ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফের চালু বিমানবন্দর

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ১৫ আগস্ট ২০১৯

 ফের চালু বিমানবন্দর

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার প্লেন ওঠানামা আবার শুরু হয়েছে। চলমান অচলাবস্থার মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষকে সংযত আচরণের আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দরে জড়ো হওয়ার পর থেকে কার্যত সেখানে অচলাবস্থা বিরাজ করে। বিবিসি, সিএনবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম হংকং বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা আবার শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভের কারণে বিমানবন্দরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। সোমবার বিক্ষোভের কারণে যেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের চেক-ইন হয়নি সেসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। চীনে বন্দী প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই মাস আগে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠা হংকংয়ের বিক্ষোভ এখন স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভের মুখে প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম ওই বিলকে ‘মৃত’ ঘোষণার পরও আন্দোলন থামছে না। এদিকে বিক্ষোভে উস্কানি দেয়ার জন্য মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে বেজিং। বেজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখাপাত্র বলেছেন, ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখা। বিক্ষোভকারীরা বিলটি পুরোপুরি বাতিল, পুলিশী নিপীড়নের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত এবং ক্যারি লামের পদত্যাগ চাইছে। শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা টানা কয়েকদিনের কর্মসূচী নিয়ে বিক্ষোভে জড়ো হয়। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এবারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে চীনকে। বিক্ষোভ দমাতে কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও, চীন এখনও সেনাবাহিনী নামানো কিংবা অন্য কোন পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দেয়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আহত একজন বিক্ষোভকারীকে বিমানবন্দরের প্রধান টার্মিনালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘাত বাঁধে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কয়েকটি গাড়ি আটকে দেয়। দাঙ্গা পুলিশ এ বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সামনে এগোয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সময়ে সময়ে মরিচের গুঁড়োর স্প্রেও ব্যবহার করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দরের বেশ কয়েকটি স্থানে ট্রলিব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখে। গণমাধ্যমে একটি ছবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিক্ষোভকারীর কপাল বেয়ে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে হংকংকে সংযত থাকা এবং বিক্ষোভ দমনে পুলিশের যেনতেনভাবে টিয়ারগ্যাস ছুড়ে মারার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানান। ব্যাচেলে বলেন, ‘পুলিশকে বদ্ধ জায়গায় বিভিন্ন সময়েই জনতার ভিড়ে সরাসরি মানুষের ওপর টিয়ার গ্যাস ক্যানিস্টার ছুড়ে মারতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে ছোড়া টিয়ার গ্যাস শেল এ মানুষের মারাত্মকভাবে আহত হওয়া এবং মৃত্যুরও ঝুঁকি আছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থী।’ হংকংকে রসাতলে নিয়ে না যাওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের নতুন করে সতর্ক করে দিয়েছেন নেতা ক্যারি লাম। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সতর্ক বার্তা দেন। এ সময় প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে হংকংবাসীকে মতবিরোধ দূরে সরিয়ে রাখার আহ্বান জানান লাম। তিনি বলেন, ‘হংকং একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে।’ বিক্ষোভের সময় সহিংসতার কারণে হংকং এমন এক ‘অতল গহ্বরের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ নাই। নগরীর দিকে তাকিয়ে দেখুন, আমাদের ঘরবাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন- আপনারা কি সত্যি চান সব রসাতলে যাক’। এর আগে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা সতর্কবার্তা দেয়ার পরও মঙ্গলবার ফের বিক্ষোভকারীরা ওই স্থান না ছাড়ায় যাত্রীরা বিচলিত হয়ে পড়ে। ভিডিওতেও দেখা গেছে, বিমানবন্দরের ভেতর বসে থাকা বিক্ষোভকারীদের ভিড়। তাদের টপকে যাত্রাপথের দিকে যেতে হিমশিম খাচ্ছে যাত্রীরা। এ পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে যাত্রীদের যত দ্রুত সম্ভব টার্মিনাল ভবন ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বিক্ষোভের কারণে সোমবার ১৬০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর মঙ্গলবারও আরও কয়েকডজন ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। চীনে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই মাস আগে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠা হংকংয়ের বিক্ষোভ এখন স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভের মুখে প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম ওই বিলকে ‘মৃত’ ঘোষণার পরও আন্দোলন থামছে না। বিক্ষোভকারীরা বিলটি পুরোপুরি বাতিল, পুলিশী নিপীড়নের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত এবং ক্যারি লামের পদত্যাগ চাইছে। গত শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা টানা কয়েকদিনের কর্মসূচী নিয়ে বিমানবন্দরে বিক্ষোভে জড়ো হয়। মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ক্যারি লামকেও সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে। হংকংয়ের নাগরিকদের ভয় দূর করতে লাম রাজনৈতিক দায়িত্ব নেবেন কিনা, পুলিশের বিক্ষোভ দমনাভিযান থামাবেন কিনা এবং কখন লাম পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক হবেন এ সমস্ত প্রশ্ন তাকে করেন সাংবাদিকরা।
×