ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্রেতাদের মুখে হাসি, সন্তুষ্ট ক্রেতারাও

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১১ আগস্ট ২০১৯

 বিক্রেতাদের মুখে  হাসি, সন্তুষ্ট ক্রেতারাও

ওয়াজেদ হীরা ॥ আগামীকাল সোমবার মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। ধর্মপ্রাণ স্বচ্ছল মুসলমানরা ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। ইতোমধ্যেই অনেকেই কিনে নিয়েছেন পছন্দের কোরবানির পশু। যারা এখনও কিনেননি তারা ছুটছেন হাটে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই এখন হাটে পশুর মূল্য নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার দর কষাকষি চলছে। জমজমাট বিক্রিতে বিক্রেতাদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক! আগেভাগে পছন্দের পশু কিনে সন্তুষ্টির সুর ক্রেতাদের মুখেও। বিভিন্ন গড়নের গরু থাকলে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি আকারের বেশি। গত কয়েকদিনের বিক্রিতে দেখা গেছে বড় সাইজের গরু এবং ছোট গরু কম বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি গরুতেই সাধ্যের মধ্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। বড় গরুগুলো আজ শেষ দিনে বেশি বিক্রি হবে এমন প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতাসহ হাট ইজারাদাররা। নাড়ির টানে রাজধানীর কর্মজীবী মানুষ ফিরছেন বাড়ি। ঢাকা এখন ফাঁকা। ফাঁকা রাস্তায় চারজন মিলে গরুর রশি ধরে বছিলা হাট থেকে ফার্মগেট ফিরছিলেন ওয়াসিম জামান। কোরবানির পশু কেনার ঝক্কি এড়াতে পেরে মনের আনন্দটা একটু বেশি তার। ওয়াসিম জামানের মতো সংসদের সামনের রাস্তা দিয়ে দেখা গেল গরু টানাটানির দৃশ্য। হঠাৎ কোন গাড়ি আসলেই যেন গরু দৌঁড় দিতে চায়। আর যারা গরুর রশি ধরে আছেন সবাই আরে শক্ত করেন হাতের মুঠি। বিভিন্ন রঙের কাপড় বা মালা দিয়েও পছন্দের গরু নিয়ে ফিরতে দেখা গেছে। এছাড়াও রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে নির্দিষ্ট জায়গায় সঙ্কুুলান না হওয়ার কারণে আশপাশের রাস্তায় পশু রাখার দৃশ্যও দেখা গেছে। যদিও চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে তবে তাতে কোন মনোযোগ নেই ক্রেতা বিক্রেতার। উভয়ই পশুর মূল্য নিয়ে হাকডাকে ব্যস্ত। শনিবার তেজগাঁওয়ের হাটে দেখা যায় গরুর সঙ্কুুলান না হওয়ার কারণে আশপাশের রাস্তার ওপরে গরু বিক্রি হচ্ছে। মেরাদিয়া, শনিরআখড়া, কমলাপুরের হাটের চিত্রও অভিন্ন। তেজগাঁওয়ের হাটে গরু কিনে বের হচ্ছিলেন শাফায়াত উল্লাহ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, একটু বেশি দাম দিলে ভাল গরু পাওয়া যায়। টাকার অঙ্কে বিশ হাজার এদিক সেদিক। গরু হলেই সেটি ৫০ হাজারের নিচে পাবেন না। আবার আরও ১৫-২০ হাজার বেশি বাজেট করলেই মাঝারি সাইজের ভাল গরু পাবেন। হাট থেকে বের হওয়া কমপক্ষে অর্ধশত গরুর ক্রেতার গরুর দাম নিয়ে জানা গেছে অধিকাংশ গরু ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যেই। তবে এক লাখ টাকার ওপরে যারা গরু কিনেছেন তাদের গরুগুলো একটু বড় দেখা যায়। ৪০ হাজার টাকার নিচে কোন গরু বিক্রি বা কিনতে দেখা যায়নি। কেননা একেবারে ছোট গরুগুলোও বিক্রি হচ্ছে ৫০ বা এর কাছাকাছি। