ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁধ কেটে জিও ব্যাগ ভরাচ্ছে পাউবো

কুড়িগ্রামে অর্ধশতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১৬ আগস্ট ২০১৯

কুড়িগ্রামে অর্ধশতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে। গত ৩/৪ বছরের ভাঙ্গনে এই ইউনিয়নের তিনভাগের দুইভাগ এলাকা তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরে ভাঙ্গন কবলিতদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে গত দেড় মাস ধরে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও ভাঙ্গন ঠেকানো যায়নি। গত এক সপ্তাহেই অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন কবলিতদের অনেকেই খোলা আকাশে রোদ-জলে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে নদী তীর রক্ষা বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরানোর অভিযোগ উঠেছে পাউবোর শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। ফলে সেই এলাকা দিয়ে গাড়িঘোড়া চলাচল আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও বাঁধের পঞ্চাশ ফুট পাশ থেকেই ড্রেজার দিয়ে বালু তোলাতে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। সরজমিনে ভাঙন কবলিত চতুরা ও কালিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশে কয়েকটি বাড়ি পরে আছে। কালিরহাট এলাকার পঁচাশি বছরের বৃদ্ধা সোহাগী জানান, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে জীবনের সব সুখ শেষ হয়ে গেছে। তার ছেলে সামারু চন্দ্র রায়ের স্ত্রী পূর্ণিমা চন্দ্র রায় জানান, বাড়িঘর, জমিজমা, গাছপালা সব নদী কেড়ে নিল। চারদিন ধরে খোলা আকাশে পড়ে আছি। জায়গা না পেয়ে ঘরবাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখেছি। ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে আর মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে। তাদের নিয়ে খুব বিপদে আছি। এখন কি করব জানি না। নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ (৬৩) জানান, এ পর্যন্ত ২০ বার বাড়ি ভাঙছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের দেখার কেউ নেই। টাকার অভাবে জায়গা কিনতে পারছি না। শুধু একটু থাকার জায়গা দরকার।’ চতুরা হংসধর বাঁধের মাথা এলাকার আহাম্মদ আলীর রাত কাটে নির্ঘুমে। ঘরের উঠানে চলে এসেছে নদী। যে কোন মুহূর্তে বিলিন হয়ে যেতে পারে। ফলে আতঙ্ক আর উদ্বেগে সময় কাটছে তার পরিবারের লোকজনের। তিনি জানালেন, বিদ্যানন্দ বাজার, তৈয়ব খাঁ, ডাংরা, ডাবুরহালান, ডারিয়া, হংসধর, কালিরভিটাসহ সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙ্গছে তিস্তা নদী। গত এক সপ্তাহে ভেঙ্গে গেছে চতুরার মনতাজ আলী, আমজাদ আলী, হাফিজুর রহমান, আলী ম-ল, মমতাজ, আইজুল ও জমির হোসেনের বাড়ি। চতুরা এলাকার আজাদ, কামরুল জানান, এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত শ্রমিকরা বাঁধ নষ্ট করে মাটি কেটে জিও ব্যাগে ভরাচ্ছে। এখন এই রাস্তা দিয়ে গাড়িঘোড়া চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরাচ্ছি। আবার ড্রেজার দিয়ে সেটা পূরণ করছি। বাঁধ থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরেই বসানো হয়েছে ড্রেজার। তাই দিয়েই মাটি পূরণের কথা জানালেন তারা। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, গত এক দশকে আমার ইউনিয়নের এক চতুর্থাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আগে ভোটার ছিল ২৯ হাজার এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে। এগারোটি মৌজার মধ্যে ৭টি মৌজা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বার হাজার ভোটার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এখানে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও ভাঙ্গন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে এই এলাকার ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত স্থায়ী কাজ চাই। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের লোকজন কালিরহাট এলাকায় ভাঙ্গন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ করছে। কেউ বাঁধ কেটে মাটি ভরার কাজ করে থাকলে সেটা আমাদের জানা নেই। আমরা চর থেকে নৌকায় বালু এনে কাজ করছি। আর ড্রেজারের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে।
×