ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জোড়া মাথা দুই শিশুর মস্তিষ্কের জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১১ আগস্ট ২০১৯

 জোড়া মাথা দুই  শিশুর মস্তিষ্কের জটিল অস্ত্রোপচারে  সাফল্য

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি জোড়া লাগানো মাথার শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার অপারেশন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকায় সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর শনিবার ঢাকা সিএমএইচে কমান্ড্যান্ট কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খবর আইএসপিআর সংবাদ সম্মেলনে এমপি ডাঃ হাবিব ই মিল্লাত, মেজর জেনারেল মোঃ ফসিউর রহমান, কমান্ড্যান্ট, সিএমএইচ ঢাকা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী, শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্তলাল সেন, এ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল-এর ডাঃ গ্রেগ পাটাকি (প্লাস্টিক সার্জন), ডাঃ এন্ড্র চোকে (নিউরোসার্জন), ডাঃ মার্সেল (পেডিয়াট্রিকস ইনটেন্সিভিস্ট) এবং রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা ও মা। তারা এ সংবাদ সম্মেলনে রাবেয়া-রোকেয়ার সফল অপারেশন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। পাবনার চাটমোহরে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মানব সন্তান বিগত ১৬ জুলাই ২০১৬ সালে। যাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ঈৎধহরড়ঢ়ধমঁং ঃরিহংু’ কনজয়েন্ট টুইন অথবা মাথা জোড়া লাগানো যমজ বাচ্চা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। ২.৫ মিলিয়ন জীবিত জমজ বাচ্চাদের মধ্যে মাত্র একটি মাথা জোড়া লাগানো বাচ্চা জন্ম নেয়। প্রায় ৪০% মাথা জোড়া লাগানো শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নেয় এবং আরও এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। তবে শতকরা ২৫ ভাগ শিশু বেঁচে থাকে জমজ মাথা নিয়ে যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করবার সুযোগ থাকে। এটি একটি বিরল ধরনের অপারেশন। সারাবিশ্বেই খুব অল্প পরিমাণে হয়েছে। সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়। পাবনার একটি ক্লিনিকে শিক্ষক দম্পতির জন্ম নেয়া এই দুই শিশু এবং তার পিতা-মাতাকে জন্মের পরই পেতে হয়েছিল সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্নতার পরিচয়। প্রধানমন্ত্রীকে তারা পত্র লিখেন এবং প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের আনা হয়। এখানে ডাঃ হাবিব ই মিল্লাত এবং ডাঃ সামন্তলাল সেন সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। হাঙ্গেরির এ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল-এর ডাঃ গ্রেগ পাটাকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে হাঙ্গেরির জনগণের পক্ষ থেকে এদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জটিল এই শল্য চিকিৎসা করা সম্ভব বলে মত দেন। এই শল্য চিকিৎসা কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং ৪ জানুয়ারি থেকে হাঙ্গেরিতে ৪৮ ছোট বড় সার্জারি সম্পন্ন হবার পর ২২ জুলাই রাবেয়া এবং রোকেয়ার অপারেশনের সবচেয়ে জটিল অংশ ‘জোড়া লাগানো মস্তিষ্ক’ আলাদাকরণের কাজ সম্পন্নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হাঙ্গেরি থেকে তাদের ঢাকা সিএমএইচ-এ নিয়ে আসা হয়। সেনাপ্রধান সমস্ত সহযোগিতার জন্য ডিজিএমএসকে বিস্তারিত নির্দেশনা দেন। বিগত ১ আগস্ট জটিল অপারেশনটি শুরু হয়ে ৩৩ ঘণ্টাব্যাপী চলে এবং ২ আগস্ট সকালে শেষ হয়। এই অস্ত্রোপচারে হাঙ্গেরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সিএমএইচ-এর নিউরো এ্যানেসথেসিওলজিস্টদের তত্ত্বাবধানে নিউরো ও প্লাস্টিক সার্জনগণ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের প্রায় শতাধিক সার্জন ও এ্যানেসথেসিওলজিস্ট এই জটিল অপারেশনে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে তারা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকার পোস্ট এ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিটে অবস্থান করছে এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং শিশু হাসপাতালের নিউরো ইনটেনসিভিস্টদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আজ তাদের পৃথকীকরণের ৮ম দিন শেষ হচ্ছে। এ ধরনের অপারেশন অত্যন্ত জটিল, সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়। অপারেশনের পর এখানে তারা কিছু ঝুঁকি সত্ত্বেও স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার এ ধরনের অস্ত্রোপচারে পরবর্তী ঝুঁকি এবং জটিলতা অত্যন্ত বেশি। উল্লেখ্য, রাবেয়া রোকেয়ার আরও একটি অস্ত্রোপচার (ক্রেনিও প্লাস্টি) নির্ধারিত রয়েছে ২/৩ মাস পর। আমরা মনে করি, এ ধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। যে অন্ধকার অমানিসার মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতি পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় হাঙ্গেরির এ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল-এর সহায়তায় তারা অপার সম্ভাবনা দেখতে পারছে।
×