ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের প্রত্যাশা আরচারিতে

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ১৬ আগস্ট ২০১৯

এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের প্রত্যাশা আরচারিতে

রুমেল খান ॥ টার্গেটে আন্দাজ করে তীর ছোড়েন তীরন্দাজ। এটাই তার একমাত্র কাজ। ছন্দে ছন্দে যে খেলাটি সম্পর্কে তিনটি বাক্য বলা হলো, তা হচ্ছে তীর-ধনুকের খেলা আরচারি। ইংরেজী ‘আরচারি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ধনুর্বিদ্যা বা তীরন্দাজের সৈন্যদল। আদিম যুগের মানুষেরা মাংসাশী প্রাণী শিকার করে ক্ষুধা নিবারণ ও হিংস্র প্রাণীর কবল থেকে আত্মরক্ষার জন্য উদ্ভাবন করেছিল তীর-ধনুকের মতো অস্ত্রের। পরবর্তীতে অবশ্য এ অস্ত্রটি শিকার ও নিজেকে বাঁচানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পরিণত হয় মানুষ হত্যার প্রধান হাতিয়ারে! আধুনিক যুগে গুলি, বন্দুক, বোমা আবিষ্কার হওয়াতে তীর-ধনুকের গুরুত্ব আর নেই। না, আছে। সেটা খেলাধুলাতে। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে আরচারি হচ্ছে অন্যতম। ভুটানে তো এটি জাতীয় খেলা হিসেবেই স্বীকৃত! দেশের অন্য ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর চেয়ে আরচারির উন্নতি তুলনামূলক দ্রুত। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আসর থেকে ২৮টি স্বর্ণপদক এসেছে আরচারিতে। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে এসেছে তাম্রপদক, মিলেছে টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ। এখান থেকে অনেকদূর যেতে হবে, বলছেন কর্মকর্তা-আরচার সবাই। সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে গেলে অপরিচিত একটা খেলা কত দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠতে পারে তার আদর্শ উদাহরণ হতে পারে আরচারি। এই যেমন ফরিদপুর জেলা স্টেডিয়ামে অন্য খেলার পাশাপাশি নিয়মিত চর্চা হয় আরচারিরও। সবার চোখে রোমান সানা হওয়ার স্বপ্ন। তিনিই যে আরচারিতে বাংলাদেশের আইডল। আন্তর্জাতিক আরচারিতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক স্বর্ণজয়ী তীরন্দাজ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৭ স্বর্ণ, ৬ রৌপ্য এবং ২ তাম্রপদক অর্জন করেছেন। গত কয়েক বছরে ক্রিকেট-ফুটবলের মতো আরচারিও পৌঁছে গেছে দেশের প্রায় সব অঞ্চলে। ক্রীড়াবিশ্বে অনেক পুরনো ও জনপ্রিয় ইভেন্ট হলেও খেলা হিসেবে আরচারি বাংলাদেশে প্রচলিত হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। ২০০০ সাল। ক’জন আরচারিপ্রেমী এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয় ২০০১ সালে। ২০০২ সালেই মাঠে গড়ায় খেলাটি। সফল হয় একটি ক্রীড়াস্বপ্ন। কিছুদিন আগেই রিকার্ভ সিঙ্গেলসে সারাবিশ্বে তৃতীয় হয়ে রীতিমতো তুলকালাম কা- বাধিয়েছেন রোমান সানা। প্রায় দশ বছরের পরিশ্রম আর একাগ্রতা ধরা দিয়েছে সাফল্য হয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় এ্যাথলেট হিসেবে তিনি সরাসরি খেলবেন অলিম্পিক গেমসে। তারকাখ্যাতি যেমন উপভোগ করছেন, তেমনি তিনি ভুলে যাননি দেশের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা। কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপলের হাত ধরে প্রায় ১৯ বছর আগে এদেশে শুরু হয়েছিল আরচারি। ভাল তীর-ধনুক তো পরের কথা, কোন সুবিধাই ছিল না শুরুতে। সেই অবস্থা থেকে আজ আরচারির শোকেজ ভরা পদক। তীর-ধনুকের খেলা আরচারি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে বড় স্বপ্ন এখন দেখাই যায়। প্রয়োজন শুধু লেগে থাকা। আগামী ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত হবে এসএ গেমসের আসর। তাতে ২৮ ডিসিপ্লিনের মধ্যে আছে আরচারিও, যাতে অংশ নেবে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৬ এসএ গেমসে বাংলাদেশ কোন স্বর্ণ জেতেনি। জিতেছিল ৩ রৌপ্য ও ৩ তাম্রপদক। ২০১০-এর আসরে জিতেছিল ২টি রৌপ্যপদক। এবার আগের আসরগুলোর ব্যর্থতা ভুলে স্বর্ণজয়ের আশা করছে লাল-সবুজের তীরন্দাজরা। তাদের সেই স্বপ্নই দেখাচ্ছেন জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ। বাংলাদেশ আরচারির প্রতিষ্ঠাতা-সাধারণ সম্পাদক চপলের কথায়, ‘আমরা এখন এসএ গেমসে স্বর্ণপদক নিয়ে ভাবছি। নেপালেই সোনার পদক চাই আমরা। স্বর্ণপদক জিততেই হবে আমাদের। সে লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
×