ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রেয়াসের প্রশংসায় রেকর্ড গড়া কোহলি

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১৬ আগস্ট ২০১৯

শ্রেয়াসের প্রশংসায় রেকর্ড গড়া কোহলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লক্ষ্যটা কঠিনই ছিল, বৃষ্টির কারণে ৩৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ক্রিস গেইলের ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ২৪০ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ হার ঠেকানোর জন্য এরচেয়ে ভাল সংগ্রহ আর কী হতে পারে! কিন্তু ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনবাসী আরেকবার স্বাগতিকদের পরাজয় দেখেছে টানা দ্বিতীয় শতক হাঁকানো বিরাট কোহলির কারণে। তাই ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ভারতের লক্ষ্য বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৫! অসম্ভব সেই লক্ষ্যটা মাত্র ৩২.৩ ওভারেই ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান তুলে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে ভারতীয় দল। ৯৯ বলে ১৪ চারে ১১৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলার পথে বেশ কিছু নতুন রেকর্ডও গড়েছেন ভারত অধিনায়ক কোহলি। কিন্তু তিনি এ জয়ের জন্য কৃতিত্ব দিলেন তরুণ শ্রেয়াস আইয়ারকে। কারণ ৯২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শ্রেয়াস মাত্র ৪১ বলে ৩ চার, ৫ ছক্কায় ৬৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। ফলে প্রথম ও তৃতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজটা ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে ভারত। দ্বিতীয় ওয়ানডেটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। ওভারপ্রতি ৭.২৮ হারে রান তোলার কঠিন লক্ষ্য। শুরুতেই রোহিত শর্মার (১০) উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় কোহলির দল। তবে শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি। তারা ৪৬ বলে ৬৬ রানের জুটি গড়েন। ধাওয়ান ৩৬ বলে ৫ চারে ৩৬ রান করে বিদায় নেয়ার পরই ফ্যাবিয়ান এ্যালেনের দ্বিতীয় শিকার হন ঋষভ পন্থ (০)। ৯২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপেই পড়ে যায় ভারত। ক্যারিবীয় বোলাররাও উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। তবে রান তোলার গতিটা একেবারে ঠিকঠাক ছিল সফরকারীদের। তাই তরুণ শ্রেয়াস বিচলিত হননি। তাছাড়া সঙ্গী হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন অধিনায়ক কোহলিকে। দু’জন মিলে ক্যারিবীয় পেসারদের হতাশায় নিমজ্জিত করেন। ১২০ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে ওঠে চতুর্থ উইকেটে মাত্র ৯৪ বলে। দ্রুতগতির এ পার্টনারশিপের জন্য মূলত শ্রেয়াসের মারকুটে ব্যাটিংটাই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তিনি ক্যারিয়ারের নবম ওয়ানডে খেলতে নেমে চতুর্থ ফিফটি পেয়েছেন মাত্র ৩৩ বলে। তবে ৪১ বলে ৬৫ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন তিনি। কিন্তু দলের জয়ের রাস্তাটা মসৃণ করে গেছেন ২৪ বছর বয়সী এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কেদার যাদবকে নিয়ে জয় তুলে নেয়ার পথে ক্যারিয়ারের ৪৩তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন কোহলি মাত্র ৯৪ বলে। তাই ১৫ বল হাতে রেখেই মাত্র ৪ উইকেটে ২৫৬ রান তুলে ৬ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় ভারত। ১১৪ রানে অপরাজিত থাকা কোহলি গত এক দশকে ২০ হাজার রান করে এক অনন্য রেকর্ড গড়েন। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে ২০ হাজার রান করা প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি। এর আগে এক দশকে সর্বাধিক ১৮ হাজার ৯৬২ রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। অধিনায়ক হিসেবেও রান করার দিক থেকে পন্টিংকে পেছনে ফেলে আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। অধিনায়ক হিসেবে পন্টিং ১০ হাজার রান ২২৫ ইনিংসে করেছিলেন। মাত্র ১৭৬ রানে সেই মাইলস্টোন পেরিয়ে এখন দ্রুততম কোহলি। এতসব রেকর্ডের মধ্যে ‘লিটল মাস্টার’ শচীন টেন্ডুলকরকেও একটি ক্ষেত্রে পেছনে ফেলেছেন কোহলি। ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন দলের বিপক্ষে ৮টি করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখন ৮টি করে সেঞ্চুরি তার। শচীন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। ম্যাচসেরা এবং সিরিজের দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন কোহলি, সঙ্গে আছে অনন্য কিছু রেকর্ড। এরপরও শ্রেয়াসের প্রশংসা করে কোহলি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ভাল পারফর্ম করার গুরুত্বটা সে বুঝতে পেরেছে। আগামীতে এটা তার আত্মবিশ্বাসকে আরও চাঙ্গা করে তুলবে। চাপের মুখে সে অনেক বেশি সাহসিকতা দেখিয়েছে। যতবারই তার সঙ্গে আমি ব্যাট করেছি, অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখেছি। সে তার খেলাটা ভাল বোঝে।’ এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে ক্যারিবীয়রা। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে গেইলের ব্যাটে রান প্রত্যাশিত ছিল তাদের। গেইল ঝলসে উঠে সেই প্রত্যাশার পুরোটাই পূরণ করেছেন। মাত্র ৩০ বলে ফিফটি ছুঁতে গিয়ে ভুবনেশ্বর কুমারের ওপর তা-ব চালিয়েছেন। তাই ৯.১ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফেলে উইন্ডিজরা। এভিন লুইসও গতিময় ছিলেন ব্যাট হাতে। কিন্তু ১১তম ওভারে লুইস ২৯ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৪৩ রান করে যুবেন্দ্র চাহালের শিকার হলে ১১৫ রানের জুটি ভাঙ্গে। পরের ওভারে গেইলও সাজঘরে ফেরেন খলিল আহমেদের পেসে। তিনি ৪১ বলে ৮ চার, ৫ ছক্কায় ৭২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন। টানা দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলার পর ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে। বিশেষ করে শাই হোপের ৫২ বলে ২৪ রানেই উড়ন্ত উইন্ডিজের রানের চাকা শ্লথ হয়ে যায়। শুধু নিকোলাস পুরান ১৬ বলে ১ চার ৩ ছক্কায় ৩০ রান করে ধারাটা বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের দৃৃঢ়তায় ৩৫ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪০ রানের বেশি যেতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। খলিল ৩টি ও মোহাম্মদ শামি ২টি উইকেট নেন। এরপরও বৃষ্টি আইনে ভারতের টার্গেট ২৫৫ হয়ে যাওয়াতে সিরিজ ড্রয়ের স্বপ্ন দেখেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু বোলারদের ব্যর্থতা এবং কোহলি-শ্রেয়াসের দারুণ ব্যাটিং তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি।
×