ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেলিযোগাযোগ খাত ইতোমধ্যে উন্নত দেশের কাতারে

রূপকল্প ’২১-এর আগেই বিনির্মাণ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১০ আগস্ট ২০১৯

 রূপকল্প ’২১-এর আগেই বিনির্মাণ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ সেক্টর দেশকে নিয়ে গেছে উন্নত দেশের কাতারে। এই খাতে গত কয়েক বছরে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি ঘটেছে বেশি। সরকারের সাহসী সিদ্ধান্তে দেশ আজকের পরিস্থিতিতে আসতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পাঠিয়ে মহাকাশ জয়ের মধ্য দিয়ে দেশের অবস্থান এখন অনেক ওপরে। স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করেছে। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শহর-গ্রামের বৈষম্য দূর হবে। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সবচেয়ে বড় অর্জন হয়েছে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে। তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ১২ বছরে যত ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হতো, ফোরজি চালুর পরে তা তিনগুণ বেড়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে কতদূর এগিয়েছে। আশা করা হচ্ছে এ বছর তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার আয় করবে। বাংলাদেশের এই সাফল্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে রূপকল্প ’২১-এর আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক চালু, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্তি, ডাক টাকার প্রচলন (নগদ), সফটওয়্যার ও সেবা খাতে রফতানিতে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফোরজি ও মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) চালু, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ, ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ১ টেরার বেশি, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজারে উত্তীর্ণ, মোবাইল সংযোগ হয়েছে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার। এসব কারণেই বলা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকারের ৪০ ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। চালু হয়েছে ই-কৃষি, ই-হেল্থসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সেবা, এখন মানুষ ঘরে বসেই পাচ্ছেন এর সুফল। বিচার বিভাগে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্পের অগ্রগতি ঘটেছে, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডেটা সেন্টার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, এ্যাপস ও গেমিং ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি প্রকল্পের কাজ চলছে। মহেশখালী রূপান্তরিত হয়েছে ডিজিটাল দ্বীপে। সারাদেশে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তৈরি, ই-কমার্স নীতিমালা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে বিদায়ী বছরেই। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র মতে, প্রতি মানুষের হাতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকলে দেশের উন্নয়ন কেউ রোধ করতে পারবে না। দেশ এখনই উন্নত দেশের কাতারে অবস্থান করছে। ভিশন ’২১ সালের আগেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষমতা অর্জন করব। অবশ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখতে হবে, যাতে মানুষও নিরাপদে থাকতে পারে। এজন্য ডিজিটাল আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘যার যা খুশি তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করা যাবে না।’ এতে সমাজের শান্তি বিনষ্ট হতে পরে- এই চিন্তা মাথায় রেখেই আইনটি প্রণীত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রথম দিকে আইনটি নিয়ে দেশের বেশকিছু মানুষ আমাকে গালমন্দ করেছে। পরে আইনটির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে এখন তারাই আইনটির সুবিধা ভোগ করছেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশকেও এখন আমাদের অনুসরণ করতে হচ্ছে। এ আইন কপি করা ছাড়া তাদের বিকল্প রাস্তা নেই। তথ্যপ্রযুক্তি জগতকে এখন আর কেউ অপরাধের কাজে ব্যবহার করতে পারছে না। এখন দেশের যুবসমাজ জ্ঞানভিত্তিক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তারা তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হচ্ছে। এভাবে এগিয়ে যেতে পারলে আমরা অল্পদিনের মধ্যেই উন্নত দেশের সারিতে গিয়ে দাঁড়াব। দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি জানায়, ’১৪ সালে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো ১৫০ জিবিপিএস, বর্তমানে যার পরিমাণ ৮৫০ জিবিপিএসের (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) বেশি। ’১৭ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৩৫০ জিবিপিএস। একই বছরের আগস্টে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২১ জিবিপিএসে। এই হারে ব্যান্ডউইথ বাড়তে থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরে ফেব্রুয়ারির শুরুতে তা এক টেরাবাইটে (১০২৪ জিবিপিএস) পৌঁছবে। দেশে ব্যবহৃত ৮৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের মধ্যে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) গ্রাহকরা ব্যবহার করে ৬২০ জিবিপিএস, আর মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ব্যবহার করে ২০০ জিবিপিএস। অবশিষ্ট ৩০ জিবিপিএস ব্যবহার করে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ব্যবহৃত হতো ৫৫০ জিবিপিএসের কিছু বেশি ব্যান্ডউইথ। ওই মাসেই ফোরজি চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ মাসে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে ৩শ’ জিবিপিএসের বেশি। উল্লেখ্য বাংলাদেশ ২০০৬ সালে সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-ইউ-৪-এ যুক্ত হয়। বর্তমানে এটি দিয়ে দেশে আসছে ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। আর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-ইউ-৫ দিয়ে আসছে ৪৫০ জিবিপিএস। যদিও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস। এছাড়া ছয়টি আইটিসির মাধ্যমে বর্তমানে দেশে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আসছে।
×