ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরের সঙ্কট নিরসনে আমদানির ওপর গুরুত্বারোপ

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১০ আগস্ট ২০১৯

   দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরের সঙ্কট নিরসনে আমদানির ওপর গুরুত্বারোপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে উৎপাদন অনুসন্ধানের পাশাপাশি আমদানি করা জ্বালানিতে ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে চায় সরকার। এজন্য মহেশখালীতে স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতের ওপর নির্ভরতাকে সহজ সমাধান মনে করছে জ্বালানি বিভাগ। শুক্রবার পেট্রোবাংলায় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের মূল সেমিনারে সেই আভাস দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের দক্ষিণ পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে দক্ষিণ, মধ্য এবং পূর্বাঞ্চলের জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে মহেশখালীতে স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সেমিনারে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পায়রায় সমুদ্রের গভীরতা কম হওয়ায় সেখানে স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পায়রায় সর্বোচ্চ নয় মিটার ড্রাফট পাওয়া যাবে। অন্যদিকে এলএনজিবাহী জাহাজের জন্য অন্তত ১৬ থেকে ১৮ মিটার ড্রাফট প্রয়োজন হয়। সেজন্য সেখানে টার্মিনাল নির্মাণ সম্ভব হবে না। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের কাছে এলএনজি বিক্রি করতে আগ্রহী। এখন আমরা দেখছি সেখান থেকে এলএনজি আমদানি করা লাভজনক হবে কি না। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরে গ্যাসের কোন মজুদ নেই। সীমিত আকারে দেশের পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলের গ্যাস সেখানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের মজুদ ফুরিয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে ওই অঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশই জ্বালানি সঙ্কটে পড়বে। তখন আমদানির কোন বিকল্প থাকবে না। কিন্তু দেশের সর্বদক্ষিণ থেকে আমদানি করা জ্বালানি দক্ষিণ পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলে পাঠানো কষ্টসাধ্য। সেক্ষেত্রে বিস্তীর্ণ এলাকার জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে বিকল্প অনুসন্ধান করতে হচ্ছে। সেমিনারে জ্বালনি বিভাগের অদক্ষতা নিয়ে কথা বলেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিদ্যুত বিভাগে পাওয়ার সেল যেভাবে কাজ করে সেভাবে কাজ করতে পারে না হাইড্রো কার্বন ইউনিট। হাইড্রো কার্বন ইউনিটের গবেষণামূলক অনেক কাজ করার সুযোগ ছিল যা করা সম্ভব হবে অনুসন্ধান উত্তোলন আরও সহজ হতো। তিনি বলেন বিস্ফোরক অধিদফতরের কাজের অনেক সুযোগ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানো দরকার যা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি কর্মকর্তাদের অকারণে বিদেশ ভ্রমণের সমালোচনা করে বলেন, আমার সই করা ফাইলের ৬০ ভাগই বিদেশ ভ্রমণের। স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণের নামে এসব বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ১০ দিনের এই ভ্রমণে কোনভাবেই কেউ দক্ষ হয়ে ওঠেন না। তারপরও কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ি রকমের বিদেশ ভ্রমণে অনীহার বদলে আগ্রহ বেশি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছিলাম বিদেশ থেকে এসেই যেন প্রশিক্ষণের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ তা করেনি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাড়ে চার মিলিয়ন পাউন্ডে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র ক্রয় করেন। কিন্তু আমরা এরপর আর তেমন সাহসী উদ্যোগ নিতে পারিনি। জ্বালানি খাতের সিদ্ধান্তহীনতার জন্য দুর্যোগ নেমে এসেছিল। ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারী খাতকে জ্বালানি খাতে যুক্ত করায় পরিবর্তন এসেছে। সরকারের সামনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করা। এজন্য যা যা করা উচিত আপনারা করুন, মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে। জ্বালানি সচিব আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, দেশে প্রশিক্ষণের কথা বললে কেউ আসতে চান না। বিদেশী প্রশিক্ষণের প্রতি এত আগ্রহ কেন? তিনি বলেন প্রয়োজনে বাইরে থেকে প্রশিক্ষক এনে দেশেই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষ না হলে আমরা কাউকে গ্যাস সংযোগ দেব না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, বিপিসি চেয়ারম্যান শামসুর রহমান ¯্র ডোর সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের বক্তব্য রাখেন। প্রসঙ্গত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েলের কাছ থেকে তিতাস, রশিদপুর, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ এবং কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেন। ওই সময়ে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে গ্যাসক্ষেত্রগুলো কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার প্রতি সম্মান জানাতে সরকার এই দিনটিকে জ্বালানি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
×