স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভারতের তিন সেরা দল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মোহামেডান- তিন দলকেই পেয়ে দারুণ খুশি তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। লক্ষ্য ছিল দুই ক্লাব, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। আর এ লক্ষ্যেই কলকাতা সফরে যান দেশবরেণ্য এই ক্রীড়া সংগঠক। গত শুক্রবার টুর্নামেন্টে খেলার সম্মতি জানিয়েছিল মোহনবাগান। আর শনিবার নিশ্চিত হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল ও মোহামেডান। আলোচনার মাধ্যমে তিন ক্লাবকেই রাজি করিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করে দিলেন রুহুল আমিন।
শনিবার দুপুরে অংশগ্রহণের নিশ্চিত করে কলকাতা মোহামেডান। একইদিন বিকেলে আলোচনা হয় ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
মোহামেডানের সঙ্গে সফল আলোচনার পর কলকাতা থেকে তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমরা কলকাতা মোহামেডানের সাধারণ সম্পাদক কামারউদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে বসেছিলাম। তারা শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাবকাপে খেলতে রাজি হয়েছেন। বিকেলে আমরা ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা এক প্রকার সফল। দলের অন্যতম কর্মকর্তা শীরেন দত্তের নেতৃত্বে আলোচনায় নৈতিকভাবে তারা খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে ইস্টবেঙ্গল যেহেতু লিমিটেড কোম্পানি ক্লাব। তাই বোর্ড সভার সম্মতি প্রয়োজন। এখন শুধু এই অনুষ্ঠাকিতা বাকি। দলের কর্মকর্তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন তারা শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাবকাপে খেলতে আগ্রহী। এখন বোর্ড সভার সম্মতি পরবর্তীতে লিখিত নিশ্চয়তাপত্র আমাদের কাছে হস্তান্তর করবেন তারা।
তিনি আরও জানান, ভারতের দুই ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলকেই আমরা খেলাতে চেয়েছিলাম। মোহামেডান আমাদের চিন্তায় ছিল না। কিন্তু আলোচনা করতে গেলে শুরুতেই তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। ফলে টুর্নামেন্টে অন্তর্ভুক্ত করতে হলো ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিকেও।
এ বিষয়ে তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মহাদেশীয় অঞ্চলের দল বেশি হলে টুর্নামেন্টের আকর্ষণ বাড়বে। জনশ্রুতি রয়েছে তিন ক্লাবের প্রায় ২০ কোটি সমর্থক রয়েছে ভারতে। এটা বিশাল একটা প্লাস পয়েন্ট যে, ২০ কোটি ফুটবলপ্রেমীর দৃষ্টি থাকবে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাবকাপের দিকে। খুবই সফল সফর বলতে পারেন। আমার দৃষ্টিতে প্রত্যাশার চেয়েও যেন বেশি পেয়ে গেলাম। খুবই ভাল লাগছে। বিগত আসরগুলোর তুলনায় এবার টুর্নামেন্টের আকর্ষণ বেড়ে গেল বহুগুণ। তিনি যোগ করেন আমার দেশের তিনটি বড় দল থাকছে টুর্নামেন্টে। এর সঙ্গে যোগ হওয়া ভারতের তিনটি দলের লড়াই দেখতে উদগ্রীব থাকবেন দুই বাংলার ফুটবল পিপাসু মানুষ। তাছাড়া ভারতের তিন বড় ক্লাবের সঙ্গে খেলাটাও বিরাট ব্যাপার।
বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী ও চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ভারতের মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মোহামেডান। ৮ দলের টুর্নামেন্টের ৬ দলই এখন নিশ্চিত। অবশিষ্ট দুই দল আমরা থাইল্যান্ড, নেপাল ও মালদ্বীপ থেকে পেয়ে যাব অচিরেই। মোহাম্মদ রুহুল আমিন নিশ্চিত করেছেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মোহামেডানের মূল দলই অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশের গৌরবময় এই টুর্নামেন্টে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম আবাহনী আয়োজিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাবকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে সবার আগে খেলার সম্মতি জানিয়েছে ভারতের ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগান। কলকাতায় এই ক্লাব কর্মকর্তারা টুর্নামেন্টে খেলার বিষয়টি জানিয়ে চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এবং টুর্নামেন্টের স্পন্সর সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মোঃ রুহুল আমিনের কাছে। হাতে পেয়ে গেছেন কলকাতা মোহামেডানের সম্মতিপত্রও।
