অনলাইন রিপোর্টার ॥ কোরবানির পশু জবাইসহ কাটাকাটি করতে গিয়ে কারো হাত কেটেছে, পা কেটেছে, কারো আবার হাত-পা ভেঙেছে। অধিকাংশ রোগীই একদিনের ‘মৌসুমি’ কসাই। এঁরা সবাই এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে।
ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে আসা রোগীর শতকরা ৯০ ভাগের বেশি এসেছেন কোরবানির পশু কাটাকাটি করতে গিয়ে নিজেরা রক্তাক্ত হয়ে।
হাসপাতালের টিকেট কাউন্টার, সেবিকা এবং চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে অন্তত ২০০ মৌসুমি কসাই এসেছেন চিকিৎসা নিতে। সকাল থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসা মোট রোগীর অন্তত ৯০ ভাগ মৌসুমি কসাই।
জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, অন্তত ১৫ জন হাত-পা কাটা রোগী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। যার মধ্যে ১৪ জনের জনের হাত-পা কাটা, বাকি একজন গরুর লাথিতে পা ভেঙেছে।
তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের মধ্যে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘গরুর হাড় কাটছি, এমন সময় দা স্লিপ করে পায়ে এসে লেগেছে। অনেক ক্ষত হয়েছে, তাই দ্রুত চলে এসেছি হাসপাতালে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন রাকিব মোল্লা। শিক্ষক রাকিব মোল্লা বলেন, ‘গরু জবাই করব এমন সময় হঠাৎ করে গরু লাফ দিল। লাফ দিতে গিয়ে টানা তিনবার লাথি মেরেছে আমার পায়ে। গরুর পা আমার হাঁটুর নিচের মাংসে ঢুকে গেছে। অবস্থা খুবই বাজে। সেলাই করলেও পা ঠিক হতে অনেক দিন সময় লাগবে।’
রাজধানীর কমলাপুর থেকে আসা আবদুস সাত্তার বলেন, ‘গরু কাটাকাটি শুরু করেছি। কাটতে কাটতে একসময় আমার নিজের অজান্তেই হাতে কোপ দিয়েছি। একটি আঙুল কেটে গেছে।’
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ সরকার বলেন, ‘সকাল থেকে পিঁপড়ার মতো কসাই আসছে। এরা আসলে পাকা কসাই না, সে জন্য এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত অন্তত ২০০ জন হাত-পা কাটা রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। ইমার্জেন্সিতে আসা মোট রোগীর অন্তত ৯০ ভাগই মৌসুমি কসাই। এদের অধিকাংশ রোগীই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।’
নাহিদা ফেরদৌস নামের কর্তব্যরত একজন সেবিকা বলেন, ‘প্রতিবার কোরবানির ঈদের দিনে এমন রোগী বেশি আসে। কিন্তু এবার যেন সবচেয়ে বেশি। গত বছরও ১৭০ জনের মতো হাত-পা কাটা রোগী এসেছিল।’
এদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আজ মৌসুমি কসাইদের ভিড় ছিল ভালোই। কয়েকজন হাত-পা কাটা রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এদের মধ্যে উত্তরখান থানা এলাকা থেকে এসেছেন পাপ্পু নামের একজন। তিনি বলেন, ‘ডান হাত কেটে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কী হয় আল্লাহ জানে।’
হাসপাতালটির সিনিয়র স্টাফ নার্স আবদুল হান্নান বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৫ জনের মতো গরু-ছাগল কাটতে গিয়ে হাত-পা কাটা রোগী এসেছে। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: