ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোচ নিয়োগে বিসিবির তোড়জোড়

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১১ আগস্ট ২০১৯

 কোচ নিয়োগে বিসিবির তোড়জোড়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত না রাসেল ডোমিঙ্গোই শেষ ভরসা হয়ে ওঠেন। এমনই ধারণা মিলছে। কোচ পাওয়া যে দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। তাতে অচিরেই কোচ নিয়োগ দেয়া কী সম্ভব হবে? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গত সোমবার বলেছিলেন, ‘দ্রুত কোচ নিয়োগ হয়ে যাবে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।’ কিন্তু তা হচ্ছে না এটা নিশ্চিত। সোমবার থেকে ছয়দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে ঈদের ছুটি। মঙ্গলবার পর্যন্ত সেই ছুটি চলবে। তার মানে ৯দিন চলে যাবে। ঈদের ছুটির পরপরই নিশ্চয়ই পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যাবে না। আরও দুই একদিন সময় যাবে। তাতে ১০দিন অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। তাই বলে এই ১০দিনেই কোচ নিয়োগ হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। কোচ নিয়োগ যে কঠিন হয়ে পড়েছে। সামনেই বাংলাদেশের টেস্ট ও ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ রয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু হবে। শেষ হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। এর আগে কী কোচ নিয়োগ সম্ভব হবে? যা বোঝা যাচ্ছে ডোমিঙ্গোকে নিয়োগ দিলে সম্ভব। তা না হলে সম্ভাবনা কমই। আর কোচ নিয়োগ টেস্ট শুরুর আগে না হলে আবার ভারপ্রাপ্ত কোচ দিয়েই চালিয়ে নিতে হবে। কেন সম্ভব নয়? বাংলাদেশের কোচের তালিকায় শুরুতে যে নামগুলো শোনা গিয়েছিল তারা তালিকার বাইরে চলে গেছেন। গ্যারি কার্স্টেন, টম মুডি, মিকি আর্থার, ওটিস গিবসন, মাহেলা জয়বর্ধনে এখন তালিকাতে নেই। কার্স্টেন ঘরোয়া দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। মুডি বাংলাদেশের কোচ না হয়ে ভারতের কোচ হতে চান। আর্থারকে সম্প্রতি পাকিস্তান বরখাস্ত করেছে। একই কাজ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ ওটিস গিবসনেরও। আর জয়বর্ধনে তো পারিশ্রমিক অনেক হাঁকানোর সঙ্গে বিশ্বের লীগগুলোতেও কোচিং করাতে চান। আর তাই এই কোচগুলো তালিকার বাইরে চলে গেছেন। তালিকায় সর্বশেষ যে নামগুলো শোনা গেছে তাদের মধ্যে থেকেও অনেকে বাংলাদেশের কোচ হওয়ার অবস্থায় নেই। ইংল্যান্ডের পল ফারব্রেস, জিম্বাবুইয়ের গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও শ্রীলঙ্কার চন্দিকা হাতুরাসিংহে তালিকায় আছেন। ইংল্যান্ডের সাবেক সহকারী কোচ পল ফারব্রেস কোচ হতে এবারও আগ্রহী নন। গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার বাংলাদেশের মতো দলের প্রধান কোচ হওয়ার মতো যোগ্য কিনা তা নিয়ে আছে দ্বিধা! হাতুরাসিংহেকে আবার ফিরিয়ে আনা বোকামি হতে পারে, সেই ধারণাও জন্মেছে। পেছন ফিরে তাকানোর মানেই নেই যে! এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার থেকেও সাড়া মিলেনি। তালিকায় নিউজিল্যান্ডের মাইক হেসন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডোমিঙ্গোই তাই বাংলাদেশের কোচ হওয়ার দৌড়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। কিন্তু এখানেও আছে সমস্যা। হেসনকে নিয়ে যে হচ্ছে টানাটানি। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানের কোচ হওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগ হেসনের। এমন রিপোর্টও নিউজিল্যান্ড গণমাধ্যমে হয়েছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল টি২০) কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের কোচ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন হেসন। বোঝাই যাচ্ছে কোন দলের কোচ হতেই এমন কাজ করেছেন। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও কোচ পদ পূরণ করার তাড়া আছে। সেই তাড়ায় হেসন শক্তিশালী নামও হয়ে উঠেছেন। বিশ্বকাপ শেষে কোচ নিয়োগের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের সাবেক সফল কোচ হেসনই এগিয়ে থাকছেন। আগামী বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে টি২০ বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপে ভাল করতে সবাই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কন্ডিশন এক থাকা নিউজিল্যান্ড কোচের দিকেই ঝুঁকছে। হেসনও সেই সুযোগটি নিশ্চয়ই ভালভাবেই নেবেন। আর তা নিতে গিয়ে বাংলাদেশকেও ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। যদি