ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী নীতিমালার আলোকে

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি শুরু

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ১৬ আগস্ট ২০১৯

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। মেয়াদী বা ক্লোজ এ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাজারের বর্তমান ইতিবাচক অবস্থা সরকারের নীতি সহায়ক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আইসিবি তার মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অবসায়ন ঘটালে শেয়ারবাজারের ক্ষতি হাতে পারে বিবেচনায় ২০১৭ সালের প্রথম দিক থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে ফান্ডগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় সরকার সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ‘আইসিবি ইউনিট ফান্ডের’ মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করে। দীর্ঘ এনালাইসিসের পর সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১৮ সালে সরকার বিদ্যমান ক্লোজ্ড এ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ পুনরায় একটি পূর্ণ (১০ বছর) মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ইঝঊঈ কে নির্দেশ দেয়, যার ফলে পরবর্তীতে সকল শর্ত শিথিল করে গেজেট প্রণয়ন করা হয়। তারা বলছেন, গতবছরের শেষদিকে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাজারকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। এতে বাজারে অনেক সেল প্রেসারও কমেছে। অর্থমন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমন্বিত ওই সভায় বিদ্যমান মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আগে আইসিবির প্রস্তাবনা অনুযায়ী বিএসইসি কর্তৃক আইসিবি ইউনিট ফান্ডের মেয়াদও বাড়ানো হয়। গত ১৩ মার্চ আইসিবি এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর বৃদ্ধি করা হয়। আইসিবির আরও বেশ কয়েকটি ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে বেসরকারীখাতে এএমসিগুলো সরকারের নির্দেশক্রমে প্রকাশিত গেজেটের বাস্তবায়ন শুরু করেছে। জানা গেছে, এলআর গ্লোবালের এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানির পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৫ নবেম্বর আইসিবিএএমসিএল ২য় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদও ১০ বছর বাড়ানো হয়েছিল। আর গত ৫ আগস্ট রেস এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ভাল মৌলভিত্তিসম্পন্ন বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে বড় অঙ্কের মূলধন বাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে ফান্ডগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাজার বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সরকার পুঁজিবাজারের আসল নিয়ন্ত্রক। পুঁজিবাজারের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার যে আইনের মাধ্যমে ফান্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয়, প্রয়োজন হলে বৃহত্তর স্বার্থে আবার সে আইনের পরিবর্তনও করতে পারে। তাই ক্লোজ এ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অবসায়ন রহিত করে মেয়াদ বৃদ্ধি করাও বাজারে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সাবেক জেনারেল ম্যানেজার মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপটে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি না করা গেলে ভয়াবহ অবস্থার তৈরি হতো কারণ এ ফান্ডগুলো তখন বৃহৎ অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করত। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান বলেন, সরকার পুঁজিবাজারের অভিভাবক। পুঁজিবাজারের স্বার্থে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তাই এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। এত বৃহৎ অঙ্কের মিউচ্যুয়াল ফান্ড অপসারিত হলে পুঁজিবাজারে তারল্যের সঙ্কট দেখা দিত। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ ক্ষেত্রে তিনি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করায় সরকারের প্রশংসা করেন।
×