ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এডিস নির্মূলে প্রত্যেক বাসায় এ্যারোসল দেবে ডিএসসিসি

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১১ আগস্ট ২০১৯

 এডিস নির্মূলে প্রত্যেক বাসায় এ্যারোসল দেবে ডিএসসিসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এডিস মশা নির্মূলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেছেন, আমরা ১ জুলাই থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজ শুরু করেছি। অনুমতি সাপেক্ষে আমরা এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফগিং মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ স্প্রে করব। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক বাসায় এ্যারোসল দিচ্ছি। শনিবার সেই কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হলো। শনিবার দুপুরে নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটরিয়ামে পৌর করদাতাদের মাঝে এ্যারোসল স্প্রে বিতরণ অনুষ্ঠানে মেয়র একথা বলেন। এ সময় সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিঃ জেনাঃ শরীফ আহমেদ, স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার। মেয়র বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই প্রাদুর্ভাব থেকে পরিত্রাণ দেবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। মানুষের ধারণা ফগিং মেশিন দিয়ে বেশি স্প্রে করলে নিয়ন্ত্রণে আসবে। বিষয়টি আসলে সঠিক না। বাইরে স্প্রে করে নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। যেহেতু এডিস মশা বাসা বাড়িতে জন্মায় তাই সবার আগে দরকার সচেতনতা। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন, সরকারী- বেসরকারী অফিস ভবনে এডিস মশা জন্মাতে পারে। নির্মাণাধীন ভবন, বাসার ছাদে, ফুলের টবে জন্মাতে পারে, তাই সবার আগে দরকার সচেতনতা। আমাদের টার্গেট সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে পারব। অতিদ্রুত নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। মেয়র বলেন, যেহেতু এডিস মশা বাড়িতে স্কুলে, জন্মাতে পারে। তাই আমরা চিন্তা করেছি প্রত্যেক বাসায় এ্যারোসল বিতরণ করব। এরইমধ্যে ৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ্যারোসল দেয়া হয়েছে এবং ৭৬৫টি মসজিদেও এ্যারোসল দেয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যেক পৌর করদাতার বাসায় এ্যারোসল পৌঁছে দেব। এ নিয়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার এ্যারোসল দেয়া হবে। পরে মেয়র পৌর করদাতাদের হাতে এ্যারোসল তুলে দিয়ে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। কর প্রদানের রশিদ দেখিয়ে করদাতাগণ এ্যারোসল গ্রহণ করেন। মেয়র বলেন, গত এক মাসে ৬২ হাজার ৯৬০ বাসার লার্ভা ধ্বংস করেছে ডিএসসিসি। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যখন থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে তখন থেকে বাসায় বাসায় এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ এবং ধ্বংসকরণ কার্যক্রম শুরু করে। সেই হিসেবে গত ১ জুলাই হতে এপর্যন্ত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬২টি বাসা পরিদর্শন করেছে ডিএসসিসি। এসব বাসার মধ্যে ৬২ হাজার ৯৬০টি বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, আমাদের টিম ও স্কাউটের সহায়তায় ৬২ হাজার ৯৬০টি বাসার এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। মেয়র বলেন, আমরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করতে পেরে গত ১ জুলাই থেকে বাসায় বাসায় পরিদর্শনে টিম পাঠাই। এরপর স্কাউটের সহায়তা নেয়া হয়। এপর্যন্ত ডিএসসিসি’র টিম ২৫ হাজার ৯৯৭টি বাসা পরিদর্শন করে ৮২৩টি বাসায় লার্ভা পায়, সেখানে তারা ধ্বংস করে দিয়ে আসে। এছাড়া স্কাউটের সহায়তায় ১ লাখ ১০ হাজার ৭৬৫টি বাসা পরিদর্শন করা হয়। সেখানে ৬২ হাজার ২৩৭টি বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং তা ধ্বংসে করে পরিষ্কার করা হয়। তিনি বলেন, আমরা কর্মপদ্ধতি ঠিক করেছি এডিস মশার উৎসস্থলেই নির্মূল করতে হবে। আমরা রিহ্যাবের সহযোগিতা চেয়েছিলাম নির্মাণাধীন ভবন পরিষ্কার রাখার জন্য। সেভাবে সহায়তা না পেয়ে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। সেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫৯০টি বাসায় জরিমানা করা হয়েছে। সাঈদ খোকন বলেন, আমরা যেভাবে কাজ করছি, আল্লাহর রহমতে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তহে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এজন্য তিনি দেশবাসীকে বিশেষ দোআ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নগরবাসী আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। জনসচেতনতা জনজাগরণ বা গণজাগরণে পরিণত হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। নগরবাসী ফলাফল দেখতে পাবেন। আমাদের নতুন ওষুধ স্প্রে করা শুরু হয়েছে। এরপর যদি দেখেন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে আসছে তাহলে বুঝবেন আমরা সঠিক পথে আছি। আর যদি না কমে তাহলে আমরা অন্য পন্থা অবলম্বন করব। তবে আশাকরি কমে আসবে। আর এই পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী সারা বছরই অব্যাহত থাকবে। যত দিন যাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। ঈদে যারা বাড়ি যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, সম্ভব হলে আপনারা বাড়িতে একজন আত্মীয় স্বজন রেখে যাবেন, না হয় কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন। যিনি বাসাটি পরিষ্কার রাখতে পারবেন। আর যদি একান্তই সম্ভব না হয় তাহলে আপনার বাসার ফুলের টব, বালতি, এসির পাত্রসহ সব পানি ফেলে পরিষ্কার করে যাবেন। নগরবাসীকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের জন্য ব্লিচিং পাউডার, পলিব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছে। সবাই নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করে বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের কন্টেনারে রেখে যান আমরা পরিষ্কার করে দেব।
×