেক্টর, পে-লোডার, পানির গাড়িসহ ৪৩৮ যানবাহন ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংস্থাটিতে এ বছর নিজস্ব ৫ হাজার ২৪১ পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ মোট ৯ হাজার ৪৯৩ কর্মী কাজ করেছেন বর্জ্য অপসারণে। ওই এলাকায় এ বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোরবানির পশু জবাই হয়েছে। এসব পশুর ১৬ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সংস্থাটির মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে অপসারণ করা হয়েছে। এ কাজে খোলা ট্রাক, কন্টেনার বক্স, কন্টেনার ক্যারিয়ার, ডাম্পার ট্রাক, কম্পেক্টর, পে-লোডার, পানির গাড়ি ও টায়ার ডোজারসহ ৩৮২ যানবাহন ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ডিএসসিসির ফেসবুক লাইভ মনিটরিং টিমের প্রধান ও সংস্থার আইসিটি প্রধান এবং সিস্টেম এ্যানালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন বলেন, ‘আগে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করছেন কিনা তা মনিটরিং করা কঠিন ছিল। এ কারণে কেউ কেউ ফাঁকিবাজি করার সুযোগ পেত। কিন্তু এবার ফেসবুক লাইভের কারণে সে সুযোগ ছিল না। কাজে সবার পূর্ণ মনোযোগ ছিল বলেই আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করতে পেরেছি।’