ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইটি খাতে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়তে সহায়তা দেবে এডিবি

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১১ আগস্ট ২০১৯

  আইটি খাতে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়তে সহায়তা দেবে এডিবি

ফিরোজ মান্না ॥ ডিজিটাল ইকোনমি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত এভিবিয় কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মধ্যে এক সাম্প্রতিক বৈঠকে এ আশ্বাস দেয়া হয়। বৈঠকে দেশের আইসিটি সেক্টরে ইকোসিস্টেম ডেভেলপের জন্য প্রকল্প গ্রহণ, তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি সরকারের সার্ভিসগুলোকে একক ডিজিটাল প্লাটফর্মে আনা ও হাইটেক পার্কসহ আইসিটি খাতে এডিবির সহায়তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় আইসিটি সেক্টরে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, এবারের বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক শ’ কোটি টাকার তহবিল গঠনসহ আইসিটি খাতের উন্নয়নে বর্তমান সরকার গৃহীত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন কর্মসূচীর বিষয়ে কান্ট্রি ডিরেক্টরকে অবহিত করা হয়েছে। এডিবি বাংলাদেশের উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী দিনেও আইসিটিসহ বিভিন্ন খাতে আরও বর্ধিত সহযোগিতা দিতে চায়। এডিবি আইসিটি খাতে সহযোগিতা দিলে খাতটি আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে বলেন মনে করেন প্রতিমন্ত্রী। গত ১২ বছরে দেশ আইসিটি খাতের সাফল্য বহুলাংশে এগিয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এখন উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি চলছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার আইসিটি সেক্টরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আগামী দিনে এই সেক্টর হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। ইতোমধ্যেই যুবসমাজকে প্রস্তুত করা হয়েছে । তারা সফটওয়্যারসহ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড় বড় অবদান রেখে যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে বহু তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আইটি বিশেষজ্ঞ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের যে কোন দেশের পাশাপাশি চলতে পারছে। এই সেক্টরে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়ছে। সরকার বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। আইসিটি পার্কগুলোতে ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী বহু কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান উৎপাদনেও গেছে। দেশী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ বহু দেশ থেকে সফটওয়্যার কিনছে। ’২১ সালের মধ্যে দেশ আইসিটি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আমরা সেই টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছি, জানান প্রতিমন্ত্রী। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরও বলেন, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিগত ১০ বছরে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরও এগোবে। আইটিসহ বিভিন্নখাতে ভবিষ্যতেও এডিবির সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এডিবি বাংলাদেশের যে কোন উন্নয়নেই অংশ নিতে আগ্রহী। আইসিটি খাতে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এই খাত থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে দেশের তরুণ তরুণীরা। এই অগ্রযাত্রা আরও গতিশীল করতে পাশে থাকবে এডিবি। প্রতিমন্ত্রী পলক এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টরকে বলেন, শুধু আইসিটি খাতের উন্নয়ন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমরা এই খাতকে নিরাপদও রাখতে চাই। সাইবার অপরাধ থেকে মানুষ ও সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে রাষ্ট্রও নিরাপদ থাকবে না। অপপ্রচার ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সরকার ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল’ গঠন করছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ও সাইবার ইনসিডেন্ট এক্সপার্ট টিমও গঠন করা হবে। অর্থাৎ সাইবার সিকিউরিটি তৈরির কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও এটা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন এ কাজটিও শেষ করা হয়েছে। সূত্র মতে, প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে জঙ্গীবাদ ও অপপ্রচারকারীদের প্রতিরোধ করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের অনেক নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। কেউ যাতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে অপপ্রচার ও জঙ্গীবাদে উস্কানি দিতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী নজরদারির মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিলের বিষয়টি শীঘ্রই মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। মন্ত্রিসভার অনুমতি পাওয়ার পরই ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠনের কাজ শেষ। সাইবার অপরাধ দমন ও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ ও সমন্বয় করে কাজ করার সার্বিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাইবার অপরাধের ওপর নজরদারি জোরদার, সংঘটিত ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করে বিটিআরসি। ওই প্রস্তাবে অপরাধ দমন সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও দফতরের সমন্বয়ে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের কাজ চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানায়, সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন দফতর এবং নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিজস্ব অধিক্ষেত্র অনুসারে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করে আসছে। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে বিটিআরসি’র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে।
×