ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই ॥ ফারজানা মিতা

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১৬ আগস্ট ২০১৯

পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই ॥ ফারজানা মিতা

নৃত্যশিল্পী ফারজানা মিতা। নৃত্যের অমিয়ধারায় নিজেকে সিক্ত করার পাশাপাশি নিজের নৃত্যলব্দ জ্ঞান ছড়িয়ে দিচ্ছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীর মাঝে। তিনি একজন সফল মঞ্চ অভিনেত্রী। কোরিওগ্রাফার, নৃত্য প্রশিক্ষক ও সংগঠক হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে। এসব বিষয়ে কথা হয় গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে। শিল্পকলায় নৃত্যকে কেন বেছে নিলেন? ফারজানা মিতা : ছোট বেলায় মায়ের ইচ্ছাতেই নাচ শেখা শুরু। পরবর্তীতে নিজের ভাললাগায় এটাকে ধরে রাখা। শুরুতে আমি দুইজন গুণী নৃত্যগুরুর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। তারা হলেন আমার নৃত্যগুরু হাসিবুল ইসলাম হাসিব ও বেলায়েত হোসেন। সেখানে অনুধাবন করি পৃথিবীর সকল ভাষা, মানুষের সকল অভিব্যক্তি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব। পরে যুক্ত হই নৃত্যাঞ্চলের সঙ্গে। ধীরে ধীরে নৃত্যের পরিধি ও বিস্তৃতি সম্পর্কে অবহিত হই এবং উপলব্ধি করি নৃত্যের ভাষা সর্বজনীন। আপনি যাদের কাছে নাচ শিখেছেন। ফারজানা মিতা : আমার নৃত্যগুরু শামীম আরা নিপা ও শিবলী মোহাম্মদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছি। এই দুজনের সুবাদেই প-িত বিরজু মাহারাজের কাছে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাই। তাকে দেখে বুঝেছি চাইলে অল্প পরিধিতে দাঁড়িয়ে তাল-লয়-ছন্দ আয়ত্ত করে, অনুভূতিকে শীর্ষে সম্প্রসারণ করা যায়। বিভিন্ন সময়ে কন্টেম্পরারির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি কলকাতার সুকল্যাণ ভট্টাচার্য এবং ছৌ-নৃত্যের ওপর স্বপন মজুমদারের কাছে। এছাড়াও ইতালির-স্টিফেনো ফারডেলি, দিল্লীর সুরিয়া শর্মা, কানিকা শর্মা, রাকশিত এ্যারোরা, গিন্নি বাত্রা ও মানিসা’র কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এসব সৃজনশীল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য পেয়ে অনুধাবন করেছি যে প্রত্যেকেই আলাদা এবং স্বতন্ত্র। ফলে আমার সব সময় চেষ্টা থাকে গুরু স্থানীয়দের ভাব আত্মস্থ করে মৌলিক নৃত্যের ভাষা সৃজন করা, যেটা একান্তই আমার অনুরাগী সকলের। সম্প্রতি দিল্লী থেকে নাচের ওপর কোর্স করে এসেছেন- এ সম্পর্কে বলুন। ফারজানা মিতা : দিল্লীর রাইট মুভস একাডেমি অব ডান্স থেকে কোর্স সম্পন্ন করেছি। এটা ছিল- দুই মাসের ‘রাইট মুভস ইন্টেনসিভ-২ সার্টিফিকেট কোর্স’। এটা কন্টেম্পোরারি, ব্যালে ও জ্যাজের কম্বিনেশন কোর্স। পাশাপাশি ইয়োগা চক্র থেকে-এরিয়াল সিল্ক এবং বিশ্বভারতী ইয়োগা সংস্থা থেকে পাওয়ার ইয়োগা কোর্সও সম্পন্ন করে এসেছি। সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে আমিই প্রথম এরিয়াল সিল্কের প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং এই ধারাটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। মঞ্চে আপনার ব্যস্ততা প্রসঙ্গে বলুন। ফারজানা মিতা : যখন থেকে আমি নৃত্যাঞ্চলের সঙ্গে তখন থেকেই নাট্য সংগঠন স্বপ্নদলের সঙ্গে যুক্ত হই। আমার পরিচালিত প্রযোজনাসমূহ হচ্ছে- ‘বন্দিনী’, ‘পল্লীবালা’, ‘কালার অব স্প্রিং’, ‘গ্রহণ কালে পূর্ণশশী’। নৃত্যাঞ্চলের পরিবেশনায় নৃত্যনাট্য-‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘বাদল-বরিষণে’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘রাইকৃষ্ণ পদাবলী’, ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’, ‘শাপ মোচন’, ‘মহুয়া’। স্বপ্নদলে অভিনীত মঞ্চ নাটক-‘ডাকঘর’, ‘ত্রিংশ শতাব্দী’, ‘হরগজ’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘জাদুর প্রদীপ’ ও ‘ফেস্টুনে লেখা স্মৃতি’। এছাড়া স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘হরগজ’, ‘জাদুর প্রদীপ’, ‘ডাকঘর’, ‘ফেস্টুনে লেখা স্মৃতি’ ও ‘স্পার্টাকাস’ মঞ্চ নাটকে কোরিওগ্রাফির কাজ করেছি । নৃত্য ও অভিনয়ের সম্মিলন ঘটান কিভাবে? ফারজানা মিতা : এ দুই জায়গায় বিষয়ের অন্তর্নিহিত ভাবকে তুলে ধরতে কখনও কার্পণ্য করি না। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিষয়বস্তুকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা। আমি যখন ‘রঙ্গের দুনিয়া’ চলচ্চিত্রে কোরিওগ্রাফি করি তখন সেখানেও নৃত্য ও মঞ্চনাটকের মতো সমান গুরুত্ব ছিল। মঞ্চ ও চলচ্চিত্রের কোরিওগ্রাফির ভিন্নতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি? ফারজানা মিতা : যেহেতু আমি একই সঙ্গে নৃত্যনাট্য, মঞ্চ নাটক এবং চলচ্চিত্রে কোরিওগ্রাফি করি। সে ক্ষেত্রে আমি দেখেছি মঞ্চের কোরিওগ্রাফি, চলচ্চিত্র বা টেলিভিশনের কোরিওগ্রাফির ধরন আলাদা। ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম উপকরণের দিক দিয়ে আয়োজনের ভিন্নতা দাবি করে। আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? ফারজানা মিতা : আমি পেশায় একজন আইনজীবী। শিল্পের চর্চাটা মূলত ভালবাসা থেকেই। ইতোমধ্যে একটা নৃত্যনাট্যের কাজ হাতে নিয়েছি। এরিয়াল সিল্ক ও পাওয়ার ইয়োগা ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমার নাচের প্রতিষ্ঠান শিল্পচক্রকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পথ শিশুদের নিয়েও কাজ করতে চাই, যাতে তারা নেশায় বা সন্ত্রাসের পথে পা না বাড়িয়ে নৃত্যশিল্প চর্চার মাধ্যমে শুদ্ধ সুন্দর মানুষ ও স্বনির্ভর হতে পারে। -গৌতম পাণ্ডে
×