ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৬ আগস্ট ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ তোমার ছবি টাঙাতে পারি না ঘরে,/তাই তো আমার দেয়াল শূন্য রাখি,/আমার বুকের গভীর ভালোবাসায়/উন্নতশির তোমার ছবি আঁকি...। প্রিয় পিতার ছবি বড় ভালবেসে বুকে এঁকেছে বাঙালী। মুজিব নামের ধ্রুবতারাটি সেই যে জ্বলেছিল, এখনও একই রকম জ্বলজ্বল করছে। হারানোর দিনে তাই আরও বেশি ফিরে পাওয়া হলো তাঁকে। বৃহস্পতিবার ছিল ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে হারানোর দিন। বেদনাবিধুর দিনে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছিলেন বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা। গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের গান থেকে বললে- শোনো, একটি মুজিবরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি/আকাশে বাতাসে ওঠে রণি...। আকাশে বাতাসে দিনভর শেখ মুজিবের নাম ধ্বনিত হয়েছে। শোকের শহর ঢাকায় শক্তির অফুরান উৎস হয়ে এসেছিলেন তিনি। সভা সমাবেশের মঞ্চ, শিল্পীর ক্যানভাস, ব্যানার ফেস্টুন থেকে উঠে আসছেন শেখ মুজিবÑ দেখে কী যে অসাধারণ অনুভূতি হয়! কবির কবিতায় শিল্পীর গানে বঙ্গবন্ধু। প্রধান প্রধান সড়কের পাশে স্থাপন করা তাঁর প্রতিকৃতি যেন বাংলাদেশের একেকটি রূপকে তুলে ধরছে। বৃষ্টিভেজা দিনে রাজধানীর সব পথ গিয়ে মিশেছিল ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়কে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ির সামনে ঢল নেমেছিল মানুষের। এদিন সকাল থেকেই প্রিয় পিতার প্রতিকৃতির সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ভরিয়ে দিয়েছেন তারা। শ্রদ্ধা ভালবাসা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের চোখে মুখে একটা দুঃখবোধ এক ধরনের গ্লানি দেখা গেছে। মুজিবের মতো নেতাকে রক্ষা করতে না পারার গ্লানি নির্দোষরাও যেন বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। রাজধানী ঢাকার বুকে ভয়ঙ্কর ক্ষত এঁকে দিয়েছিল ১৫ আগস্ট। সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি। চারপাশে তাকিয়ে সেটা ঠিক বোঝা গেছে। দেশী-বিদেশী শত্রুরা ভেবেছিল, শেকড় থেকে বাঙালীকে বিচ্ছিন্ন করা গেছে। সেটি হয়নি। মুজিব মৃত্যুঞ্জয়। বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিব। এই নাম কি মুছে ফেলা যায়? কবির ভাষায়Ñ তার ছায়া দীর্ঘ হ’তে-হ’তে/ মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে...। বৃহস্পতিবার সেই ছায়াটি হয়ে শহর ঢাকায় এসেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিকে, ঈদ শেষ হলেও রেশ রয়ে গেছে। মোটামুটি ফাঁকা ঢাকা। গ্রামে প্রিয়জনের সঙ্গে ছুটি কাটাতে যাওয়া মানুষ তেমন ফেরেনি। যারা ঢাকায় আছেন তাদের জন্য সময়টা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। যে কোন স্থানে যখন তখন যাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েকদিন আত্মীয়স্বজনের বাসায় দাওয়াত খেয়ে কাটিয়েছেন অনেকে। সেই সঙ্গে চলেছে ঘুরে বেড়ানো। ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার সীমান্ত স্কয়ারে গিয়ে দেখা যায়, সিনেমা দেখতে আসা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। হলিউডের ব্লকবাস্টার মুভি দেখে আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছেন তারা। পাশে বিশাল ফুডকোর্ট। সেখানে চলছে খাওয়া-দাওয়া। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলেও প্রায় অভিন্ন ছবি। অবশ্য বৃষ্টি বেশ ঝামেলা করছে এবার। একবার শুরু হলে আর থামতে চাইছে না। ফলে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে ঈদ আনন্দ। বৃষ্টিভেজা উদ্যাপন আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত চলবে। পরদিন রবিবার থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করবে মানুষ। ঢাকা ফিরবে আপন চেহারায়। ঈদের ছুটির মধ্যেই বিদায় নিয়েছে শ্রাবণ। শ্রাবণের শেষ বর্ষণে বৃহস্পতিবার সিক্ত হয়েছে রাজধানী। আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে নতুন ঋতু শরত। হ্যাঁ, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসাবে প্রকৃতি। এরই মাঝে সেই ছবিটা কিঞ্চিত দেখা গেছে। ঢাকার আকাশ গত কিছুদিন ধরেই নীল। সেখানে সাদা মেঘের ওড়াউড়িও কম বেশি চোখে পড়েছে। জলাশয়ের ধারে নিশ্চয়ই ফুটতে শুরু করেছে কাশফুল। শরতের হাত ধরে আরও কিছু পরিবর্তন আসছে। সেদিকে লক্ষ রাখুন। উপভোগ করুন।
×