ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের ওপর হামলার টার্গেট ছিল

প্রকাশিত: ১১:০২, ১০ আগস্ট ২০১৯

  পুলিশের ওপর হামলার টার্গেট ছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথের দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচজনকে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। আটককৃতরা হচ্ছে, মোহাম্মদ শিবলী আজাদ ওরফে শাদী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মুর্তজা কবীর ওরফে আবাবিল, মাসরিক আহমেদ, মোঃ আশরাফুল আল আমীন ওরফে তারেক ও এস এম তাসমিন রিফাত। এদের মধ্যে মোহাম্মদ শিবলী আজাদ ওরফে শাদী ও শাহ এম আসাদুল্লঅহ মুর্তজা কবীর ওরফে আবাবিল নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী। তারেক ও রিফাত এসএসসি পাস করেছেন। মাসরিক যশোর এম এম কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, আটককৃতরা নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’ গ্রুপের সদস্য। তারা সুবিধাজনক সময় পুলিশের ওপর হামলার টার্গেটে ছিল। সেই লক্ষ্যে তারা ‘এক্সক্লুসিভ ডিভাইস’ বা আইডি তৈরি করার যন্ত্রাংশও সংগ্রহ করেছিল। সিটিটিসির প্রধান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএমপি’র ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরার একটি মসজিদের পাশের মাঠ থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। পরে তাদের কাছে ১০টি ডেটোনেটর এবং চারটি সান ব্যান্ড গ্যাসের বোতল ও পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তিনি জানান, তারা দেশের ও বিদেশের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের অনলাইন প্রচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে ওইস্থানে একত্রিত হয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই এনক্রিপটেড এ্যাপ সিক্রেট চ্যাটের মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ করত। মনিরুল ইসলাম জানান, এরা শিক্ষার্থী এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা পুলিশের ওপর হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। হামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল মোহাম্মদ শিবলী আজাদ ওরফে শাদী। বাকিরা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল। শাদী হামলার জন্য ‘এক্সক্লুসিভ ডিভাইস’ বা আইডি তৈরি করার যন্ত্রাংশও সংগ্রহ করেছিল। সর্বশেষ রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়ি থেকে যে দুটি আইডি উদ্ধার করা হয়েছিল। সেগুলোর সঙ্গে এসব যন্ত্রাংশের মিল রয়েছে। গ্রেফতারকৃত শাহ এম আসাদুল্লাহ মুর্তজা কবীর ওরফে আবাবিল একদিকে আধ্যাত্মিক নেতা এবং সে এই হামলার জন্য অর্থ যোগান দেয়ার চেষ্টা করছিল। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। এরইমধ্যে এ হামলার জন্য কিছু অর্থ জোগাড় করেছিল। গ্রেফতারকৃত মাসরিক আহমেদের দায়িত্ব ছিল এ হামলার জন্য যশোর থেকে অস্ত্র সীমান্ত দিয়ে পারাপার করে নিয়ে আসা। আর বাকি দুজন সদস্য সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করে আসছিল। পুলিশের ওপর কেন হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, হলি আর্টিজান হামলার পর পুলিশের হাতে সবচেয়ে বেশি জঙ্গী নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে। এতে তারা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল। তিনি জানান, তাদের ধারণা পুলিশের ওপর হামলা করলে সাধারণ মানুষ আরও ভীত হবে। মানুষ ভাববে, পুলিশের ওপর হামলা প্রতিরোধ করতে পারছে না। তাহলে পুলিশ কিভাবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে? সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, আটক পাঁচজনের সঙ্গে এ পরিকল্পনায় আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে আরও তথ্য জানা যাবে। তিনি জানান, আটককৃতরা হামলার জন্য সুনির্দিষ্ট যে স্থান নির্ধারণ করেছিল। তা কৌশলগত কারণে আমরা বলছি না। আগে উদ্ধারকৃত দুটি আইডির সঙ্গে তাদের কোন যোগসাজশ আছে কিনা। সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কাশ্মীর ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, যেকোন আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহ জঙ্গীদের অনেক সময় উৎসাহিত বা অনুৎসাহিত করে। নিউজিল্যান্ডের হামলার পর শ্রীলঙ্কায় জঙ্গী হামলা হয়। এই হামলাটিকে বিশ্বের ‘জঙ্গীবাদ বিশেষজ্ঞ’রা বলে থাকেন যে নিউজিল্যান্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে শ্রীলঙ্কায় হামলা করা হয়েছে। এই দুটি ঘটনার পর বাংলাদেশে ঈদের আগে জঙ্গী হামলার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু এটা আমরা সফলভাবে প্রিভেন্ট করতে পেরেছি। সর্বশেষ কাশ্মীরের ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করাটা সমুচিত হবে না। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যাতে জঙ্গী রিক্রুট না হতে পারে সেই বিষয়ে নজরদারি রয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে জঙ্গী রিক্রুট হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি বলেও মনে করছেন তিনি।
×