ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিল্পের আলোয় শেখ মুজিব’ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৬ আগস্ট ২০১৯

‘শিল্পের আলোয় শেখ মুজিব’ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান? যখন আমার পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান/তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি...। স্বাধীন বাংলার পথরেখা সৃষ্টি করা সেই মহামানবকে স্মরণ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। বিশেষ দিনটিতে শিল্পের আলোয় জানানো হয়েছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রদর্শনালয়ের দেয়ালে ঝুলেছে চিত্রকরের রঙ-তুলির আচড়মাখা তার মুখচ্ছবি। আলোকচিত্রীর ফেম্র্রবন্দী ছবিতে দেখা মিলেছে বহুমত্রিক অভিব্যক্তিতে উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধুকে। কেউ বা আবার জাদুঘরে প্রদর্শিত স্মৃতি নিদর্শনের মাঝে প্রায় প্রিয় নেতার শূূন্যতাকে উপলব্ধি করেছেন। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ শ্রাবণ ট্র্যাজেডি নামের নাটকে উঠে এসেছে স্বাধীনতার মহান স্থপতির মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান। সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক জীবনের কথা। বৃহস্পতিবার ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকীতে এভাবেই নিবেদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র ভালবাসা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু শীর্ষক মাসব্যাপী কর্মসূচী নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। সেই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার এক নং গ্যালারিতে পয়লা আগস্ট থেকে চলছে চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এ শিল্পায়োজনে বিস্তৃত দেয়ালজুড়ে সজ্জিত হয়েছে জাতির জনকের মুখচ্ছবি। শিল্পিত রং-রেখার আঁচড়ে অধিকাংশ ছবিতেই চমৎকারভাবে মূর্ত হয়েছেন শেখ মুজিব। আর তাকে কেন্দ্র করে চিত্রিত চিত্রকর্মগুলোয় সহজাতভাবেই উঠে এসেছে স্বদেশের প্রতিচ্ছবি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সমান্তরালে উদ্ভাসিত হয়েছে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম। আছে এ দেশের নদী কিংবা নিস্বর্গের নানা রূপ। কোথাও বা বেদনার রং ছুঁয়ে গেছে পনেরোই আগস্টের নির্মমতাকে। শতাধিক শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্মের সঙ্গে যুক্ত প্রদর্শনীতে হয়েছে সংগৃহীত আলোকচিত্র। সাদা-কালো ফেম্র্রবন্দী ছবিগুলোতেও নানা প্রেক্ষাপটে মুজিবের দেখা মেলে। আগস্ট মাসজুড়ে চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা এবং শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত স্মৃতি নিদর্শনসহ মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাকে নিয়ে দেশ-বিদেশের পত্রিকার সংবাদের সচিত্র প্রতিবেদন, রাজনৈতিক থেকে পারিবারিক জীবনের প্রতিচ্ছবিময় আলোকচিত্র, মুজিবকে নিয়ে চিত্রিত চিত্রকর্ম এবং তাঁকে নিয়ে রচিত গ্রন্থসম্ভারে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনীটি। জাতীয় শোক দিবস মুজিবময় এই বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত একটি বাইসাইকেল। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণার সময় সাইকেলটি ব্যবহার করেছিলেন জাতির জনক। সাইকেল ছাড়াও প্রদর্শনীতে রয়েছে মুজিবের ব্যবহৃত কলম, কাসার থালাসহ নানা স্মৃতি নিদর্শন। তেসরা আগস্ট থেকে শুরু মাসব্যাপী প্রদর্শনীটি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। শোক দিবসের সন্ধ্যায় বেইলী রোডের অফিসার্স ক্লাবের মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনদের নির্মম হত্যাকা- নিয়ে গবেষণালব্ধ নাটক ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ৪০তম প্রযোজনাটির ১৫তম প্রদর্শনী হয়েছে এদিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনন জামান রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক রহমান লিয়ন। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন কবির আহামেদ, ফারূক আহমেদ সেন্টু, মোঃ শাহনেওয়াজ, মনিরূল আলম কাজল, পলি বিশ^াস, সামিউল জীবন, মীর জাহিদ হাসানসহ অনেকে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সেমিনারেরর আয়োজন জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘ভয়াবহ আগস্ট’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক প্রণব সাহা। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ রিয়াজ আহম্মদ। জাতীয় শোক দিবসের বিকেলে ‘বঙ্গবন্ধুকে জানো বাংলাদেশকে জানো’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বাংলাদেশ শিশুএকাডেমি। এতে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। এছাড়া অনুষ্ঠানে যুক্ত হয় শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক ২৫টি সিরিজ গ্রন্থমালা প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ছড়াপাঠ, শিশু বক্তাদের অনুভূতি প্রকাশ। অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
×