ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তিন স্তরের নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১০ আগস্ট ২০১৯

 কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তিন স্তরের নিরাপত্তা

শংকর কুমার দে ॥ পবিত্র ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। পশুর হাটে আমদানি সুষ্ঠু ও সচল রাখাসহ সব ধরনের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস বন্ধসহ তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পশু ব্যবসায়ী এবং বিক্রেতা যাতে বেচাবিক্রি করে নিরাপদে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারেন সেজন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিটকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আগে থেকেই সারাদেশ থেকে কোরবানির পশু আমদানি অব্যাহত রাখতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। পশুবাহী গাড়ির সামনে ব্যানার টাঙানোর জন্য নির্দেশনা দেয়ার পর পরিবহন ব্যবসায়ীরা সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে মান্য করছেন। পথে কোন ধরনের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না পশু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাকে। পরিবহন থেকে শুরু করে বিক্রির সব জায়গায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। রাজধানীর পশুহাটে বিশেষ করে গাবতলী, বাদামতলী, আফতাবনগর, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর বছিলা, আগারগাঁ, তালতলার সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তার পাশে পশুরহাট বসাতে নিষেধ করা হলেও সে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সারাদেশে শত শত গরুর হাট বসানো হয়েছে রাস্তার পাশে। এতে যানজটসহ নানা ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে এসব হাটে পশু চিকিৎসক, সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য। ডিএমপি পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী পশুর হাট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। দুই সিটিতে কোরবানির পশুর হাট বসছে ২৪টি স্থানে। গবাদিপশুর হাট ঈদের দিনসহ ছয় দিন চালু থাকবে। এছাড়া নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা চাদরে মোড়ানোসহ তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে রাজধানীর সব পশুর হাটে। রাজধানীর প্রায় সব হাটেই কোরবানির পশু উঠেছে। গরু ভর্তি ট্রাক হাটে ঢুকছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও ওয়াচ টাওয়ারে অবস্থান করছেন। কোরবানির পশু কিনতে হাটে আসছেন ক্রেতা। ক্রেতাও হাট ঘুরে দেখছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাটগুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া হাট কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবীরাও রাতদিন কাজ করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাকে সচেতনতার জন্য মাইকিংও করা হচ্ছে। হাট নিয়ে যে কোন অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক অঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পর্যবেক্ষণ কমিটি করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। কোন অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পশুর হাটের চাঁদাবাজি ও এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যাতে সংঘর্ষ না হতে পারে তার জন্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করছে। আমাদের টার্গেট, যে কোন ধরনের অপরাধ দমন করা হবে, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা নিশ্চিন্তায় পশু কেনাবেচা করতে পারেন। রাজধানীর পশুর হাটে রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পশুর আমদানি বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতাও। হাইওয়ে রোডে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি হওয়ার অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। নদীপথে পশুবাহী ট্রলার ও নৌকায় পশুর বেপারিদের টানাহেঁচড়া করার অভিযোগ এসেছে। দেশের বিভিন্নস্থানে গরু চুরি, ডাকাতি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। কোরবানির ঈদে রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে নিয়মিত এবং প্রয়োজনে ব্লক রেড চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা তৈরি করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হবে। পশু ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও তাদের নগদ অর্থ পরিবহনে নিরাপত্তা দেয়া হবে। একই সঙ্গে জাল টাকা তৈরি চক্রের হোতাদের ধরতেও সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যে কোন মূল্যে কোরবানি ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের প্রতি কঠোর বার্তা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, এবারের কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা যাতে করে লেনদেনের সময় জাল টাকা বিস্তার চক্রের শিকার না হন সেজন্য জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পশুর হাটে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি, শৌচাগার ও ক্রেতা-বিক্রেতার বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পকেটমার, প্রতারক, চাঁদাবাজদের অত্যাচার রুখতে পুলিশ ও র‌্যাবকে নিয়মিতভাবে পশুর হাটে টহল দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, জাল টাকা চিহ্নিতকরণ মেশিন সরবরাহসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পশুবাহী ট্রাক ও ট্রলারে টানাহেঁচড়া করার খবর পেলেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোরবানির পশু ওঠানামা রোধ, পশুরহাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, পশুর হাট ইজারাদার কর্তৃক হাসিল হার প্রদর্শন, নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত হাসিল আদায় না করা, কোরবানির পশু ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পশু পরিবহনে ব্যবহৃত নৌকা ও ট্রাকে চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসীদের কোরবানির ঈদে প্রধান টার্গেটে থাকে পশুর হাট ও ব্যবসায়ীরা। পশুর হাট ও চামড়া ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজিসহ হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটায় তারা। এছাড়া অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা রোধে এসব চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এবারের পশুর হাট রাজধানীর জনবহুল এলাকা থেকে একটু দূরে দেয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে পশুর হাটের জন্য যানজটের সৃষ্টি না হয়। হাটগুলোতে সুস্থ ব্যবস্থাপনা রাখতে ইজারাদারদের ও যানজটের যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করছে।
×