ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফাঁসি কার্যকর চাই ॥ বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে আনুন

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৬ আগস্ট ২০১৯

ফাঁসি কার্যকর চাই ॥ বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে আনুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর। বাঙালীর আশ্রয়স্থল, আশা-ভাবনার মূর্ত প্রতীক। অনিবার্য ঠিকানা আর স্বপ্নের গন্তব্য মহল। রাতের শেষ প্রহর তখন আকাশের গায়ে জেগে উঠতে শুরু করেছে। তখনও ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নারী-পুরুষ। সবার হাতে শ্রদ্ধার ফুল। তাদের ভেতর কেউ কেউ নীরবে তাকিয়ে আছে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা চোখের রঙিন প্রতিকৃতির দিকে। নিয়ন বাতির আলোয় জ্বল জ্বল করছে চশমার ভেতর দিয়ে সে চোখ দু’টো। প্রতিকৃতির সামনের বেদি সকাল হতেই ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে। পেছনে নিস্তব্ধ একটি বাড়ি। যে বাড়ির ভেতর রাখা আছে মোটা ফ্রেমের এ চশমাটি। কারও ব্যবহারের জন্য কোন টেবিলে নয়; জাদুঘরের সামগ্রী হিসেবে। তবে রাজপথের মানুষের প্রাণের স্পন্দনে বৃহস্পতিবার যেন এ প্রতিকৃতির চোখে আলো জ্বলে উঠেছিল। এবারের জাতীয় শোক দিবসে পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যের মূল কুশীলবদের খুঁজে বের করে মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি উঠেছে সর্বত্র। হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের বিন¤্র শ্রদ্ধা ও হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার পাশাপাশি ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে এবং টুঙ্গিপাড়ার মাজারে দিনভর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন জাতির পিতাকে। রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জাতির পিতার ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস পালন করে। শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরান তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্র্ঘ্যঅর্পণ, কালোব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শোকর‌্যালি, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচী, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। জাতীয় শোক দিবসে বৃহস্পতিবার সব স্রোত যেন মিশেছিল ধানমল্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে। ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ হিসেবে পরিচিত এ ভবনকে ঘিরে নেমেছিল শোকার্ত লাখো মানুষের ঢল। আজ থেকে চুয়াল্লিশ বছর আগে এমনই শেষ রাতে এ বাড়ির সামনে মানুষ নয়, এসেছিল মানুষের রূপধারী একদল পশু। তারা এসেছিল সশস্ত্র অবস্থায়। এখানে এসে তারা হত্যা করেছিল গোলাপের থেকে সুন্দর ও পবিত্র এক শিশুপুত্রকে। তারা হত্যা করেছিল, নতুন করে পৃথিবী সাজাতে মেহেদি রাঙা হাতে যে তরুণী নববধূ হয়ে এসেছিল স্বপ্নভরা যুবকের হাত ধরে- তাকে মেহেদি শুকানোর আগেই। আর যে চশমাটি এখন এ বাড়ির জাদুঘরসামগ্রীÑ গুলিতে ছিটকে পড়েছিল, সে চশমাটি। তাদের গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে রক্তাক্ত হন হিমালয়ের চেয়ে বিশাল এক মানুষ। হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে, তাঁর সময়ের তিনি ছিলেন পৃথিবীর সব থেকে উঁচু মানুষ। তিনি আমাদের জাতির জনক। আমাদের রাষ্ট্রের স্রষ্টা। চিরকালের অবহেলিত, নিপীড়িত একটি পশ্চাৎপদ জাতির তিনি পিতা। তাঁকে যারা হত্যা করেছিল তাদের সামনেও তিনি নেমে এসেছিলেন পিতার মতো বিশাল এক বুক নিয়ে। নির্মম ঘাতকরা সে বুকেই চালিয়েছিল গুলি। তারপর ৪৪ বছর কেটে গেছে এ জাতির জীবন থেকে। জাতি কেবলই পরিচিত হয়েছে পিতৃহন্তা জাতি হিসেবে, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। কয়েক খুনী আর ষড়যন্ত্রকারীর কাজের দায় বহন করতে হয়েছে প্রতিমুহূর্তে, প্রতিক্ষণে জাতিকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই এখানে যারা এসেছিল, তাঁরা ভারমুক্ত। তাদের মুখের ভাষা, বুকের ভাষা বার বার বলতে থাকে, পিতা তোমার হত্যাকারীকে আজ আমরা ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়েছি। আমরা কিছুটা হলেও পাপমোচন করেছি। ইতিহাসের চরম সত্যকে প্রকাশ ঘটিয়ে তাই তারা যেন জানিয়ে যায়- খুনীরা এসেছিল তস্করের মতো আর আমরা এসেছি বিজয়ী বেশে। তারা তোমার এ বাড়ির সামনে এসেছিল রাতের অন্ধকারকে আরও গাঢ় করতে, আমরা এসেছি নতুন দিনের সূর্যকে আহ্বান জানাতে। তাই বৃহস্পতিবার শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। সবার বুকে ছিল শোকের প্রতীক কালোব্যাজ। আর চোখে মুখে শোকের ছায়া। দিনভর আবালবৃদ্ধ-বনিতার ভিড় ঘিরে রেখেছিল সবুজ ছায়াঘেরা বঙ্গবন্ধু ভবন আর ধানম-ি ৩২ নম্বর এলাকাটিকে। অবশ্য মাঝখানের কিছুটা সময়ের কঠোর নিরাপত্তা বলয় জনতার স্বতঃস্ফূর্ততায় কিছুটা হলেও বিঘœ সৃষ্টি করে। এ নিরাপত্তার উপলক্ষ ছিল রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচীকে ঘিরে। এ সময় রাসেল স্কোয়ার থেকে শুরু করে ৩২ নম্বর সড়কে দুই স্তরের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়। সড়কের দু’দিকের প্রবেশমুখে আর্চওয়ে গেট আর মেটাল ডিটেক্টরের কড়া তল্লাশির মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে অভ্যাগতদের। