ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ১ ভাদ্র

এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে...

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৬ আগস্ট ২০১৯

এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে...

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা-/ নবীন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।/ এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,/ এসো নির্মল নীলপথে...।’ এসেছে শরত। আজ পয়লা ভাদ্র। প্রিয় ঋতু শরতের প্রথম দিন। আনুষ্ঠানিক শুরু। আশ্বিনের শেষদিন পর্যন্ত ‘শরত কাল’ বলে বিবেচিত হবে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুই ভিন্ন ভিন্ন রূপবৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হয়। শরতেও নতুন করে সাজে প্রকৃতি। গ্রামে যেমন শহরেও তাই। এখন গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কাশফুলের দোলা। আর শহরের নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। শরতের প্রকৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা-/ নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাইÑ লুকোচুরি খেলা...। প্রেমের কবি নজরুলকেও আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি। বিশেষ করে শরতের শিউলি তাকে মুগ্ধ করেছিল। সে মুগ্ধতার কথা জানিয়ে কবি লিখেছিলেন: এসো শারদপ্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে।/ এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে...। শরতের মিষ্টি সকালের বর্ণনাও পাওয়া যায় তার লেখায়, যেখানে তিনি লিখেছেনÑ শিউলিতলায় ভোরবেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।/ শেফালি ফুলকে ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা...। শরতে শুধু প্রকৃতি নয়, মনও বদলে যায়। পরিবর্তিত হয়। সেই পরিবর্তনের কথা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।/আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে...। নজরুল শরতে হারানো প্রিয়াকে অনুভব করেছেন। লিখেছেন: শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ/ এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথি কই...। একই রকম বিরহ আক্রান্ত হয়ে কবি লিখেছেন: দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ শরতের ভোর হাওয়ায়।/ শিশির-ভেজা শিউলি ফুলের গন্ধে কেন কান্না পায়...। প্রায় অভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে কবিগুরু লিখেছেন: আজি শরতাপনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়।/ ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো...। সব মিলিয়ে একটু ভিন্নতরই হয় শরত। প্রতিবারের মতো এবারও নানা আয়োজনে প্রিয়ঋতুকে বরণ করে নেবে বাঙালী। প্রকৃতিপ্রেমীরা বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এর মাধ্যমে চমৎকার ফুটিয়ে তোলা হবে শরতের রং-রূপ। প্রিয় ঋতুকে গানে, কবিতায়, নৃত্যের ছন্দে বরণ করে নেয়া হবে। চলবে বন্দনা। প্রতিবছর শরত উৎসব আয়োজনের কথা জানিয়ে সত্যেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজারুল চৌধুরী সুইট জনকণ্ঠকে বলেন, ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আমরা পেয়েছি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে। কবিগুরুর চোখ দিয়ে যে শরত দেখা, তার কোন তুলনা হয় না। নতুন প্রজন্মকে আমরা সেই শরত দেখাতে চাই। বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দিতে চাই। এ চিন্তা থেকে উৎসব আয়োজন করা। এটি বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎসব। এমন উৎসব বেশি বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
×