ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীরের দশ জেলা থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নিল ভারত

প্রকাশিত: ১০:২০, ১১ আগস্ট ২০১৯

 কাশ্মীরের দশ জেলা  থেকে ১৪৪ ধারা  তুলে নিল ভারত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার জেরে শুক্রবার পাকিস্তান এর এক্সপ্রেস ও দিল্লী-লাহোর বাস পরিসেবা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করল। বৃহস্পতিবারই তারা বন্ধ করেছিল সমঝোতা এক্সপ্রেস। এদিকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পক্ষ নিল রাশিয়া। এছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চলের ১০টি জেলার মধ্যে পাঁচটি জেলা থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেয়া হয়েছে। দোদা ও কিশতওয়ার জেলায় বিধি নিষেধ শিথিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ইন্ডিয়া টাইমস, এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছে, শনিবার জম্মু বিভাগের জম্মু, কাঠুয়া, সাম্বা, উদমপুর ও রেয়াসি জেলা থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেয়া হয়েছে। এদিন জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল এবং সরকারী দফতরগুলোতেও উপস্থিতির হার বেড়েছে । চারদিন পর জম্মু বিভাগের ওই জেলাগুলো থেকে কার্ফু তুলে নেয়া হয়। এরপরই বাজার ও দোকানপাট খুললে প্রয়োজনীয় রসদ কিনতে লোকজন সেখানে ভিড় করে। জম্মু ও শ্রীনগরে শুক্রবারের জুমার নামাজ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। অপর পাঁচটি জেলা থেকে কার্ফু তুলে নেয়া হলেও পুঞ্চ, রাজৌরি ও রামবান জেলায় কার্ফু বহাল আছে। কাশ্মীর ইস্যুতে কোন মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীরের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন তৃতীয় পক্ষের নাক গলানোকে একেবারেই পছন্দ করবে না, তাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়। জম্মু-কাশ্মীরের থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়া ও তাকে ভেঙ্গে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করল রাশিয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সংবিধানের মধ্যে থেকেই এই পদক্ষেপ করেছে বলে জানিয়ে দিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। কাশ্মীর ইস্যুতে ক্রমশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কার পর এবার রাশিয়াও জানিয়ে দিল যে এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এখানে আপত্তি জানানোর মতো কিছু নেই বলে জানিয়েছে রাশিয়া। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লাভরভ জানান যে, মস্কো চায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় থাকুক। কাশ্মীর নিয়ে যে নয়া পদক্ষেপ করা হয়েছে, তার জেরে কোন পক্ষই যাতে আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত না নেয়, সে বিষয়টির ওপরেও জোর দিয়েছে রাশিয়া। পাকিস্তান যতই একঘরে হয়ে যাচ্ছে ততই তারা জিহাদী মনোভাবের কথা জানাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে থর এক্সপ্রেস ও দিল্লী-লাহোর বাস পরিষেবা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করল। পাক রেলমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ জানিয়েছেন, পাকিস্তানের খোকরাপার ও রাজস্থানের বারমেরের মুনাবাওয়ের মধ্যে চলা সাপ্তাহিক ট্রেন সার্ভিস থর এক্সপ্রেস বন্ধ করে দেয়া হলো। যতদিন আমি রেলমন্ত্রী রয়েছি, ততদিন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কোন ট্রেন চলবে না। তার আগে ১৯৭৬ সাল থেকে লাহোর ও দিল্লীর মধ্যে চলা সমঝোতা এক্সপ্রেস বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। দিল্লী-লাহোর বাস পরিষেবা বন্ধের কথা ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের যোগাযোগ ও ডাক পরিষেবা মন্ত্রী মুরাদ সইদ। শুধুমাত্র রেল পরিষেবা নয়, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পর ভারতের সঙ্গে সব রকমের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। ইতোমধ্যেই সেখানকার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের কোন ছবি বা থিয়েটার পাকিস্তানে দেখানো হবে না। এমনকি, ভারতীয় শিল্পীদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রেও অনেক কড়াকড়ি করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও মুনাবাও-খোকরাপার সীমান্ত দিয়ে রাজস্থানের যোধপুর থেকে করাচি পর্যন্ত যাতায়াত করত থর এক্সপ্রেস। সমঝোতা এক্সপ্রেসে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন দুয়ের অনুমতি থাকলেও থর এক্সপ্রেসে শুধুই যাত্রী পরিবহন চলত। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় এই ট্রেন লাইন কার্যত ধ্বংস হয়ে যায়। তার প্রায় ৪১ বছর পর ২০০৬ সালে ফের এই লাইনে শুরু হয় ট্রেন যোগাযোগ। কাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপে রাশিয়ার সমর্থন ॥ বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও কাশ্মীরকে দুটি আলাদা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ভাগ করার ভারতীয় সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো জানিয়েছে, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লী। একই সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। গত সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি বিলও অনুমোদন করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানকার শতাধিক স্থানীয় নেতাকে। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। এই ঘটনার জেরে ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে পাকিস্তান। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কো আশা করে ভারত ও পাকিস্তান কেউই জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিকে আরও খারাপ হতে দেবে না। ভারত সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে দিল্লীর সিদ্ধান্তে সেখানে নতুন করে কোন উত্তেজনা দুই পক্ষ সৃষ্টি হতে দেবে না বলে আশা প্রকাশ করে মস্কো।
×