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে চলে যাওয়ার পর পরই জনতার বাঁধাভাঙ্গা জোয়ার নামে সেখানে। বৈরী আবহাওয়াও জনতার জোয়ারকে রুখতে পারেনি, দমাতে পারেনি জনতার আবেগ-উচ্ছ্বাসকে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ভোরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারী ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই মহান নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে এ সময় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পৃথকভাবে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পীকার ও প্রধান বিচারপতিও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে নিয়ে স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালোরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ত্যাগ করার পরপরই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান। যেখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত তাঁর মা, ভাই, পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের দাফন করা হয়। তিনি কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৭টায় তার পরিবারের সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সবার কবরে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দেন। এখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বনানী কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এছাড়াও মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনসহ অগণিত নারী-পুরুষ, ছাত্রছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, জাতীয় গণমাধ্যম পরিষদ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ অজ¯্র সংগঠনও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান জাতির পিতাকে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো। এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারাদেশের সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এছাড়াও আওয়ামী যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকীতে ঢাকাসহ সারাদেশে আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করে। টুঙ্গিপাড়ায় শোকার্ত মানুষের ঢল ॥ গোপালগঞ্জ থেকে আমাদের সংবাদদাতা নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সকালে ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বনানী কবরস্থানে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান। সেখানে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন এবং কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল জাতির পিতাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। তিন বাহিনী প্রধানগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও জাতির পিতার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীকে লিটনকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রাশিদুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মির্জা আজম এমপি, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ তন্ময় এমপি, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, এসএম কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, স্থানীয় নেতা এ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র জয়ধর, সোলায়মান বিশ্বাস, শেখ আহম্মদ হোসেন মীর্জা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বেলা পৌনে ১১টায় বঙ্গবন্ধু মাজার কমপ্লেক্স মসজিদে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন সংসদ সদস্য এবং পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। এ সময় তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন সঙ্গে ছিলেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এদিকে জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান অনুষ্ঠান। প্রায় ৪০ হাজার শোকার্ত মানুষের জন্য এ মেজবানের আয়োজন করে চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন ফাউন্ডেশন। এরমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার মুসলিম অতিথি টুঙ্গিপাড়া শেখ মুজিবুর রহমান সরকারী কলেজ প্রাঙ্গণে এবং অন্যান্য ধর্মালম্বী প্রায় ১০ হাজার অতিথির জন্য বালাডাঙ্গা স্কুল প্রাঙ্গণে মেজবানের আয়োজন করা হয়। আর এ মেজবানের দেখভাল করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ছাড়াও দিনভর নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশবাসী শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতির পিতাকে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডাসহ বিভিন্ন উপসনালয়ে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে তথ্যসচিব আবদুল মালেকের নেতৃত্বে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সব সংস্থা ও শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ জাতীয় শোক দিবসে ঢাকায় ধানম-িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিনভর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে ঘুরে নতুন প্রজন্মের শিশু-তরুণ দেখেছে ভয়াল ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ ও নারকীয় পৈশাচিকতার দৃশ্য। স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে ইতিহাসের নৃশংসতম সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলির সঙ্গে পরিচত হতে গিয়ে অনেকের চোখেই নেমেছিল অশ্রুধারা।
×