ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পথে পথে ভোগান্তি ॥ ঢাকা টাঙ্গাইল সড়কে ৫০ কিমি যানজট

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ১১ আগস্ট ২০১৯

 পথে পথে ভোগান্তি ॥ ঢাকা  টাঙ্গাইল সড়কে ৫০  কিমি যানজট

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দুর্ভোগমুক্ত নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি ঠিক ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সড়কপথে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রচন্ড যানজটে দুর্ভোগ বেড়ে যায় ঘরমুখো মানুষের। তবে সিলেট খুলনা চট্টগ্রাম মহাসড়ক কার্যত যানজটমুক্তই বলা চলে। সড়ক ও রেলপথে এবার সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ উত্তরের যাত্রীদের। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৫০ কিমির বেশি যানজট হয় শনিবার। এ কারণে উত্তরাঞ্চল থেকে বাস ঢাকায় ফিরতে সময় লাগে। ফলে অগ্রিম টিকেটে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারেই অপেক্ষা করতে হয়। এদিকে ৬-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। ট্রেন বিলম্বে আসায় কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া সিডিউল ভেঙ্গে যাওয়ায় আজ রবিবারের ট্রেনের টিকেট ফেরত নিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফেরিঘাটগুলোতেও কমবেশি দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা নৌপথে গন্তব্যের যাত্রা শুরু করেছেন। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ইচ্ছেমতো লঞ্চ ছেড়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এসব নৌযান ছেড়ে গেলেও দেখার কেউ ছিল না। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের সড়ক মহাসড়কে যানজট নেই, ধীরগতি আছে। ফলে যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রশ্ন হলো প্রতিবছর ঈদের আগে নিরাপদ ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বেশ প্রস্তুতি থাকে। নৌ, সড়ক ও রেলপথের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক, আলাদা কমিটি গঠন, সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, উচ্ছেদ অভিযান সবই সুচারুরূপে করার চেষ্টা হয়। কিন্তু এটাও সত্য যে, ঈদ উৎসবের অন্তত দু’দিন আগে থেকেই সড়ক মহাসড়কসহ কোন পথেই কার্যত নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সবকিছু উলোট পালোট হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় ব্যাপক জনদুর্ভোগ। যাত্রী, পরিবহন সংশ্লিষ্টসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে এবার যানজটের কারণ হলোও কিছু রাস্তা ফোরলেন, কিছু দুইলেন। গাড়িগুলো চার লেন পেরিয়ে দুই লেনে যাওয়ামাত্রই বাড়ছে যানজট। প্রতিদিন এই রুটে ঈদ মৌসুমে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। ঈদের তিনদিন আগে থেকে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হয় না। সিটি সার্ভিসগুলোও চলাচল করে মহাসড়কে। আবার গাড়ি নষ্ট হওয়ায় বাড়ে যানজট। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানও মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে পশুবাহী অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিজসহ রেললাইন নষ্ট হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে আকস্মিক ট্রেন দুর্ঘটনায় সমস্যা আরও বাড়ে। অনেক এলাকায় লাইন ভাল না থাকা, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে সারাদেশে ট্রেনের সিডিউল লন্ডভন্ড হয়ে যায়, যা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। আর নৌপথে তদারকির অভাবে যাত্রীদুর্ভোগ বেড়েছে। সব প্রস্তুতি থাকলেও প্রয়োজনীয় তদারকি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অভাবেই এই সঙ্কট। সমস্যা হলে তা দ্রুত সমাধানের প্রস্তুতিও দুর্বল। এদিকে নাড়ির টানে ঘরে ফেরার ঢল দেখা গেছে শনিবার সকাল থেকেই। পায়ে পায়ে মানুষের স্রোত টার্মিনালমুখী। ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী। সোমবার ঈদ। তাই বসে থাকার সময় নেই। আজ রবিবার অনেকে রওনা দেবেন। আজকের মধ্যে একেবারেই ফাঁকা হবে যানজটের নগরী ঢাকা। ইতোমধ্যে শহরে গণপরিবহন বলতে তেমন একটা নেই। বেশি মানুষকে রিক্সায় চলাচল করতে দেখা গেছে। সিগন্যাল ছাড়াই চলছে যানবাহন। জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসে রাস্তায় গাড়ির চাপ তত বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবুও সম্মিলিত চেষ্টা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণে রাখার। তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রস্তুতি ও তদারকির অভাব আছে এটা সত্যি। এ বিষয়ে আমাদের আরও যত্নবান হওয়ার তাগিদ দেন তিনি। সড়কে যানজট নয়, আছে ধীরগতি ওবায়দুল কাদের ॥ ঈদযাত্রার প্রথম দুই দিনের তুলনায় শনিবারের পথ ‘কিছুটা স্বস্তিদায়ক’ বলে দাবি করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমার কাছে সড়ক-মহাসড়কে এখন পর্যন্ত যানজটের কোন তথ্য নেই। তবে ধীরগতি আছে। এ কারণে সময়মতো গাড়ি পৌঁছাতে পারছে না। তাই বিভিন্ন বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। শনিবার সকালে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ দেখতে মহাখালী বাস টার্মিনালে যান ওবায়দুল কাদের। সেখানে গিয়ে তিনি মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখেন। কথা বলেন যাত্রীদের সঙ্গেও। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে সকাল থেকে দীর্ঘ যানজট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলছেন, ওরকম কোন তথ্য তার কাছে নেই। তিনি বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত যানজটের কোন তথ্য নেই। যেটা আছে সেটা হচ্ছে ধীরগতি। এ কারণে গাড়ি সময়মতো পৌঁছতে পারছে না। যাত্রীরা টার্মিনালে বসে কষ্ট পাচ্ছেন। টাঙ্গাইলের পুলিশ জানায়, ঢাকা গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার গাড়ি এলেঙ্গা পর্যন্ত আসছে চার লেন দিয়ে। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে সড়ক দুই লেনের। ফলে সেখানে গাড়ির জট তৈরি হচ্ছে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৪ কিমি সড়কে এই সমস্যা প্রকট। এর প্রভাবে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের পাকুল্লা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিমি সড়কজুড়ে গাড়ি এগোতে পারছে না। উত্তর জনপদের দিকে যে সমস্যা সেটা রাস্তা নয়, সমস্যাটা হচ্ছে ঢাকা এলেঙ্গা মহাসড়ক থেকে চার লেনের রাস্তার গাড়িগুলো যখন টু লেনে ওঠে, তখনই সমস্যাটা সৃষ্টি হয়। রাস্তায় কোন সমস্যা নেই মন্তব্য করে কাদের বলেন, বেহাল সড়কের কারণে কোথাও কোথায় যানজট হয়েছে, এমন তথ্য আমার কাছে নেই। পরশু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া গেছে, এ কারণে অনেক গাড়ি আটকে ছিল সে প্রেসারটাও ওই রাস্তার ওপর দিয়ে গেছে। কোরবানির ঈদ। না চাইলেও পশুবাহী গাড়ির জন্য রাস্তায় গতি ধীর হয়ে যায়। ধীর গতির জন্য গাড়িগুলো আসতে দেরি হচ্ছে। এজন্য টার্মিনালে অনেক যাত্রী বসে কষ্ট পাচ্ছে। শনিবার ততটা দুর্ভোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘আজকে রাস্তার কোথাও দুর্ভোগ আছে এমন কোন ইনফরমেশন আমি কোথাও থেকে পাইনি। ঈদ মানুষকে ডেঙ্গুর আতঙ্ক ভুলিয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন কাদের বলেন, ঈদের আনন্দে মানুষ ডেঙ্গুর কথা ভুলে গেছে। এবার আমি টার্মিনালগুলোতে মানুষের চাপ বেশি দেখছি। বাঙালী জাতি ভয় করে না, ভয়কে জয় করতে জানে। এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান, সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, মহাখালী আন্তঃজেলা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কামাল, শ্রমিক নেতা ওসমান আলীসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। টাকা ফেরত নেয়ার হিড়িক ॥ এবারের ঈদ উপলক্ষে যারা ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কেটেছিলেন যাত্রা শুরু থেকেই সিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়। প্রতিদিন তা বাড়ছে। শনিবার একেবারেই মাত্রা ছাড়িয়ে লন্ডভন্ড সিডিউল। কোন কোন ট্রেন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এ নিয়ে যাত্রীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষিতে সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে কোন যাত্রী টিকেটের টাকা ফেরত চাইলে নিতে পারবেন বলে ঘোষণা দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে তা হবে আজ রবিবার থেকে। এক্ষেত্রে কোন টাকা কাটা হবে না বলেও স্টেশনে যাত্রীদের উদ্দেশে মাইকে এমন ঘোষণা দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে টিকেট ফেরত দিতে রীতিমতো হিড়িক পরে। ঈদের সময় অন্যতম শর্ত ছিল টিকেট হবে অফেরতযোগ্য। কিন্তু এবারেই প্রথম ভরাবহ সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে টিকেট ফিরত নেয়ার ঘোষণা দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সচিব বলেছেন, ‘শনিবারের ট্রেনগুলোতে এ সুযোগ দেয়ার সুযোগ নেই। আগামীকাল বরিবার ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রে এ সুযোগ দেয়া হবে। কেউ চাইলে তাকে অগ্রিম টিকেটের টাকা ফেরত দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সিডিউল বিপর্যয় রবিবার অনেকটা গুছিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। এরপরও কোন যাত্রী চাইলে টিকেট ফেরত দিয়ে টাকা নিতে পারবেন। রেল সচিবের এমন ঘোষণার পর কমলাপুর রেলস্টেশনের ১-৬ নম্বর কাউন্টারে অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত নেয়া শুরু হয়। এজন্য স্টেশনে মাইকিং ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। ট্রেনের সিডিউল উলোট পালোট ॥ রীতিমতো যুদ্ধ করেই ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন ঘরমুখো মানুষ। কে জানত এবারও কপালে দুর্ভোগ আছে। নিরাপদ ভ্রমণের চিন্তা থেকেই সবার প্রথম পছন্দ ট্রেন যাত্রা। কথায় আছে সব সুখ কপালে সয় না। তাই প্রতিদিনই ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় বাড়ছে। যা শনিবার ভোর থেকে মাত্রা ছাড়িয়েছে। এতে দুর্ভোগের কবলে পড়তে হয়েছে হাজার হাজার যাত্রীর। আবার কোন ট্রেন আসা মাত্রই এবার কমলাপুর থেকেই ছাদে ওঠে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন ঘরে ফেরা মানুষ। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে ঝুঁকি নিয়ে ওঠছেন। কমলাপুর রেলস্টেশনের তথ্য অনুযায়ী শনিবার দিনভর প্রায় সবক’টি ট্রেনই দেরিতে ছেড়েছে। উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের ৬-১০ ঘণ্টা পর ছেড়ে যায়। তবে রাজধানী থেকে কম দূরত্বের গন্তব্যের কয়েকটি ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশন সামান্য বিলম্বে ছাড়তে দেখা গেছে। গত শুক্রবার টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চলাচল প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এ ঘটনার প্রভাব পড়ে ওই রুট ব্যবহার করা সব ট্রেনে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সুন্দরবনের ওই দুর্ঘটনাই সূচী বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে যেসব ট্রেন যায়, তার সবগুলোই কম বেশি বিলম্বিত হচ্ছে। লালমনি এক্সপ্রেস কমলাপুর ছাড়ার কথা ছিল সকাল সোয়া ৯টায়, ছাড়ার কথা রাত সাড়ে ১০টায়। শনিবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনের ডিসপ্লেতে দেয়া ট্রেনের সিডিউল অনুযায়ী, রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটায় ঢাকা ছাড়ারা কথা। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও ৬ ঘণ্টা দেরি ছাড়বে। ট্রেন ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয় দুপুর সাড়ে ১২টা। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ৮ ঘণ্টা দেরিতে বিকেল ৪টায় ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয়। এছাড়া রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিলম্ব হবে উল্লেখ করা থাকলেও সম্ভাব্য সময় জানানো হয়নি। এটি সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্টেশনে আসেনি। জানা গেছে, আনুমানিক বিকেল ৫টায় ছেড়ে যেতে পারে। তবে এ সময়ও পরিবর্তন হতে পারে। পঞ্চগড়ের ট্রেন একতা এক্সপ্রেসের সূচী সকাল ১০টা থেকে বদলে ১১টা ২৫ এ রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ট্রেনটি ছেড়েছে আরও আধা ঘণ্টা দেরিতে। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ১০টার পরিবর্তে আধা ঘণ্টা দেরিতে গেছে বেলা ১১টায় ছেড়ে গেছে। পঞ্চগড়গামী একটি ট্রেন ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে দুপুর ১২টায়। রাজশাহী রুটে চলাচলকারী পদ্মা এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ছিল শুক্রবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে। সেটি শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কমলাপুর থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শনিবার রাত আটটায় পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছাড়ার কথা ছিল। এই ট্রেনের যাত্রী বিকেল চারটায় রেলের এ্যাপে গিয়ে ৭৫৭ নম্বরে ট্রেনের সর্বশেষ অবস্থান জানতে চান। ফিরতি এসএমএসে ট্রেনটি ১০ ঘণ্টা ১১ মিনিট ডিলে দেখানো হয়েছে। কমলাপুর স্টেশনে বসে যাত্রীদের অনেকই এভাবে ট্রেনের সর্বশেষ অবস্থান জানার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। যারাই জানার চেষ্টা করছেন তারাই রীতিমতো হতাশ হয়েছে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, আসলে শুক্রবার টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ কারণে দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। যে কারণে ট্রেনগুলোর সিডিউল ঠিক নেই। ঈদের আগে এটি ঠিক করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৫০ কিমি যানজট টাঙ্গাইল ॥ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে প্রায় ৫০ কিমি দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত থেমে থেমে দীর্ঘ এ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ জানায়, সিরগঞ্জের অংশে গাড়ি টানতে না পারায় এবং শনিবার কয়েক দফায় টোল বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। সরজমিনে দেখা যায়, শনিবার সকাল থেকেই গাড়ি রসুলপুর, রাবনা, ঘারিন্দা, নগর জলফে, করটিয়া, নাটিয়া পাড়া, পাকুল্লা ধল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি দীর্ঘলাইন চোখে পড়ে। রংপুরগামী যাত্রী মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা পর্যন্ত আসতে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লেগেছে। সকালে ২ ঘণ্টার বেশি সময় রাবনা বাইপাসে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দিনাজপুরের আব্দুল খালেক বলেন, এতেই যানজটের ভোগান্তি অপরদিকে প্রচন্ড গরম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। টাঙ্গাইলের এসপি সঞ্জিত রায় বলেন, আমাদের মিটিং এ বলা হয়েছিল ঈদের তিনদিন আগে ভারি যানবাহন ট্রাক, কাভারভ্যানসহ মডেল আউট কোন গাড়ি চলবে না। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এই ধরনের গাড়িই বেশি চলতেছে। এ ধরনের গাড়ি কিছু দূর যাওয়ার পর নষ্ট হয়ে যায়। পরে সেই গাড়ি ধাক্কা দিয়ে সড়ক থেকে সরাতে হয়। অপরদিকে সিরাজগেঞ্জর নকলা ব্রিজ, হাটিকামরুল ও কড্ডা মোড়ে গিয়ে গাড়িগুলো স্লো হয়ে যায়। ফলে পেছন দিক থেকে কোন গাড়ি আর সামনে যেতে না পারায় বঙ্গবন্ধু সেতু টোল বন্ধ হয়ে যায়। গত ৮ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ১২ বার টোল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একদিকে রাস্তা খারাপ অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জের হাটিকামরুল, নকলা ব্রিজ, কড্ডা মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের কারণে টাঙ্গাইলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এসপি আরও বলেন, মহাসড়কে প্রায় সাত শতাধিক পুলিশ কাজ করে যানবাহন ও মানুষের নিরাপত্তা দিচ্ছে। আশা করছি বিকেলের মধ্যে যানজট ছেড়ে যাবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এবার কোরবানির ঈদে একটু বেশি মানুষ বাড়ি ফিরছেন। এই মহাসড়কে দিনে প্রতিদিন প্রায় ৩০/৩৫ হাজার গাড়ি চলাচল করছে। এত গাড়ি পারাপারে মতো ক্যাপাসিটি সড়কের নাই। ফোর লেন থেকে গাড়ি যখন টু লেনে আসে তখন গাড়িগুলো খুব স্লো হয়ে যায়। ঈদ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও, এসিল্যান্ড, ম্যাজিস্ট্রেট টাঙ্গাইলের অংশে কাজ করে যাচ্ছে। অন্য ঈদের তুলনায় এ ঈদে একটু বেশি গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। সেগুলো তাৎক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে বিড়ম্বনা ॥ মাদারীপুর ॥ ঈদ যাত্রায় পথে পথে শত বিড়ম্বনার পরেও ঘরমুখো মানুষের চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দ্বিগুণ ভাড়া, পরিবহনের জন্য অপেক্ষা, টার্মিনাল থেকে দেরিতে ছাড়া, বাড়তি ভাড়া, পথে-পথে যানজটসহ শত বিড়ম্বনা সহ্য করে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা নদী পার হয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এলেই যেন স্বস্তি তাদের। ঘাটে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে চোখে-মুখে দেখা গেছে অপার আনন্দ। তারা বাড়িতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করবেন। ভাগাভাগি করবেন ভেতরে জমে থাকা আনন্দ। শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাঁঠালবাড়ি ঘাটে দেখা গেছে এ দৃশ্য। হাজার হাজার যাত্রী সকাল থেকে শিমুলিয়া ঘাট হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে নামছেন কাঁঠালবাড়ি ঘাটে। শিমুলিয়া ঘাটে জন স্রোত সামাল দিতে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে খালি ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট শিমুলিয়ায় পাঠানো হচ্ছে। ওই ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সব নৌযানে সর্বত্রই যাত্রী আর যাত্রী। এই সুযোগে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে নৌযানগুলোতে। ঢাকাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে নৌযানেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এখানেও নিস্তার নেই, কাঁঠালবাড়ি থেকেও পরিবহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। ঈদ যাত্রায় এত দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার পরেও তাদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দের হাসি। বরিশালগামী স্পিডবোটের যাত্রী মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘বাসে গুলিস্তান থেকে শিমুলিয়া আসতে ৭০ টাকার ভাড়া নিয়েছে ২শ’ টাকা, স্পিডবোটে পদ্মা পার হতে ১শ’ ২০ টাকার ভাড়া নিয়েছে ২শ’ টাকা। এখন বাড়ি যেতে বাসে কত টাকা নেয় জানি না। ভাড়া যাই হোক একটা সিট পেলেই হলো। বাড়িতে সবার সঙ্গে ঈদ করার জমাটাই আলাদা।’
×