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, গতবছরের মতো এবারও মাঝারি গরুর বেশি টান রয়েছে। তবে গতবছর ছোট গরুর প্রতিও বেশ আকর্ষণ ছিল ক্রেতাদের। সাধ্যের সঙ্গে তাল মেলাতে গতবার অনেকেই ছোট গরুর প্রতি ঝুঁকেছিল। অথচ এবার ছোট গরুর চেয়ে একটু বেশি টাকা বাড়িয়ে কিনলে দেখতে ভাল গরু মিলছে বলে ক্রেতারাও এখন মাঝারি সাইজের গরুতেই ঝুঁকেছেন। হাটের পরিচালক ফারুক বলেন, এখন পর্যন্ত মধ্যম সাইজের গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। রবিবার রাতে বড় গরুগুলো বিক্রি হবে আশা করা যায়। হাটে আসা খুলনার ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া বলেন, আমার ৭টি গরুর ৬টি বিক্রি শেষ একটি রয়ে গেছে। এটি একটু বেশি বড়। দাম চাচ্ছেন দুই লাখ টাকা। ক্রেতারা ১ লাখ ত্রিশ হাজার পর্যন্ত বলেছেন। অথচ অন্য ৬টি গরু ৭০-১ লাখের মধ্যে বিক্রি করতে পেরেছেন বলেও জানান। এটি শেষ পর্যন্ত বিক্রি হবে সে প্রত্যাশা আছেন। পাশেই খুলনার সহযোগী ব্যবসায়ী শনিবার পর্যন্ত ৪টি বড় গরুর একটিও বিক্রি হয়নি। সবাই দাম বলছেন বলে জানালেন। অনেকটা গম্ভীর স্বরে বলেন, ‘ক্রেতারা এমন দাম বলে যা আসলে রাগও করতে পারি না’। হামিদুজ্জামান বেসরকারী চাকরিজীবী। ঢাকায় পশু কোরবানি দেন প্রতিবছরই। তিনি ৮২ হাজার টাকায় দুই হাট ঘুরে পেয়েছেন পছন্দের পশু। তিনি বলেন, আফতাবনগর হাটে একটি পছন্দ হলো সেটি ৬০ হাজারের নিচে দিল না। অথচ দেখতে বাছুর গরুর মতো লাগে। আমার ছেলে জোর করে কমলাপুর আনল। এখানে কয়েকটি গরু দেখে যা কিনেছি তা আগের গরুর দুই ডাবল বড় মনে হচ্ছে। রাজধানীর কয়েকটি হাটের ব্যবসায়ীরাও বলছেন ছোট গরু আর মাঝারি গরুর সঙ্গে দামের পার্থ্যকটা খুব বেশি হচ্ছে না এবার। ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে পার্থক্যটা। আর বড় গরুর ক্রেতারা এখনও বাজারে আসেনি বলেও মনে করছেন। তবে শেষদিন হিসেবে আজ বড় গরুও বেশ বিক্রি হবে এমন আশা করছেন। শনিরআখড়া হাটে কয়েকজন ব্যবসায়ীরা বলেন, গরু এমনিতেও ঢাকার মানুষ আগে কিনতে চায় না। এবার অনেকেই আগেই কিনছেন। আর যারা বড় গরু কিনবেন কয়েক লাখ টাকার গরুর যত্ন বা পালন করা আরও কষ্ট সে কারণে শেষ দিনেই বিক্রি হবে। অন্যান্য বছরও শেষের দিকেই বড় গরু বিক্রি হয় দেখেছি। মনের মতো মাঝারি সাইজের গরু কিনতে চাইলে ক্রেতাদের ৭০ হাজার টাকার ওপরে চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জুলহাস নামের কুষ্টিয়ার খামারি বলেন, গরু লালন পালনে অনেক খরচ। সে হিসেব খুব একটা দাম বিক্রেতারা পাচ্ছে সেটিও বলা যাবে না। তবে মোটামুটি গরুর বাজার সহনশীল। না বিক্রেতাদের বেশি লাভ হচ্ছে, না ক্রেতারা বেশি ঠকে যাচ্ছে। আপনি পছন্দের একটি মাঝারি সাইজের গরু কিনতে গেলে অবশ্য কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা বাজেট করবেন যে কোন হাটেই পাবেন বলেন তিনি। কয়েক হাট ঘুরে পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, মাঝারি সাইজের গরু থেকে আরও একটু ওপরে যদি যেতে চায় ক্রেতাদের আরও ভাল গরু মিলবে। এক লাখ টাকার ওপরে যে সকল গরু পাওয়া যায় তা বেশ বড় সাইজের গরু। এক বিক্রেতা বলেন, ৮০-৮৫ হাজার টাকায় যে গরুটি পাচ্ছেন মাংসের হিসেবে কমপক্ষে সেটি ৪ মণ হবে। অথচ লাখ টাকার ওপরে গেলে গরুটির মাংস হবে কমপক্ষে ৬ মণ। ক্রেতাদের এক্ষেত্রে একটু বড় গরু অবশ্যই ভাল তবে সবাই নিজের হিসেবের মধ্যেই থাকতে চায়। বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রিফাত বাবার সঙ্গে গরু কিনতে হাটে আসেন। রিফাত বলেন, আমার কাছে এত গরু দেখে মনে হলো মাঝারি গরুর চাহিদাও বেশ, বিক্রিও বেশি। ছোট গরু দেখতে বেশি ছোট লাগে আবার এক লাখ টাকার ওপরে আমরা মধ্যবিত্তদের মতো অনেকের সাধ্য নেই। ক্রেতাদের গরুর দাম নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও হাটে হাটে জমজমাট বিক্রি দেখা গেছে। সকাল থেকে মধ্যরাত এমনকি শেষ রাতেও হচ্ছে সমানতালে বেচাকেনা। কয়েকটি