ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকের আগামী বৈঠকে উঠছে

সাইবার হামলা ঠেকাতে ১৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১৬ আগস্ট ২০১৯

সাইবার হামলা ঠেকাতে ১৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে

ওয়াজেদ হীরা ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশের সবকিছুই এখন ডিজিটাল। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ই-সেবা, ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিংসহ নানা সুবিধা মিলছে। তবে প্রায়ই বিভিন্ন তথ্যসমৃদ্ধ সাইট বা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এ কারণেই দেশের ডিজিটাল তথ্যভা-ারকে সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আইসিটি বিভাগ ১৪৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ডিজিটাল ব্যবস্থায় একদিকে মানুষ যেমন অনেক সুফল পাচ্ছে তেমনি কেউ কেউ এর অপব্যবহারও করছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের অর্থও দাবি করা হয়। এসব নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতের ডিজিটাল তথ্যভা-ার আরও সুরক্ষিত করতে চায় সরকার। এরই প্রেক্ষিতে ‘বিজিডি ই-গব সিআইআরটি’র সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারী দফতরে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বাড়বে এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সর্বোপরি জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট আইসিটি কর্মকর্তা এ বিষয়ে জানান, রূপকল্প ’২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের আওতায় সরকারী কাজের বড় অংশ দ্রুত ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ই-সেবা, ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় ই-সেবা পৌঁছে দিতে সরকার জাতীয় ডেটা সেন্টার স্থাপন ও দেশব্যাপী সব সরকারী দফতরের মধ্যে নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির কাজ শেষ করেছে। কিন্তু জাতীয় ডেটা সেন্টার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনলাইন সেবাগুলো বিভিন্ন সাইবার আক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব আক্রমণ থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোগুলো নিরাপদ রাখতে বিসিসির আওতায় বিজিডি ই-গব সিআইআরটি (কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় অর্জনগুলো সুরক্ষিত করার জন্য বিসিসির কার্যক্রমের আওতায় সাইবার নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই এই টিম গঠন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২২ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। সভায় বেশ কিছু সুপারিশ আসে। সে সুপারিশের ভিত্তিতে এরই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। একনেকের আগামী সভায় তা উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে এ বছর থেকে ’২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। উর্ধতন এক আইসিটি কর্মকর্তা বলেন, ডেটা সেন্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমরা প্রতি মুহূর্তে শঙ্কায় থাকি, কখন কী হয়। এখানে নির্বাচন কমিশনের তথ্যসহ সরকারী সব অফিসের তথ্য সংরক্ষিত আছে। আমরা সবসময় সতর্ক অবস্থায় আছি। এরপরও বিভিন্ন স্থান থেকে সাইবার হামলার চেষ্টা চলে। ওসব আক্রমণ থেকে ডেটা সেন্টার রক্ষায় এই প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। বিজিডি ই-গব সিআইআরটি’র কার্যক্রম এতদিন পরিচালিত হতো লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ এ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট (এলআইসিটি) প্রকল্প থেকে। এই প্রকল্পের মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়েছে। ফলে সিআইআরটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন প্রকল্পের প্রয়োজন পড়ে । একইসঙ্গে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দফতরের নেটওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোতে সাইবার নিরাপত্তাঘটিত বিষয়গুলো দেখভালের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়। এই দুই চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি একই প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে উদ্ভূত সাইবার ঝুঁকি নিরসনের কার্যক্রমকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া সম্ভব বলে মত আসে। সেই অনুযায়ীই আইসিটি বিভাগ নতুন এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও জাতীয় তথ্যভা-ারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৮ বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ও কম্পিউটার এ্যাকসেসরিজ সংগ্রহ করা হবে, ব্যক্তি পরামর্শকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনবল নিয়োগ দেয়া হবে; অফিস ইক্যুপমেন্ট ও ফার্নিচার কেনা হবে, বৈদেশিক ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ সেমিনার ও কনফারেন্সের আয়োজন করা হবে। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবুল কালাম আজাদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় ডাটা সেন্টারে রক্ষিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভা-ার এবং ই-গবর্নমেন্ট অবকাঠামোকে সাইবার ঝুঁকি থেকে রক্ষা, সর্বোপরি সরকারী দফতরগুলোতে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। নাম প্রকাশ করার না শর্তে এক কমিশন কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই দেশের যে কোন তথ্যই সুরক্ষিত থাকুক। ডিজিটাল দেশের জন্য তথ্যসুরক্ষা দেয়া আরও বেশি দায়িত্ব আমাদের। আমাদের যে প্রতিষ্ঠান এটি পালন করছে তারা যেন যথাযথ ও শক্তভাবে এটি করতে পারে সেজন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায়ই আমরা শুনি অমুক সরকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা, সাইট হ্যাকড হয়েছে। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে তা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হবে।
×