ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১০ আগস্ট ২০১৯

 সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে। দুদিন ধরে এই সংখ্যা কমতির দিকে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার দুজন। যা আগের দিনের চেয়ে বেশ কম। বুধবার সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর থেকেই এই সংখ্যা কমতে শুরু করেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। এদিকে রাজধানীর চেয়ে বাইরের জেলাগুলোয় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী বাদে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত রাজধানীতে এই সংখ্যা ছিল ৯৪৭। বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতে আসা রোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমেছে। শুক্রবার পরিস্থিতি আগের দিনের চেয়ে আরও উন্নতি হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে আরও চারজন। এর মধ্যে রয়েছে ফরিদপুরে গৃহবধূ লিপি আক্তার, বরিশাল শেবাডির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মজিবর রহমান (৫৫) ও নীলফামামারীতে আব্দুর রহিম (৪৫) ও চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কাচিয়ারা গ্রামের সারা। তার বাবার নাম মমিনুল ইসলাম, তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার সোবহানবাগে। সারা স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে প্লে শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। চার বছরের সারার মরদেহ নিয়ে বাবা মমিনুল ইসলাম গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে মেয়ের দাফন শেষে তড়িঘড়ি করে ঢাকার ফিরে আসেন। ঢাকার একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তা আরেক সন্তান ছোট সন্তান সাফাও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তার ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। অবস্থা গুরুতর। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকার মগবাজারে রাশমনো স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যায় সারা। ৩ আগস্ট সারা জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরিবারের লোকজন তাকে ধানম-ি ইবনে সিনা হাসপাতালে নেন। সেখানে রক্ত পরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। হাসপাতালে বেড খালি না থাকায় সারাকে ধানম-ির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও সিট না পেয়ে তাকে নর্দান হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাশমনো স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে নয়টায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যায় সারা। সারার ছোট বোন সাফারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তাকে যে ধানম-ির রেনেসাঁ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সাফা আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার ফুসফুসে পানি জমেছে। নীলফামারী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজধানী থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে ফিরেই রাত সাড়ে আটটায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে আব্দুর রহিম (৪৫)। তিনি ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছচঁপানী ইউনিয়নের কাঁকড়াবাজার গ্রামের এনতাজ আলীর ছেলে। রহিম রাজধানীতে রিক্সা চালাত। ঢাকায় ডাক্তার দেখায় ও পরীক্ষা করে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কিন্তু রহিম হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বাসে উঠে সন্ধ্যা সাতটায় পৌঁছায়। রাত আটটার দিকে রহিমের শারীরিক সমস্যা বেশি হলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। শুক্রবার বাদ জুমা গ্রামে জানাজা শেষে রহিমের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে গত ১৬ দিনে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭। এর মধ্যে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৫। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন আছেন পাঁচ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪, বাকিদের রংপুর মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্যানুযায়ী বছরের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৬৬৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার সকাল নাগাদ সারাদেশে মোট ৮ হাজার ৭৬৩ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১ সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে ৫ হাজার ৪৬। বাকি জেলাগুলোর বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৩ হাজার ৬৮৭। এদিকে ডেঙ্গু জ¦র প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে রাজধানীতে দরিদ্রদের মাঝে মশারি বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে টিকাটুলি এলাকায় সহ¯্রাধিক পরিবারের মাঝে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশারি বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগের দফতর বিষয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি মোঃ রাসুরুল হক শাহীন মল্লিকের উদ্যোগে এ মশারি বিতরণ করা হয়। এ সময় ওয়ারি থানা ওসি, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান মজনু, ঢাকা দক্ষিণ যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৌসুমী আক্তার আইভি, ওয়ারি থানা মহিলা লীগ নেত্রী রোকসানা বেগম পারভীন, নাসিমা বেগম, পারুল আক্তার, যুব মহিলা লীগ নেত্রী সুলতানা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাই প্রমুখ। সাতক্ষীরা ॥ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার সন্ধান পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে শহরের সুলতানপুর ঘোষ পাড়া এলাকার নিতাই পালের বাড়ির একটি গাছের টবের পানিতে ভাসমান পাতার উপরে এই মশা দেখা যায়। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এই তথ্য দিয়ে বলেন, শুক্রবার সকালে এডিসের লার্ভার অস্তিত্ব পেয়েছি। তবে সে লার্ভা আমরা ধ্বংসও করে দিয়েছি। তিনি বলেন, তার নেতৃত্বে বাড়ি বাড়ি যেয়ে মশা নিধন অভিযান চলছে। এদিকে শুক্রবার পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় ১১৫ ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলেছে। সিভিল সার্জন জানান, তাদের মধ্যে ৪৪ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। নেত্রকোনা ॥ এদিকে জ¦রে আক্রান্ত রোগীরা প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ভিড় করছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত কিট না থাকায় চিকিৎসকরা সবাইকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে পারছেন না। তারা রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে নির্বাচিত রোগীদের হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছেন। বাকিদের প্রাইভেট ডায়াগনিস্টক সেন্টারে যাবার অথবা অপেক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন। যারা বাইরের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে পরীক্ষা করছেনÑ তাদের পরীক্ষা বাবদ ৫-৬শ টাকা করে খরচ করতে হচ্ছে। জেলার সাতটি উপজেলা হাসপাতালে এখনও ডেঙ্গু জ¦রের পরীক্ষা চালু হয়নি। এদিকে জেলা সদর হাসপাতাল এবং মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু এনএসওয়ান কিট (ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট) সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ কারণে বেশিরভাগ রোগীর বাইরের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। মাগুরা ॥ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৮ রোগী মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। শুক্রবার ১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা যায় ১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১৮ জন ডেঙ্গু আতান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের জরুরী বিভাগের পাশে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। এদিকে জেলায় ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। লাকসাম (কুমিল্লা) ॥ ৪৮ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্তকারী কোন কিট না থাকায় বিভিন্ন ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন শত শত রোগী ভিড় করছে। দিন দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন তিন স্থানে ডেঙ্গু পরীক্ষা শনাক্ত করার জন্য লাকসাম রেলওয়ে জংশন, বাইপাস এলাকা ও মুদারফরগঞ্জের দুটি স্থানে ঈদ ফেরা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল আলী বলেন, বাস ও ট্রেন থেকে নামার পর যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা লিপিবদ্ধ করবে। এরপর স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ দেবে।
×