ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তেল গ্যাস অনুসন্ধানে এবার হাইপ্রেসার জোনে প্রাধান্য

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৬ আগস্ট ২০১৯

তেল গ্যাস অনুসন্ধানে এবার হাইপ্রেসার জোনে প্রাধান্য

রশিদ মামুন ॥ দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে এবার হাইপ্রেসার জোন বা উচ্চচাপ এলাকাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। স্থলভাগে হাইপ্রেসার জোনে কূপ খনন করার প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন কোম্পানি শেভরন। সরকারও মনে করছে হাইপ্রেসার জোনে গ্যাস অনুসন্ধান করা জরুরী। তবে হাইপ্রেসার জোনে ভেবে চিন্তে এগুনোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, ব্লক ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ এবং ১৪ তে হাইপ্রেসার জোন অতিক্রমের জরিপ পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার এককভাবে শেভরনের হাতে এই দায়িত্ব না দিয়ে বাপেক্সকে শেভরনের সঙ্গে রাখার পক্ষে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। তবে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনা করা হবে। মার্কিন কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশে তিনটি গ্যাস কূপে কাজ করছে। এককভাবে তারাই সব থেকে বেশি গ্যাস উত্তোলন করে। দেশর সব থেকে বেশি গ্যাস উৎপাদনকারী ক্ষেত্র বিবিয়ানা রয়েছে শেভরনের হাতে। শেভরন সেখান থেকে প্রতিদিন এক হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলছে। এর বাইরে জালালাবাদ থেকে প্রতিদিন ২৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট এবং মৌলভীবাজার থেকে ২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলছে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, প্রচলিত উৎপাদন বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) বাইরে গিয়ে শেভরন চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশের হাইপ্রেসার জোন বা উচ্চচাপ এলাকা সম্পর্কে বাস্তব কোন অভিজ্ঞতা নেই কারও। এখনও দেশে ওই এলাকায় গ্যাস কূপ খনন করা হয়নি। তবে ওই এলাকায় কি সম্পদ রয়েছে, চাপ কত হবে সে বিষয়ে এখনও কারও কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। অন্যদিকে এই এলাকা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে যেসব খনির গ্যাস একেবারে ফুরিয়েছে সেখানে খনন করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন নতুন অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করতে গিয়ে উৎপাদনশীল কোন খনিতে উচ্চচাপ এলাকায় কূপ খনন করা যাবে না। সেখানে কোন কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে ওই খনি থেকে আর গ্যাস পাওয়া যাবে না। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আমরা এখন হাইপ্রেসার জোন অতিক্রম করতে চাইছি। সেখানে কি সম্পদ রয়েছে আমরা তা দেখতে চাই। শেভরন বাংলাদেশ হাইপ্রেসার জোনে কূপ খনন করার একটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান তিনি। দেশে ১৯৮৫-৮৬ সালে সুনামগঞ্জে ৪ হাজার ৯৭৭ মিটার গভীরতায় একটি গ্যাস কূপ খনন করা হয়। এটিই দেশের সব থেকে গভীর অনুসন্ধান বলে জানা গেছে। এরপর আর এত গভীরে কোন কূপ খনন করা হয়নি। তবে সুনামগঞ্জের এই কূপটি হাইপ্রেসার জোন অতিক্রম করেছিল কি না সে সম্পর্কে কারও কোন ধারণা নেই। এরপরও কয়েকবার পেট্রোবাংলা হাইপ্রেসার জোন অতিক্রমের পরিকল্পনা করলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসে অভিজ্ঞতা এবং দুর্ঘটনার ভয়ে। কোথায় হাইপ্রেসার জোন অতিক্রম করা উচিত তাই বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি এখনও। স্বাভাবিক কূপে সাড়ে চার হাজার পিএসআই পর্যন্ত চাপ সৃষ্টি হয়। এই কূপের গভীরতা হয় সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার মিটার পর্যন্ত। কিন্তু হাইপ্রেসার জোনের ক্ষেত্রে ছয় থেকে সাত হাজার মিটার পর্যন্ত খনন করতে হবে। মাটির যত গভীরে খনন করা হবে উপরিভাগে চাপ তত বাড়বে। কিন্তু কতটা বাড়বে সে সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা করে ব্যবস্থা না নিতে পারলে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, আমাদের অবশ্যই উচ্চচাপ এলাকায় খনন করা উচিত তবে কোথাও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে সেখানে কারও প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে উচ্চচাপ এলাকায় খনন করা উচিত হবে না। কোন কারণে সামাল দেয়া না গেলে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে। এতে ওই গ্যাস ক্ষেত্রটি ধ্বংস হয়ে যাবে। অনেক সময় বিদেশী কোম্পানি প্রলোভন দেখায়। আমাদের সেই প্রলোভনে সাড়া দেয়া উচিত নয়। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রতি একজন বিশেষজ্ঞ হাইপ্রেসার জোনে কূপ খনন করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করছেন হাইপ্রেসার জোনে অনেক গ্যাস রয়েছে। যদিও গ্যাসকূপ খনন করে বাণিজ্যিক উত্তোলনে সফল না হলে গ্যাস রয়েছে এমনটি বলা যায় না। বাপেক্স-এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্তজা আহমেদ চিশতী বলেন, আমাদের এখানে হাইপ্রেসার জোনের অবস্থান এক এক জায়গাতে এক এক রকম, সিলেটে এক রকম চট্টগ্রামে আবার অন্যরকম। সাধারণ যে কূপ খনন করা হয় তার চেয়ে আরও দুই হাজার মিটার গভীরে থাকে হাইপ্রেসার জোন। সাধারণ কূপে প্রেসার দুই হাজার ২০০ থেকে সাড়ে চার হাজার হয়। হাইপ্রেসার জোনে এই চাপ হতে পারে ছয় হাজার পিএসআই পর্যন্ত।
×