শুক্রবার মোহনবাগান ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে রুহুল আমিন নিশ্চিত করেন মোহনবাগান টুর্নামেন্টে খেলার লিখিত নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। গতকাল শনিবার আলোচনা হয় ভারতের অপর ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান ও ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাদের সঙ্গে। আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়ে তারাও খেলার সম্মতি জানিয়ে দিল। যদিও ক্লাবের নিজস্ব নিয়ম-কানুনের কারণে ইস্টবেঙ্গলের লিখিত সম্মতিপত্র মিলেনি।
তবে মৌখিকভাবে যেটুকু নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে তাতে ইস্টবেঙ্গল যে অংশ নিচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই, বলেন রুহুল আমিন।
রুহুল আমিন জানান, এবারের আসরের জন্য ভারতের দুই ক্লাবকেই পেতে আমরা আগ্রহী ছিলাম। কোন কারণে দুটি ক্লাবকে বাংলাদেশে আনতে না পারলে ঝুলে যেতে পারতো এবারের টুর্নামেন্ট। এখন তো আরও একটি বেশি পেয়ে গেলাম। ফলে আর কোন জটিলতা থাকল না। এখন আয়োজক কমিটির সভায় আমরা দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ফেলব। স্বাগতিক আবাহনীর পক্ষ থেকে তরফদার মোঃ রুহুল আমিন নিজে কলকাতা যান ভারতের ক্লাবগুলোকে খেলতে রাজি করানোর জন্য। রুহুল আমিন জানিয়েছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি টুর্নামেন্ট শুরু করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এখন সেটাই ঠিক রাখতে চাই।
টুর্নামেন্ট হবে ৮ ক্লাব নিয়ে। ভারতের তিন ক্লাব খেলার নিশ্চয়তা দেয়ায় ইতোমধ্যে ৬টি দল চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস, রানার্সআপ ঢাকা আবাহনী ও চট্টগ্রাম আবাহনী খেলবে স্থানীয় দল হিসেবে।
এবারের দলগুলো অংশগ্রহণ ফি বাবদ পাবে ১০ হাজার ইউএস ডলার করে। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৫০ হাজার ডলার। রানার্সআপ দলকে দেয়া হবে ৩০ হাজার ডলার।
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের সর্বশেষ আসর বসেছিল ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ। প্রথম টুর্নামেন্ট হয়েছিল ২০১৫ সালের ২০ থেকে ৩০ অক্টোবর। পরবর্তীতে বিদেশী ক্লাব আনতে একটু ঝামেলা হওয়ায় টুর্নামেন্টের সিডিউল ঠিক করতে পারেনি আয়োজকরা। এই টুর্নামেন্ট চট্টগ্রাম আবাহনীর জন্যই স্মরণীয় এক আয়োজন। কারণ ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফাইনালে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী ভারতের ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে পরাজিত করেছিল। তবে দ্বিতীয় আসরে তারা ফাইনালে উঠতে পারেনি। সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার এফসি পচেয়নের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায়। দ্বিতীয় আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস। ১২০ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে তারা ৪-২ গোলে হারায় দক্ষিণ কোরিয়ার এএফসি পচেয়নকে।
আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টে মোট আট দলের মধ্যে ৫টি বিদেশী দল নিয়ে এবারের আসরের পর্দা উন্মোচন করতে চায় আয়োজকরা। টুর্নামেন্টের আকর্ষণ বাড়াতে ভারতীয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, কলকাতা মোহামেডান ও মোহনবাগানকে আনতে পারা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখেন রুহুল আমিন। তার কথায় ভারতের জনপ্রিয় এই তিন ক্লাব থাকায় টুর্নামেন্টের আকর্ষণ, ইমেজ বেড়ে গেল এখন অনেক।