ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন ভ্রুকুটি উপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১১ আগস্ট ২০১৯

মার্কিন ভ্রুকুটি উপেক্ষা

ইরানের ব্যাপারে কথা বলার সময় ফ্রান্স সম্পূর্ণভাবে নিজের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা দ্রিয়া। তিনি বলেন, ফ্রান্স পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে এবং এ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টা চালাতে প্যারিস কারও অনুমতি নেবে না। রয়টার্স ও নিউইয়র্কার। ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রকে ভর্ৎসনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটার বার্তা প্রকাশ করার পর লা দ্রিয়া এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। শুক্রবার ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফ্রান্স ইরানের পরমাণু সমঝোতায় অটল রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি দেশগুলোর মতো ফ্রান্সও নিজের স্বাক্ষরিত সব চুক্তির প্রতি সম্মান দেখায়। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রকে তিরস্কার করে বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানকে কোন মিশ্র সিগন্যাল দিতে পারেন না। এক টুইটার পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে মধ্যস্থতা করার জন্য কাউকে কর্তৃত্ব দেয়া হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেন এসব কথা বলেছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্র ইরানী প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানিকে শিল্পোন্নত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন বা জি-৭-এ আমন্ত্রণ জানিয়ছেন। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে হাসান রুহানির সাক্ষাত করাবেন। তবে স্বতন্ত্রভাবে এই রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। ট্রাম্প গত কয়েক মাসে অসংখ্যবার ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তেহরান ট্রাম্পের এই আগ্রহকে ‘জনমতকে ধোঁকা দেয়ার প্রচেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এর আগে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যে কোন সময় যুদ্ধে রূপ নেয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছে ফ্রান্স। ইরানের সঙ্গে হওয়া ছয় জাতি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়া এবং ওয়াশিংটনের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত উভয়কেই ‘বাজে’ আখ্যা দিয়ে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লু দ্রিয়া। গত বছর ইরানের সঙ্গে করা ছয় জাতি পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো হচ্ছে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন। চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ও ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে নতুন করে উত্তেজনার শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে তেলবাহী ট্যাঙ্কারে হামলার অভিযোগ তোলে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান। সর্বশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে সে পরিস্থিতি এড়ানো গেলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পথ থেকে ইরানকে ফেরানো যায়নি। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানই যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করে ফ্রান্স। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউই যুদ্ধ চায় না। দেখা যাচ্ছে সবাই বলছে যে, তারা এমন উত্তেজনা চায় না। রুহানি, ট্রাম্প কিংবা উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ কেউই নন। কিন্তু উত্তেজনাকর উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে, যা আশঙ্কাজনক। পরমাণু কর্মসূচীসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে ইরানের কোন প্রাপ্তি ঘটেনি। ইরান পরমাণু অস্ত্রধারী হলে যুক্তরাষ্ট্রেরও কোন প্রাপ্তি ঘটবে না। তাই উত্তেজনা প্রশমনে দরকারি পদক্ষেপ নেয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
×