ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসে নারীর ঈদ

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ১৬ আগস্ট ২০১৯

প্রবাসে নারীর ঈদ

ঈদ মানেই তো হাসি, আনন্দ ও উল্লাস। এই কথা সবাই মানলেও প্রবাসীদের জীবনের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রবাসীদের ঈদটা একটু অন্যরকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটা বেশ কষ্টের। মুসলমানদের জন্য অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ-উল-আযহা। এই ঈদকে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন আশা আকাক্সক্ষা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। ঈদ আসার আগেই সবাই ঈদের বহুমাত্রিক আনন্দকে ভাগ করে নিতে প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু প্রবাসীরা...? প্রবাসে সবই আছে। নেই লাল-সবুজের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলের অপরূপ বাংলাদেশ। ঈদ আছে। নেই ঈদের আনন্দ। প্রতিবেশীও আছে। নেই মনের মতো প্রতিবেশী। এই খ- খ- হৃদয়ের চাওয়াগুলো প্রবাসের এত চাকচিক্যের মাঝে মন ভরে না। ফিরে যেতে মন চায় মাটির টানে স্বদেশের আঙিনায়। প্রবাসে বসবাস করা কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলে তাদের ঈদ অনুভূতির কথা জানাচ্ছেন- রুমান হাফিজ লন্ডনের ইলফোর্ডে পরিবারসহ বসবাস করছেন রুবা তানজিদা। দেশের মতো ঈদের আমেজ প্রবাসে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের গ-ি পেরিয়ে যারা প্রবাসে তারাও ঈদ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে থাকেন, যেহেতু যাপিত জীবনের সপ্তাহর ৭ দিন নানারকম ব্যস্ততার মধ্য আমার কাটে, তাই ঈদের দিন স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভীষণ উপভোগ করি, আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের ঘরে আপ্যায়ন করাই, আত্মীয়স্বজনের বাসায় যাওয়া স্বদেশের মতো ঈদের আমেজ প্রবাসে তেমন নেই, ছেলেবেলায় ঈদের আগের রাতে মা-খালা চাচিদের পিঠা বানানোর প্রতিযোগিতা চলত হাতে মেহেদী পরা নতুন জামাকাপড়, জুতো, পরিধান করে ঘুরে বেড়ানো পরিবারের মরুব্বিদের কাছ থেকে সালামি হিসেবে টাকা নেয়া যেন অন্যরকম এক অনুভূতি সুখ ছিল সব যেন এখন স্মৃতি, প্রবাসে সাধ্যমতো ঈদের দিন ছুটিতে পরিবারকে নিয়ে আনন্দ উপভোগ করার যথাযথ চেষ্টা করি যাতে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যেন এই দিন হাসি খুশিতে ঈদ উদযাপন করে, প্রবাসে আসা জীবিকার তাগিদে স্বামী ও সংসারের জন্য তাই কঠিন বাস্তবতার নিরিখে সত্যকে মানিয়ে নিয়ে চলা এক জীবন। সামিরা সিদ্দীকা। উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন তিনি বসবাস করছেন কানাডায়। পড়ছেন সেখানকার লেথব্রীজ ইউনিভার্সিটিতে। দেশের বর্ণিল ঈদ স্বপ্নেও সেখানে ধরা দেয় না বলে মনে করেন এই তরুণী। যে কোন উৎসব এলেই দেশের কথা খুব মনে পড়ে। সবচেয়ে মিস্ করি ঈদের আনন্দ, সবার সঙ্গে দেখা হওয়া, এবাসা-ওবাসায় নানা রকম খাওয়া-দাওয়া। লেখাপড়া ও থিসিসের কাজে প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয় এবং রুমে ফিরে নিজের কাজও করতে হয়। তাই দেশের মতো তেমনটা সময়ও পাওয়া যায় না। এখানে ঈদ মানে সেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে বাঙালী কমিউনিটির সবাই একত্রে মিলিত হয়ে ‘ওয়ান ডিস্ পার্টি’র আয়োজন করি। সবাই আমরা নিজেরাই কোন একটা আইটেম রান্না করে নিয়ে আসি এবং একত্রে মজা করতে করতে খাওয়ার পর্ব শেষ করি। এরপর শুরু হয় গল্প, নাচগান। এভাবেই আমরা ঈদের আনন্দ একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে দিনটা কাটিয়ে দেই। দেশের বর্ণিল ঈদের ছবি এখানে স্বপ্নেও ধরা দেয় না। তবুও মনের ভেতর একটা শূন্যতা একটু অপূর্ণতা থেকেই যায়, বাস্তবতা যেখানে মেনে নিতে হয়। প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে লন্ডনে বসবাস করে আসছেন মাশ-হুদা চৌধুরী মীনা। এত বছর পরেও দেশের ঈদ নিয়ে তার ভাবনার কথা জানালেন এভাবে, আমি যখন প্রথম এদেশে আসি তখন এখানে ঈদ উৎসবের কোন আমেজ বা আনন্দ ছিল না। ঈদ নিয়ে কোথাও কোন আয়োজন চোখে পড়ত না। সবকিছু কেমন জানি সাদামাটা, রংহীন ছিল। এর কারণ হয়ত তখন খুব বেশি বাঙালী ছিলেন না। এখন এদেশে অনেক অনেক বাঙালী এসেছেন। আমাদের সবার পরিবার ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনি নিয়ে বড় হয়েছে। আত্মীয়তার গ-ি সীমানা ছাড়িয়েছে। এখন ঈদের আমেজ দেশের মতো না হলেও অনেক বেশি কাছাকাছি পাওয়া যায়। ঈদের দিনটিতে ছুটি মিলে কর্মস্থল থেকে। পরিবারের সবার ভেতরে একটা উৎসব উৎসব সাড়া জাগে ঈদ নিয়ে। প্রত্যেক এরিয়াতে সকালে ঈদের জামাত হয় মসজিদে বা খোলা মাঠে। ফিরে আসার পর মেহমান, আত্মীয়স্বজন আসেন। দুপুরে সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করি। ঈদের কেনাকাটা হয় যার যার সামর্থ্য ও রুচি অনুযায়ী। বিকেলে ছেলেমেয়ে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যাই। ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। দেশে যে উৎসবের আমেজ বা ঈদের যে আনন্দ এখানে সেটা পুরোপুরি পাওয়া যায় না। তবুও সবাই যার যার মতো করে উপভোগ করে, আনন্দ করে। সবকিছুর পরেও আমি কিন্তু আমার দেশ ও দেশের ঈদ মিস করি। দেশে রমজান আরম্ভ হতেই ঈদের আমেজ, ঘুরে ঘুরে সবাই মিলে পছন্দের কেনাকাটা করা। ঈদের দিনে দল বেঁধে বেড়ানো, বাচ্চাদের হৈ-হুল্লোড়, ঈদ সালামি নিয়ে তাদের উত্তেজনা এসব কিছুই মিস করি। সবকিছুর পরে আমার দেশ, আমার মাতৃভূমি। যেখানটায় আমার সব স্মৃতি, সব ভালবাসা।
×