হাটের ইজারাদার বলেছেন, রাজধানীতে ঈদের দিনও গরু বিক্রি হয়। আগামীকাল সোমবার ঈদের দিনও অনেক বিক্রি হবে এমন আশা রয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজধানীর অনেক ক্রেতাই নিজেদের পছন্দের পশু কিনে ফেলেছেন। গরুর পাশাপাশি ছাগল খাসির বাজারও চাঙ্গা। তবে খাসির দাম নিয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে। যে কোন ছোট খাসিও দশ হাজারের নিচে হয়। দু’একটা ছাগল পাওয়া যেতে পারে এই দামে। শুধু তাই নয় বড় খাসি লাখ টাকার ওপরে গুণতে হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট থেকে যারা পশু কিনে ফিরছেন তাদের সারাপথই বলতে হচ্ছে পশুর দাম। ভাই কত ? দাম কত ? কত নিলো ভাই? এই ধরনের প্রশ্ন বাসা ফেরার আগ পর্যন্তই। যদিও ক্রেতারা বিরক্ত নয় হাসিমুখে সবাইকে উত্তর দিচ্ছেন। প্রশ্নকর্তারা হলেন অনেকেই হাটে যাচ্ছেন বা গরু কিনেছেন অথচ নিজের গরুটির সঙ্গে দামের মান যাচাই করতে প্রশ্ন করছেন। এছাড়াও কিছু উৎসাহী মানুষও পশুরমূল্য আগ্রহ নিয়ে জানতে চান। রাজধানীর বাসাবাড়ির সামনে এখন পছন্দের পশু রাখা হয়েছে। গতবছরে কয়েকটি হাটে হঠাৎ পশু সঙ্কট হয় আর এতে করে কিছু লোভী ব্যবসায়ী রাতারাতি পশুরমূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করে। আর সেই ধাক্কা এড়াতে এবার আগেই পশু কিনে রাখছেন ক্রেতারাও। ইতোমধ্যেই রাজধানীর অসংখ্য বাসাবাড়ির সামনে পশু বেধে তার যত্ন করতে দেখা গেছে। এতে পুরান ঢাকা থেকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানও বাদ যায়নি। শনিবার গুলশান এক ও দুই নাম্বারের কয়েকটি রোডে সরেজমিনে দেখা গেছে পশুর যত্ন। গুলশানের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম গরু কেনেন শুক্রবার। কাজের লোক পশুটির যত্ন করছিল। তিনি বলেন, আগে কেনার কারণেই মনের মতো কিনতে পেরেছি। যেহেতু কিনে ফেলেছি দাম কম বেশি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। পছন্দের পশু পাওয়াতেই খুশি তিনি। গুলশান এক নম্বরের ২০,২১,২২,২৩,২৩ ২৪নং রোড ঘুরে দেখা যায় প্রায় প্রত্যেকের বাসার সামনে একাধিক গরু রাখা হয়েছে। বাসার দায়িত্বরত গার্ডরা জানান, অনেকেই গরু কিনে ফেলেছেন আবার অনেকেই হাটে যাচ্ছেন। উট-দুম্বা নিয়েও আগ্রহ ॥ রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ী হাটেও দেখা গেছে বিক্রির জমজমাট দৃশ্য। হাটে আসা নানা রঙের নানা সাইজের গরু ছাগলে পাশাপাশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন উট ও দুম্বা। কেউ কেনার জন্য দেখছেন কেউ আবার চোখের তৃপ্তির জন্য দেখছেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও এই হাটে উঠেছে উট ও দুম্বা। বাংলাদেশে এর চাহিদা কম থাকলেও স্বল্প পরিসরে পাওয়া যায়। তবে মূল্য কম নয়। চারটি উটের মধ্যে ইতোমধ্যেই একটি বিক্রি হয়েছে বলেও জানা গেল। শনিবার দুপুরে গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, গাবতলী হাটের প্রধান ফটক কর্দমাক্ত। এছাড়াও মানুষ ও পশুবাহী গাড়ির কারণে আরও বেশি কর্দমাক্ত হয়েছে। হাটের ২ নম্বর হাসিল ঘরের এক সেড পরেই টিনসেড ঘর। সেখানেই পাশাপাশি রাখা হয়েছে উট-দুম্বা। উট আর দুম্বা দেখতে ভিড় করেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। ক্রেতাদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তবে দাম-দরে না মেলায় চারটি উটের মধ্যে ৮ লাখে বিক্রি হয়েছে মাত্র একটি। মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই গাবতলীর পশুর হাটে আমি উট দুম্বা আর নেপালী গরু নিয়ে আসি। ভারতের রাজস্থান, গুজরাটের মরুভূমি এলাকা এবং হরিয়ানা