ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যানারি মালিকরা প্রস্তুত চামড়া সংগ্রহে, কিনছেন লবণ

শেষ সময়ের কেনাকাটা সারতে মার্কেটে মার্কেটে ছুটছেন ঢাকাবাসী

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১০ আগস্ট ২০১৯

 শেষ সময়ের কেনাকাটা সারতে মার্কেটে মার্কেটে ছুটছেন ঢাকাবাসী

এম শাহজাহান ॥ ঈদের কেনাকাটায় জমে উঠেছে রাজধানীর মার্কেট বিপণি বিতান শপিং কমপ্লেক্স ভোগ্যপণ্যের বাজার। ছুটি শুরু হওয়ায় ফাঁকা রাস্তায় ঈদের কেনাকাটা সারতে সবাই ছুটছেন এ বাজার থেকে ও বাজারে। গরু-ছাগলের পাশাপাশি ঈদ উদযাপনে সাধ্যমতো পছন্দের পোশাক-আশাক, সেমাই-চিনির মতো ভোগ্যপণ্য কেনাকাটা থেকে কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না। মাংস সংরক্ষণে অনেকেই নতুন ফ্রিজ কিনতে ছুটে যাচ্ছেন ইলেক্ট্রনিক শো-রুমগুলোয়। অনেকে আবার পুরান নষ্ট ফ্রিজ সারিয়ে নিচ্ছেন। ফার্নিচারের দোকানে দোকানেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিপণি বিতান, শপিং মল মার্কেটের ভিড়ই বলে দেয় উৎসব পালনে বোনাসের টাকা খরচ হচ্ছে ঈদের বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত শুক্রবার থেকে কেনাকাটা পুরোদমে জমে উঠেছে। কাল রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত পুরোদমে চলবে কেনাকাটা। ঈদের বাজার ধরতে ব্যবসায়ীদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ করছেন। এদিকে, ডেঙ্গুর প্রকোপে গত একমাস অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাবিক্রি। কোরবানি সামনে রেখে মার্কেটগুলো চাঙ্গা হয়ে উঠছে। সবধরনের পণ্যসামগ্রীর কেনাকাটা বেড়েছে। কোরবানির প্রধান অনুষঙ্গ গরু-ছাগলের পাশাপাশি সবধরনের কেনাকাটা ও বিক্রি বেড়েছে। এমনকি চাঁটাই, ত্রিপল, দা, বটি, ছুরির মতো পণ্যও দেদার বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য মাংস কাটায় ব্যবহার হয়ে থাকে। কোরবানি সামনে রেখে লবণের মতো তেতো পণ্যের কদর সবচেয়ে বেশি। কারণ এই লবণ চামড়ায় ব্যবহৃত হবে। চামড়া ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে লবণ সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সক্রিয়। ঢাকার গাউসিয়া মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন সালমা আক্তার। কেনাকাটা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ছেলেমেয়েদের জামা কাপড়ের পাশাপাশি নিজের জন্য একটি শাড়িও কেনা হয়েছে। এছাড়া নতুন বেডশিট ও অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করা হলো। তিনি বলেন, এটা ঠিক ঈদে গরু-ছাগল প্রধান কেনাকাটা। কিন্তু এর পাশাপাশি অন্যান্য সামগ্রীরও প্রয়োজন হয়। একইভাবে স্টেডিয়াম মার্কেটে ফ্রিজ কিনতে এক শো-রুম থেকে আরেক শো-রুম ঘুরছেন মুগদার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা নাহিদা রহমান। জানালেন, বাসার ফ্রিজটা ঠিকমতো কাজ করছে না। এ কারণে কোরবানির মাংস সংরক্ষণে নতুন ফ্রিজ কেনা হচ্ছে। কাপ্তানবাজারে ঈদের ভোগ্যপণ্য কিনতে এসেছেন স্বামীবাগের আজমল হোসেন। তিনি সেমাই, চিনি, পোলাওর চাল, দেশী মুরগি, ইলিশ মাছ ও প্রয়োজনীয় শাক-সবজি কিনছিলেন। জনকণ্ঠকে বললেন, ঈদের দিন খাওয়ার জন্য হরেক পদ করা হবে। আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে আসবেন। এজন্য ভাল খাবারের আয়োজন করতে কেনাকাটা করা হচ্ছে। তবে নিত্যপণ্যের বাজারে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা ও এলাচসহ মসলা জাতীয় পণ্যের বাজারে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কোরবানির মাংস রান্না করতে ক্রেতারা বেশি বেশি করে পেঁয়াজ ও রসুনের মতো মসলা জাতীয় পণ্য সামগ্রী কেনাকাটা করছেন। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩২-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এই দামও বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ইতোমধ্যে পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাতে কারসাজি না হয় সেজন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা টিসিবি খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে তাদের বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। কোরবানি সামনে রেখে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। কোরবানিতে কোন পণ্যের সঙ্কট হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সম্প্রতি তিনি বলেন, কোরবানিতে কোন পণ্যের সঙ্কট হবে না। চাহিদার তুলনায় দেশে পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলা জাতীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ কারণে ভোক্তাদের দ্রব্যমূল্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। টিসিবিও ট্র্যাকসেলে পণ্য বিক্রি করবে। বাজারে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ঈদের কেনাকাটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। গরু-ছাগলের খামারিদের এবার পোয়াবারো। কোরবানির হাটে ভালদামে বিক্রি হচ্ছে দেশী গরু। গত কয়েক বছর ধরে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে গড়ে উঠেছে অনেক খামার।
×