ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বকুলতলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১০ আগস্ট ২০১৯

বকুলতলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর  বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্র্টার ॥ মিলিয়ে যায় দুপুরের রৌদ্রতাপ। নেমে আসে প্রশান্ত বিকেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় ছড়ায় প্রাণের স্পন্দন। সমতলে ভেসে বেড়ায় পাহাড়ী গানের সুর। সেই সুরের মাঝে প্রকাশিত হয় তাদের ভিন্ন ধারার সংস্কৃতিময় জীবনের সৌন্দর্যসহ সুখ-দুঃখ আর সংগ্রামের কথা। মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার সঙ্গীতের স্নিগ্ধতায় প্লাবিত হয় সংস্কৃতি অনুরাগীদের হৃদয়। মান্দি নাচের ছন্দে চঞ্চল হয় দর্শনার্থীর নয়ন। এভাবেই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বহুমাত্রিক পরিবেশনায় লাবণ্যময় হয়ে ওঠে আদিবাসী দিবসের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুক্রবার ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত পঁচিশতম আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এ উপলক্ষে ‘আদিবাসী ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন’ প্রতিপাদ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। প্রথম পর্বের আলোচনা পেরিয়ে নাচের আশ্রয়ে দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। মঞ্চে আসে গারো সম্প্রদায়ের পাঁচ তরুণ ও পাঁচ তরুণী। শরীরের তাল-লয়ের সম্মিলনে গারো ভাষার গানের সুরে পরিবেশিত হয় যুগল নৃত্য। এরপর মান্দির নাচের ছন্দে মুগ্ধতা ছড়ান সুস্মিতা রেমা ও তার দল। সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেয় আদিবাসী শিল্পীদের গড়া চারটি সঙ্গীতদল। পাঁচ নারী শিল্পীর গড়া দল এফ মাইনর শুনিয়েছে মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার চারটি গান। জীবনের নানা বিষয় যুক্ত হওয়া এসব সঙ্গীতের বাণীতে উঠে আসে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর বাসনা থেকে প্রবারণা পূর্ণিমার কথা। পিংকি চিড়ানের কণ্ঠসঙ্গীতের সঙ্গে কাহন, গিটারসহ বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনা উপস্থাপন করেন নাদিয়া রিছিল, গ্লোরিয়া মান্দা, এর্কিড প্রমুখ। জীবন সংগ্রামের অহঙ্কারের কথা প্রকাশ পায় ব্যান্ডদল মাদলের গানে। প্রথম পরিবেশনায় দলটি গেয়ে শোনায়- ‘পাখির স্বভাব পাখির মতো উড়বে বলে .../শাল বৃক্ষের মতন শিনা টান করে/সে মনুষ হয়ে বাঁচতে পীরেন জান দিয়েছে’। দলটির দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল- ‘পুতুল নাচের পুতুল আমি/ যেমন চাইছে তেমনি দিচ্ছি সাড়া’। শ্যাম সাগরের কণ্ঠসঙ্গীতে দলটির লিড গিটারে ছিলেন জেমসন আমলাই, বেজ গিটার বাজিয়েছেন অন্তর স্কু, মাদল বাজিয়েছেন হরেন্দ্রনাথ সিং এবং কাহনে সঙ্গত করেন অ্যান্তনি রেমা। রেমিনিসেন্স নামের দলটি পরিবেশন করে চাকমা ভাষার গান ‘চম্পক নগর’, ‘আজার বজর দরি’ ও ‘মোর সোনার দেচ্চান’ শিরোনামের তিনটি সঙ্গীত। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল ক্রেমলিন। পরিবেশনা পর্বের আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৌরভ শিকদার। সংহতি ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন কণা, মুজাহিদুল ইসলাম নয়নসহবিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্য দেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হাজং। সমাবেশে বক্তারা বলেন, জিডিপি আয়সহ নানা সূচকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এই অগ্রযাত্রায়। বর্তমানে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি এগোচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে। তাই আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানসহ তাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের জাতীয় পর্যায়ে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই একাডেমি যাতে আদিবাসী ভাষাচর্চা, সংরক্ষণ ও বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য বাজেট বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ পর্যন্ত মাত্র ৫টি আদিবাসী ভাষায় প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও কোথাও পৃথকভাবে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। অবিলম্বে আদিবাসী ব্যবস্থায়ী আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
×