ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সামর্থ্যহীন ট্যানারি মালিকদের দৌড়ঝাঁপ

চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে স্বাগত অর্থনীতিবিদদের

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৬ আগস্ট ২০১৯

চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে স্বাগত অর্থনীতিবিদদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তকে অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ তা স্বাগত জানালেও ট্যানারি মালিকরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে তারা কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে নির্ধারিত সময়ের আগে কাঁচা চামড়া কেনারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত থেকে সরকার যেন সরে আসে সেজন্য ব্যবসায়ীরা নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা নেই, ট্যানারিগুলোতে আগের বছরের ৫০ শতাংশ চামড়া অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থায় এত চামড়ার চাহিদা নেই, চামড়া কেনার জন্য পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায়নি ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে এতদিন ট্যানারি মালিকরাই কাঁচা চামড়া কেনার প্রতি অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন। ফলে চলতি বছর কোরবানির ঈদের পর সারাদেশে কাঁচা চামড়া বিক্রিতে ধস নামে। অবস্থা এতই খারাপ হয়ে যায় যে মাত্র ৫০ টাকাতেও গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন অনেকে। আবার অনেক স্থানে দাম না পেয়ে মাটিতেই পুঁতে ফেলা হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গত ১৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্য কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না। তাই চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়। সরকারের কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তের পর নড়েচড়ে বসেন ট্যানারি মালিকরা। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) বুধবার (১৪ আগস্ট) আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার দাবি জানায়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনও চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে অটল। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনও চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। এই মুহূর্তে চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাহার করব না। এই সচিব বলেন, আমরা চাই দেশের রফতানিমুখী শিল্প উন্নত হোক। সেজন্য আমরা ওয়েড ব্লু চামড়া আগে রফতানির অনুমতি দেব। তারপর পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত দেব। সিপিডির সিনিয়র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এবার যে পরিমাণ চামড়া উৎপাদন হয়েছে ও আগের বছরের অনেক চামড়া মজুদ রয়েছে সব কিছু বিবেচনা করলে এই বিপুল পরিমাণ চামড়া দেশের ভেতর ব্যবহারের সুযোগ সীমিত। সুতরাং ব্যবসায়ীরা চাইলেও এত চামড়া কিনে দেশের ভেতর ব্যবহার করার মতো অবস্থা তাদের নেই। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাই যখন চামড়া মাটিতে পুঁতে দেয়া হচ্ছে, নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে, অথবা রাস্তায় ফেলে দিলেও কেউ তা সংগ্রহ করছে না। এতে করে ইঙ্গিত পাওয়া যায় আসলে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ চামড়া ব্যবহার করার সামর্থ্য নেই। ফলে সরকারের চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে যৌক্তিক বলেই মনে হয়। ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া রফতানির বিরোধিতা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের বিরোধিতার প্রশ্নটি তখনই যোক্তিক হবে যখন পুরো চামড়া তারা কিনবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোরবানির চামড়ার বিষয়ে সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এই ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনার অভাব ছিল। তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল, দেশের উৎপাদন ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে চামড়া রফতানির বিষয়ে আরও আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া। এখন চামড়া রফতানি করা হলেও সাধারণ মানুষ তার সুফল পাবে না। অন্যদিকে বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া হলে চামড়া শিল্প কঠিন সম্মুখীন হবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেয়া কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা আগামীকাল ১৭ আগস্ট থেকে সরকার বেঁধে দেয়া দামে ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া হলে এই বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে। সাভারের চামড়া শিল্পনগরী কাঁচা চামড়ার অভাবে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়বে। বিএফএলএলএফইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলজাহান ভুইয়া বলেন, সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারিগুলো পুরোপুরি চালু হলে দেশের কাঁচা চামড়া ট্যানারিগুলোর চাহিদার মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ চাহিদা পূরণে করতে পারবে। তখন বিদেশ থেকে কাঁচা চামড়া আমদানি করতে হবে। এই অবস্থায় কাঁচা চামড়া রফতানির সরকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার বেঁধে দেয়া দামে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া ক্রয় করতে আমরা সম্মত।
×