ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বইয়ের সঙ্গে কাটুক ঈদ আনন্দের অবসর

প্রকাশিত: ১০:২২, ১১ আগস্ট ২০১৯

 বইয়ের সঙ্গে কাটুক ঈদ আনন্দের অবসর

মনোয়ার হোসেন ॥ উৎসব মানেই অখন্ড অবসর। ভাবনাহীন সেই অবসরটা রাঙাতে চাই নানা অনুষঙ্গ। গান শোনা, সিনেমা দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা কিংবা ঘুরে বেড়ান- এমন নানা অনুষঙ্গে কাটতে পারে সুন্দরতম সময়। এসবের বাইরে কেউবা আবার কর্মহীন সময় কাটিয়ে দেন বইয়ের পাতায় চোখ রেখে। মনটা নিবিষ্ট হয় গল্প-উপন্যাসের কাহিনীর গভীরে অথবা কবিতার ছন্দে। সৃজনশীল বইয়ের পাশাপাশি ইতিহাস, রাজনীতি, পরিবেশ-প্রকৃতিসহ বহুমাত্রিক গবেষণাধর্মী মননশীল বইয়ের প্রতিও থাকে কারও বিশেষ আগ্রহ। সেসব পাঠকের কাছে ঈদ আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ধরা দেয় বই। অনেকে আবার নিজে পড়ার পাশাপাশি অন্যকেও বই উপহার দিয়ে রাঙিয়ে তোলেন উৎসব। সেই সূত্রে সম্প্রতি ঈদ আয়োজনে পোশাকসহ নানা উপহারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বই। ধীরে ধীরে বাড়ছে বই পড়া ও উপহার দেয়ার প্রবণতাটি। এবার ঈদ-উল-আজহাতেও বই পড়া ও উপহার দেয়ার সেই সংস্কৃতিটি দৃশ্যমান হচ্ছে। আর সারাবছর যারা বই পড়েন ঈদের অবসরের সময় কাটাতে তারা সংগ্রহ করেন না পড়া বইটি। কমবেশি সারাবছর বইয়ের সঙ্গে সময় কাটে ওয়ারীর বাসিন্দা শামীম শাহেদের। গল্প-কবিতা থেকে উপন্যাস বা প্রবন্ধ-বিচিত্র বিষয়ের গ্রন্থের প্রতি তার তুমুল আগ্রহ। বেসরকারী এই চাকরিজীবী জনকণ্ঠকে বলেন, সাধারণত উৎসবের ছুটিটা লম্বা হলে সময়টা উদযাপন করি ঢাকার বাইরে ঘুরে বেড়িয়ে। সুযোগের অভাবে সেটি না হলে বইয়ের মাঝে খুঁজে নেই বিনোদনের উৎস। এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকায় ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছি। বোনাসের টাকা থেকে কিছুটা খরচ করে কিনেছি বেশ কিছু বই। ঈদের পর বেশ লম্বা সময় ছুটি পেয়েছি অফিস থেকে। প্রথম দু’দিন আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব। এরপর বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেব বই পড়ে। ত্ছাাড়া বই পড়ার জন্য সব এমন কর্মহীন অবসর মেলে না। সেই অবসরের সদ্ব্যবহার করব। এই সময়টায় বইয়ের সঙ্গে হবে বন্ধুত্ব। উৎসবে বই পড়া ও উপহার দেয়ার সংস্কৃতি বাড়ছে। সেই সংস্কৃতির অন্যতম উদাহরণ হিসেবে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক বিক্রিত বই নিয়ে ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে চলছে বিশেষ বইমেলা। রাজধানীর কাটাবনের কনকর্ড মার্কেটে ২ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে ‘বেস্টসেলার বই উৎসব’ শিরোনামের এ মেলা। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিচিত্র বিষয়ের বই এখানে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। মেলায় অংশ নেয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অনন্যা, অনুপম প্রকাশনী, কাকলী প্রকাশনী, সন্দেশ, পার্ল পাবলিকেশন্স, অনিন্দ্য প্রকাশ, চারুলিপি প্রকাশন, নালন্দা, ভাষাচিত্র, বাংলানামা, নওরোজ কিতাবিস্তান, শব্দশৈলী, মুক্তদেশ প্রকাশন, আদর্শ, আফসার ব্রাদার্স, মম প্রকাশ, পাললিক সৌরভ, এশিয়া পাবলিকেশন্স, অক্ষর প্রকাশনী, বিভাস ইত্যাদি। এ উৎসবে অংশ নেয়া অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, ১৫ বছর আগেও বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ সংখ্যা সংগ্রহের সঙ্গে নতুন বই কেনা এবং অন্যকে উপহার দেয়ার রীতিটির প্রচলন ছিল। মাঝে সেটি হারিয়ে গেলেও আবার উৎসবে-পার্বণে বইয়ের প্রতি একটা বিশেষ শ্রেণীর পৃথক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এটা দেশের সামগ্রিক সংস্কৃতির জন্য শুভ লক্ষণ। সেই চিন্তা থেকেই ঈদ আয়োজনে উপহার হিসেবে বইকে জনপ্রিয় করার একটি উদ্যোগ বেস্টসেলার বই উৎসব। এখন অনেক মানুষের কাছেই বিনোদনের বিশেষ অনুষঙ্গ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বই। সেসব পাঠকদের বেশ সাড়া মিলছে এই মেলায়। একইসঙ্গে বেস্টসেলার বইগুলোকে আরও বেশি পাঠকের হাতে তুলে দেবার জন্য সর্বোচ্চ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই মেলায়। এ মেলা চলবে আজ রবিবার ১০ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া বইমেলায় পাঠকের জন্য রয়েছে শুভেচ্ছা উপহার। ঈদে বই পড়া ও উপহার দেয়ার রীতিকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রখ্যাত কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন বলেন, শুধু প্রকাশনা শিল্প নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতিতে অনেক আশা জাগানিয়া একটি বিষয়। ইন্টারনেটে সময় ব্যয় করা, সিনেমা দেখা বা ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বই পড়ে মানুষ উৎসবের আনন্দ উপভোগ করছে- এটা খুবই ইতিবাচক। শিশু-কিশোর থেকে প্রবীণ-সবার মাঝেই ছড়িয়ে যাক উৎসবে বই পড়ার এই প্রবণতা। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি এবং সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, আসলে সব সময় মানুষ বই পড়ুক এবং অন্যকে উপহার দিক- আমরা এই প্রচার চালিয়েছি। বর্তমানে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে কিছু মানুষ নির্মল আনন্দের উৎস হিসেবে সঙ্গী করে নিচ্ছে বইকে। এছাড়া পোশাকসহ নানা কিছুর সঙ্গে উপহারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বই। এই প্রবণতা যতবেশি বাড়বে আমরা তত বেশি সহজ হবে মানবিক সমাজ গড়ার প্রক্রিয়া।
×