ভারত কিংবা অন্য দলের কোচ হওয়া যায় সেই সুযোগ নেবেন। তাতে করে স্বাভাবিকভাবেই হেসনের জন্য আশায় থাকলে বিসিবিকে অপেক্ষাতেই থাকতে হবে। অপেক্ষায় থেকেও যদি এমন ভালমানের কোচ মিলে তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো যদি শেষ পর্যন্ত অন্য কোন দলের কোচ হয়ে যান? হেসনের অধীনেই ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে, ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। সফল কোচ। তাই এ কোচকে পেতে সব দলই যেন দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি হেসনকে নাই মিলে তাহলে কী হবে? তখন ডোমিঙ্গোই বাংলাদেশের ভরসা হয়ে থাকছেন। ডোমিঙ্গোরও কোচিং ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ। তিনি জাতীয় দলে কখন খেলেননি। তবে কোচিং ক্যারিয়ারে সাফল্য কুড়িয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের কোচ হতে সাক্ষাতকারও দিয়েছেন। দ্রুতই খেলা ছেড়ে স্পোর্টস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং মার্কেটিংয়ের ওপর ডিগ্রী অর্জন করেন। ২৫ বছর বয়সেই দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন প্রভিন্স যুব দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অনুর্ধ-১৩, অনুর্ধ-১৯ , ‘বি’ দল ও ‘এ’ দলের দায়িত্ব পালন করেন ডোমিঙ্গো। ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দল ওয়ারিয়র্সে কোচের দায়িত্ব পান ডোমিঙ্গো। দায়িত্ব নিয়ে ডোমিঙ্গো আমূল বদলে ফেলেন। ওয়ারিয়র্সকে জেতালেন দুটি ট্রফি। জাতীয় দলে ওয়ারিয়র্সের ছয় ক্রিকেটার সুযোগ পান। ২০১২ সালে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের দায়িত্ব পান ডোমিঙ্গো। সেখানেও সাফল্য মিলে। স্পেশালিস্ট টি২০ কোচ হিসেবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রোটিয়াদের টি২০ দলের দায়িত্ব পালন করেন ডোমিঙ্গো। সেই সময় দলও অনেক সাফল্য কুড়ায়। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি২০ সিরিজ খেলেই ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১৯ বছর পর কোন সিরিজ জিততে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন অসাধারণ সাফল্যের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও টি২০ সিরিজ জিতে প্রোটিয়ারা। গ্যারি কার্স্টেনের সহকারী ছিলেন ডোমিঙ্গো। কার্স্টেন যখন দায়িত্বের ভার কমাতে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের কোচিং থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান তখনই ডোমিঙ্গো সেই দলের দায়িত্ব পান। সেই দায়িত্ব পেয়ে সাফল্যও দেখান। আবার যখন ২০১৩ সালের জুলাইয়ের পর কার্স্টেন পুরোপুরি কোচিং ছেড়ে দেন তখন ডোমিঙ্গো টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ সব ফরমেটের দায়িত্ব পেয়ে যান। কখনই দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে না খেলা এ কোচ এখানেও সাফল্য দেখান। তার তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতেও ভালই সাফল্য মিলে। যদিও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ওয়ানডে সিরিজে হারে প্রোটিয়ারা। তবে সার্বিকভাবে ভাল সাফল্য কুড়ান। তার অধীনে ১৩ টেস্ট সিরিজের মধ্যে ৮টিতে, ২২ ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে ১৪টিতে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে যে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমবারের মতো জিতে সেটিও ডোমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানেই। টি২০তে ৪২ ম্যাচের মধ্যে ২৩ জয় মিলে। ডোমিঙ্গোও কোচ হিসেবে সফল। শেষ পর্যন্ত হেসনকে না মিললে ডোমিঙ্গো তো কোচ হিসেবে খারাপ হন না। বিসিবিও তার সাক্ষাতকারের পর সন্তুষ্টি প্রকাশই করেছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই কোচ কী অচিরেই মিলবে? নাকি হেসনের জন্য অপেক্ষায় বিলম্ব হবে? বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেছিলেন, ‘ভারতের কোচ হওয়ার দৌড়ে আছেন অনেকে। ভারত কোচ নিয়োগ দেয়ার পর আমরা জোরেশোরে নামব। অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা হয়ে আছে। আমরা পূর্ণ সময়ের জন্য কোচ চাই, যার আন্তর্জাতিক পরিচিতিও রয়েছে।’ সিইও’র কথাই না শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়। বিশ্বকাপের পর পেস বোলিং কোচ দক্ষিণ আফ্রিকান চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টকে, স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে নিয়োগ দেয়া গেছে। কিন্তু প্রধান কোচ কী দ্রুতই নিয়োগ দেয়া যাবে?
×