থেকে উট ও দুম্বা আমদানি করা হয়। তিনি বলেন, একটি বিক্রি হওয়ায় রয়েছে আরও তিনটি উট। আর দুম্বা ওজন ও সাইজ অনুযায়ী দাম হাকানো হয়েছে আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। তবে দুম্বা এখনও বিক্রি হয়নি। এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন ফাঁকা জায়গা অলিতে গলিতে পশু বিক্রির দৃশ্য দেখা গেছে। যদিও এসব কোন হাট নয় বা কোন হাটের অধীনে নয়। কয়েকজন বিক্রেতারা মিলে নিজেদের গরু একত্র করে কোন খোলাস্থানে বেধে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সাতমসজিদ এলাকা, ধানমন্ডি এলাকায় কয়েক জায়গায় এসব দৃশ্য দেখা যায়। যদিও এসব জায়গা বিক্রি হলে কোন হাসিল আদায় করতে হয় না। অনেক সময় বেশিক্ষণ এক জায়গায় থাকেও না এরা। আবার বিক্রি হলে টাকা নিয়ে দ্রুতই সড়ে পরে। তবে নিরাপত্তার কারণে এসবস্থান থেকে গরু না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন ডিএমপির কর্মকর্তারা। একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছরই এই ধরনের ভ্রামমাণ হাট থাকে। এদের বিশেষ কিছু করাও যায় না। কেননা, এরা বলে গরুকে বিশ্রাম দিচ্ছি বা কেনা গরু ইত্যাদি। আবার ক্রেতা আসলে গোপনে হোক প্রকাশ্যে হোক বিক্রি হয়। ক্রেতাদের সচেতন হতে হবে। এখানে লেনদেন নিরাপদ নয়। জমে উঠেছে মৌসুমী ব্যবসা ॥ এদিকে পশুর হাট ঘিরে মৌসুমী ব্যবসাও এখন বেশ জমজমাট। হাটে হাটে বিক্রি হচ্ছে পশু সাজানোর বিভিন্ন পণ্য ও পশুর বিভিন্ন খাবার। যারা পশু বিক্রি করছেন বা কিনছেন উভয় পশুর খাবার হাতের কাছে পাচ্ছেন বলে কিনেও নিচ্ছেন। যদিও মূল্য বাজারের চেয়ে খুব বেশি নয়। আর পশু সাজানোর পণ্যগুলো শখের বশে কিনছেন পশু ক্রেতারা। হাটের সমুক্ষে বা হাটের অভ্যন্তরে কোন স্থানে বসে গেছে এ ধরনের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। আফতার নগর হাটের মূল সড়ক রামপুরা ব্রিজে বসেছে এ ধরনের অসংখ্য ভ্রামমাণ ব্যবসায়ীরা। গাবতলী গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু সাজানোর নানা ধরনের জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। এসব দোকানে পশু সাজানো ফিতা, মালা, রশি, বাঁশের লাঠি ও গোখাদ্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। বিক্রেতারা বলেন, অন্যান্য সময় এত পশু বিক্রিও হয় না আর এসব খুব একটা চাহিদা থাকে না বলে সারাবছর ব্যবসা হয় না। এসব পণ্য বিক্রেতা আজিজ বলেন, আমি রিক্সা চালাই। কোরবানির ঈদের কয়দিন এই ব্যবসাটা করি। দুইদিন ধরে বিক্রিটা ভাল হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, ৫০ থেকে ২০০ টাকা দামের মধ্যে মালা, গরু তাড়ানো লাঠি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে। গরুর রশি ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। কয়েকজন ক্রেতারা বলেন, এত টাকার গরু কিনতে পারি বাচ্চাদের জন্য আবদার রাখতে গরুকে একটু সুন্দর করে সাজাতে এসব কিনে থাকি। এদিকে, গোখাদ্যের ব্যবসাটাও জমজমাট। যারা গরু কিনে নিচ্ছেন তারা প্রয়োজন অনুসারে খাদ্য নিয়ে নিচ্ছেন। খাবারের মধ্যে রয়েছে, কাঁচা ঘাস, খর, ভুষি, বাঁশ ও কাঁঠাল পাতা। গো খাদ্য রাজধানীর অলিতে গলিতে ঘুরে ভ্যানেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্দিষ্ট কোন দামে নয় বরং একটু লাভে এসব বিক্রি করছেন। তাই একেক হাটে একেক রকম দাম জানা গেছে। কাঁচা ঘাস ৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা আটি দামে। খড় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়াও প্রত্যেক হাটেই কড়া নিরাপত্তার দৃশ্য দেখা গেছে।
×