ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ১১ আগস্ট ২০১৯

 শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “...যদি বাঙালী হও নিঃশব্দে কাছে এসো, আরো কাছে/ যদি হও স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ তাহলে এখানে দাঁড়াও নতশিরে/ বাতাসে শুনতে পাবে স্বাধীনতার গান/ এখানেই শুয়ে আছেন অনন্ত আলোয় নক্ষত্রলোকে/ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/...কাঁদো বাংলার মানুষ কাঁদো/ প্রতিটি ভোর এখানে এসে দাঁড়ায় শ্রদ্ধায় নতশিরে/ রক্তিম আলোক মালায় বিনম্র করপুটে/ পুষ্পাঞ্জলী দিয়ে যায়।” গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে কবি রবীন্দ্র গোপ তার ‘অর্ধনমিত পতাকা’ নামক কবিতায় এভাবেই কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতিকে আবাহন করেছেন। বাঙালীর জীবনে শোকাহত ও অভিশপ্ত আগস্ট মাসের আজ এগারোতম দিন। সেই ভয়াল ও নিষ্ঠুরতম রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট যতই ঘনিয়ে আসছে ততই অসংখ্য শোকের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত করার দাবি শাণিত হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা। তার অমোঘ গর্জনে, নেতৃত্বে, দর্শনে, অঙ্গুলী হেলনে কোটি কোটি বাঙালীই একদিন নেমেছিল পথে, আন্দোলনে, সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে। সুশিক্ষিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা আছে তাই নিয়ে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিল। ত্রিশ লাখ মানুষ হাসতে হাসতে জীবন দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল মহার্ঘ স্বাধীনতা। একদিনে আসেনি বাঙালীর হাজার বছরের এই লালিত স্বপ্নের বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাঙালীর অধিকার আদায়ের সব সংগ্রামেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রথম সারিতে, অনন্য ভূমিকায়। তার ডাকেই সূচিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর বৈপ্লবিক নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালীর কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। তাই আগস্ট এলেই কাঁদে বাঙালী। বাঙালীর মন খারাপের মাস এটি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব। এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্ত, এ ঘর থেকে সে ঘর, সবখানে, সর্বত্র, সমানভাবে জুড়ে রয়েছেন তিনি আজও। শাহাদতের ৪৪ বছর পরও, আজও, আলোয়-উদ্ভাসনে, সঙ্কটে ও সম্ভাবনায়, বাঙালীর চিরমানসপটে চিরসমুজ্জ্বল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। কারণ, তিনিই তো বাঙালীর শত-সহস্র বছরের অবিস্মরণীয় এক রাজনৈতিক নেতা, বাঙালীর জাতির পিতা। শত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ঘৃণিত খুনীদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখনও বেশ ক’জন মৃত্যুদন্প্রাডপ্ত বঙ্গবন্ধুর খুনী বিদেশে পালিয়ে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। তাই এবারের জাতীয় শোক দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সোচ্চার দাবি-দ্রুত খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর এবং নেপথ্যের সকল ষড়যন্ত্রকারীর মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হোক।
×