ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ফুটবল আমাকে সবকিছু দিয়েছে’

প্রকাশিত: ১০:১২, ১৫ আগস্ট ২০১৯

 ‘ফুটবল আমাকে সবকিছু দিয়েছে’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রায় দেড়যুগের পেশাদারী ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন ওয়েসলি স্লেইডার। হল্যান্ডের তারকা এই এ্যাটকিং মিডফিল্ডার মঙ্গলবার সবধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৮ সালে হল্যান্ড জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়া স্লেইডার বুটজোড়া তুলে রাখতে পেরে তৃপ্ত। অবসর প্রসঙ্গে স্লেইডার বলেন, ‘দারুণ সব স্মৃতি নিয়ে আমি ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি। আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে তৃপ্ত। ফুটবল আমাকে সব দিয়েছে। জাতীয় দলের হয়েও আমার অনেক সুখের স্মৃতি আছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্লাবেও দারুণ সময় কেটেছে।’ ২০০৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে হল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় স্নেইডারের। ২০১০ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার। আরিয়েন রোবেনের সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি গড়ে টোটাল ফুটবলের জনকদের নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। কিন্তু শিরোপা লড়াইয়ে স্পেনের বিরুদ্ধে একাধিক সহজ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করায় রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ডাচদের। ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত হল্যান্ডের হয়ে ১৩৪ ম্যাচে ৩১ গোল করেছেন স্নেইডার। আয়াক্স, রিয়াল মাদ্রিদ ও ইন্টার মিলানের মতো বড় বড় ক্লাবে খেলেছেন তিনি। হৃদয় ছোঁয়া ফুটবল নৈপুণ্যের কারণে ডাচদের বলা হয় টোটাল ফুটবলের জনক। যুগে যুগে দেশটির গুণী ফুটবলাররা মাতিয়েছেন ফুটবলবিশ্ব। এদের মধ্যে শীর্ষ নাম- জোহান ক্রুয়েফ, রুড গুলিত, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, মার্কো ভ্যান বাস্তেন, ডেনিস বার্গক্যাম্প, রুডি ভ্যান নিস্টলরয়। এতসব গুণী ফুটবলারের মাঝে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উঠে আসেন আরও একঝাঁক তারকা। আরিয়েন রোবেন, রবিন ভ্যান পার্সি, ভ্যান বোমেলরা এর মধ্যে অন্যতম। এদের মধ্যে অবধারিতভাবে ছিলেন স্নেইডারও। তারকা এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দেশের হয়ে নিজের সেরা পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছেন ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ফুটবলে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে আলো ছড়ানোর পর কুশলী এ ফুটবলার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ১৭ জুলাই ২০১০ সালে ডাচ এ তারকা প্রেমকে বাস্তবে পরিণত করেন। অবশ্য আরও আগেই নির্ধারিত ছিল বিয়ের বিষয়টি। ২০০৯ সালের ক্রিসমাস ডে’তে নিজেদের বিয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন স্নেইডার-ইওলান্থে জুটি। এর আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন স্নেইডার। ২০০৫ সালে রোমান স্ট্রিকস্ট্রাকে বধূ হিসেবে বরণ করেন তিনি। ওই সংসারে জেসি নামের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। কিন্তু ২০০৯ সালের ২১ জানুয়ারি তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপরই পরিচয় হয় ডাচ মডেল, অভিনেত্রী ও টিভি উপস্থাপিকা ইওলান্থের সঙ্গে। এরপর দু’জনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অনেক ছবি চলে আসে সংবাদমাধ্যমে। যে কারণে ২০০৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারা বাগদান সম্পন্ন করেন। আর পরের বছর বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। ১৯৮৪ সালে হল্যান্ডের আর্টেরেচ শহরে জন্ম নেয়া স্নেইডারের ফুটবল প্রতিভা বিকশিত হয় পরিবার থেকেই। তার পুরো পরিবার ছিল খেলাপ্রেমী। বাবাসহ বড় ভাইয়েরা ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। যে কারণে পেশা হিসেবে ফুটবলকে বেছে নিতে খুব একটা সমস্যা হয়নি তার। ‘ফ্রিকিক মাস্টার’ হিসেবে সুপরিচিত এই খ্যাতিমান ফুটবলারের উত্থান ঘটে মাত্র সাত বছর বয়সে আয়াক্সের হয়ে। ‘আয়াক্স একাডেমি’ই তাকে ঘষেমেজে তারকা ফুটবলারে পরিণত করতে সাহায্য করে। প্রায় একযুগ ক্লাবটির যুব দলে খেলে নিজের প্রতিভাকে শানিত করেন। দীর্ঘ এই সময়ে নিজের নৈপুণ্য দেখিয়ে জায়গা করে নেন আয়াক্সের মূল দলে। সেখানেও টানা ছয় বছর (২০০২-২০০৭) আলো ছড়ান নিয়মিত। ক্লাবের হয়ে জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা। এ সময় দলের হয়ে ১২৭ ম্যাচে গোল করেন ৪৪টি। মূলত এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হলেও গোলও পেয়েছেন প্রচুর। এখানে অসাধারণ নৈপুণ্যের ফলে তারদিকে নজর পড়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের। যার ফলশ্রুতিতেই ২০০৭ সালের ১২ আগস্ট ২৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নাম লেখান সান্টিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবে। এর ফলে ওই সময় রয়েসটন ড্রেনথ এবং আরিয়েন রোবেনের পর ডাচদের হয়ে মাত্র তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে নাম লেখান বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্লাবটিতে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে রিয়াল ছেড়ে পাড়ি জমান ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানে। এরপর তুরস্কের গালাতাসারে ও ফ্রান্সের নিস ক্লাব হয়ে খেলার পর সর্বশেষ কাতারের আল-ঘারাফা ক্লাবে খেলে সবধরনের ফুটবলকে বিদায় বললেন স্লেইডার।
×