ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হওয়ার দৌড়ে আছেন নিউজিল্যান্ডের এই কোচ

হেসনকে নিয়ে টানাটানি

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১০ আগস্ট ২০১৯

হেসনকে নিয়ে টানাটানি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের কোচ হওয়ার দৌড়ে যিনি সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি নিউজিল্যান্ডের মাইক হেসন। কোচ নিয়োগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) যে সংক্ষিপ্ত তালিকা তাতে হেসন খুব ভালভাবেই আছেন। কিন্তু এ কোচকে নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। এক কোচকে দলের প্রধান কোচ করতে উপমহাদেশের শক্তিশালী সব দলই উঠে পড়ে যেন লেগেছে। সঙ্গে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার চাহিদাপত্রেও আছেন এই কোচ। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল টি২০) কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের কোচ পদ থেকে বৃহস্পতিবারই পদত্যাগ করেছেন নিউজিল্যান্ডের মাইক হেসন। নিজেই তা আবার টুইট করে জানিয়েছেন। আর তাতেই গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করে দেয়। পাঞ্জাবের দায়িত্ব ছাড়া মানেই তো অন্য কোন দলের দায়িত্ব নেয়া। আর দায়িত্ব নেয়ার মতো নিশ্চয়তা আছে দেখেই তো হেসন পাঞ্জাবের সঙ্গে দুই বছরের থাকা চুক্তি এক বছরেই শেষ করে দিয়েছেন। তিনি এ ঘটনা জানাতেই কোন দলের কোচ হচ্ছেন? এ নিয়ে প্রশ্ন আর তার উত্তর মেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এই চেষ্টায় হেসনের শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার কোচ হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের কোচ নেই। শ্রীলঙ্কাও চন্দিকা হাতুরাসিংহেকে কোচ পদ থেকে বরখাস্ত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কারও স্থায়ী কোন প্রধান কোচ নেই। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এই চার দলই এখন কোচ খুঁজছে। তাতে করে একটি প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। যে প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার ব্যাপারও থাকছে। আর জয়ী যেন হেসনকে নিয়োগ দেয়ার মধ্যেই থাকছে। সব দলই হেসনের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। তিনি যে নিউজিল্যান্ডের সফল কোচ ছিলেন। আবার আগামী বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে টি২০ বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন যেহেতু একইরকম, সেই দেশের কোচ হলে তো ভালই হয়। আর তাই হেসনকে পেতে ছুটছে দলগুলো। ভারতের কোচ হওয়া অবশ্য এত সহজ নয়। বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রীই শেষ পর্যন্ত ভারতের কোচ পদে থেকে যেতে পারেন। তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোচ নিয়োগের আগে যারা নিয়োগ পেতে আগ্রহী তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হবে। হেসন সাক্ষাতকার দেবেন। তিনি আবার ভারতের সংক্ষিপ্ত তালিকায় যে তিনজন আছেন তাদের মধ্যে একজন। শাস্ত্রী, টম মুডির সঙ্গে হেসনও আছেন সংক্ষিপ্ত তালিকায়। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে ভারতের কোচ নিয়োগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত হয়তো হেসন কোন দলের সঙ্গে পাকাপাকি কথা বলবেন না। ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। কোচ মিকি আর্থারের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেছে পাকিস্তান। তারাও কোচ খুঁজছে। তাদের নজরও হেসনে ভালভাবেই পড়েছে। শ্রীলঙ্কার চাহিদাপত্রেও আছেন হেসন। আর স্টিভ রোডসকে বিদায় করার পর তো কোচ খুঁজছেই বিসিবি। হেসনকে পছন্দ। তাও ভালভাবেই গুঞ্জন উঠে গেছে। এ দামী কোচ শেষ পর্যন্ত কোন দলের কোচ হবেন তা সময়ই বলে দেবে। তবে উপমহাদেশের শক্তিশালী দলগুলোর তালিকায় সবার ওপরেই স্থান পাচ্ছেন হেসন। শুধু যে উপমহাদেশের দলগুলোর চাহিদাতেই আছেন হেসন তা নয়। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাও হেসনের দিকে নজর রেখেছে। এই দুই দলের কোচ পদও যে খালি। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও ট্রেভর বেলিস কোচের পদ ছেড়ে দেন। আইপিএলে কোচিং করাবেন। বিশ্বকাপে খারাপ করায় ওটিস গিবসনকে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাঁটাই করে। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাও তাই কোচ খুঁজছে। হেসনকে নিয়ে রীতিমতো টানাটানিও যেন শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কী তাতে বিপাকে পড়ে গেল? পড়ারই কথা। যতদূর মিডিয়াতে আসছে, হেসনকে কোচ হিসেবে চাচ্ছে বাংলাদেশ। হেসন রাজি হলে তিনিই হবেন কোচ। তারই সম্ভাবনা বেশি। কারণ বিসিবির সংক্ষিপ্ত তালিকায় নিউজিল্যান্ডের মাইক হেসন, দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডোমিঙ্গো, ইংল্যান্ডের পল ফারব্রেস, জিম্বাবুইয়ের গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ও শ্রীলঙ্কার চন্দিকা হাতুরাসিংহে আছেন। তালিকায় যারা আছেন হেসন আর ডোমিঙ্গো ছাড়া আর কোন কোচকেই নিয়োগ দেয়ার মতো অবস্থায় নেই বিসিবি। ইংল্যান্ডের সাবেক সহকারী কোচ পল ফারব্রেস একবার কোচ হতে আগ্রহ দেখাননি। এবারও তিনি নাকি না করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মতো এত বড় শক্তির দলের প্রধান কোচ হওয়ার মতো যোগ্য গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়। হাতুরাসিংহেকে আবার নিয়ে আসা হলে দলে যদি কোন সমস্যা তৈরি হয়। হাতুরাসিংহেকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে আছে শঙ্কা। এ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে প্রস্তাব দিয়েও সাড়া মিলেনি। গ্যারি কার্স্টেন তো ঘরোয়া দলের কোচ হয়েই সন্তুষ্ট। টম মুডিকে কোচ করা বাংলাদেশের জন্য কঠিনই। গুঞ্জন উঠেছিল, এর আগেও বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্সের এ কোচের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তিনি রাজি হননি। মাহেলা জয়বর্ধনে তো পারিশ্রমিকও চান বেশি। আবার বিশ্বের টি২০ লীগগুলোতেও কোচিং করার অনুমতি চান। তার মানে শুধু হেসন ও ডোমিঙ্গোই আপাতত বাংলাদেশের কোচের তালিকায় শক্তভাবে থাকছেন। নিউজিল্যান্ডের পত্রিকা ‘স্টাফ’ জানিয়েছে, কোচ হিসেবে বাংলাদেশের চাহিদায় হেসন থাকলেও তার প্রত্যাশা ভারত ও পাকিস্তানের কোচ হওয়ার। এতে বাংলাদেশে হেসনের কোচ হওয়ার বিষয়টি ঝুলিয়ে দিচ্ছে। ছয় বছর কিউইদের কোচ ছিলেন হেসন। হেসনের অধীনেই ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে, ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। সফল কোচ। আবার টি২০ বিশ্বকাপ হবে অস্ট্রেলিয়ায়। আর তাই হেসনের দিকেই নজর সবার। যদি শেষ পর্যন্ত হেসন অন্য কোন দলের কোচ হয়ে যান তাহলে সাক্ষাতকার দিয়ে যাওয়া ডোমিঙ্গো কোচ হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তার পরিকল্পনায় যে সন্তুষ্ট হয়েছে বিসিবি। তবে হেসনের জন্য নিশ্চয়ই শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিসিবি। আর সেই হেসনকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে।
×