ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ বিনোদনে প্রস্তুত মহেড়া জমিদার বাড়ি

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১০ আগস্ট ২০১৯

 ঈদ বিনোদনে প্রস্তুত মহেড়া জমিদার বাড়ি

নিরঞ্জন পাল, মির্জাপুর ॥ ঈদে দর্শনার্থীদের বিনোদন দিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মহেড়া জমিদার বাড়ির চারটি তরফ। ঈদ-উল-আজহার ছুটিতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়ার দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ির সব তরফ দর্শনার্থীদের ভিড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের নিয়ন্ত্রণাধীন সৌখিন মর্যাদাশীল পশ্চিমা ও প্রাচ্যের শৈল্পিক কারুকার্যে ভরপুর বিশাল জমিদার বাড়িটি ইতোমধ্যে ধুয়ে মুছে ঝকঝকে করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা এই বিনোদন কেন্দ্রটি উপভোগ করা ছাড়াও জানতে পারবেন মহেড়ার জমিদারদের কোন সময় কিভাবে এখানে গোড়াপত্তন ঘটে। স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে কারুকার্য খচিত চার তরফের জমিদারদের চারটি ভবন। এর সঙ্গে রয়েছে চারটি কাচারি বাড়ি। তৃতীয় তরফের পিছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বড় একটি বৈঠকখানা। পুরো জমিদার বাড়িটি ঘিরেই রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং দেশী-বিদেশী ফুলের বাগান। শিশুদের আকৃষ্ট করতে রয়েছে নানা ধরনের পশু-পাখির প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্য। প্রত্যেক তরফের সামনে রয়েছে প্রশস্ত রাস্তা ও ফুলের বাগান। বাড়ির প্রবেশপথে রয়েছে দুটি সিংহদ্বার। সর্ব সামনে দক্ষিণে রয়েছে বিশাল দীঘি। জানা গেছে, ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের মহেড়া নামক স্থানে প্রায় দেড় শ’ একর জমির ওপর চার তরফের চার জমিদার চারটি ভবন নির্মাণ করে তাদের জমিদারি কার্যক্রম শুরু করেন। চার তরফেই রয়েছে চার কাচারি ভবন। রয়েছে বৈঠকখানা, ছিল বিভিন্ন দেবতার মন্দির। ভারত ভাগের সময় জমিদাররা তাদের সব স্থাপনা ফেলে ভারতে চলে যান। পরে সরকার পুরো জমিদার বাড়ি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। জমিদার বাড়ির তরফগুলোর মধ্যে রয়েছে বড় তরফ, দ্বিতীয় তরফ, তৃতীয় তরফ ও ছোট তরফ। বড় তরফ : চার তরফের সর্বপশ্চিমে অবস্থান বড় তরফের। বড় তরফের ভবনটির নাম মহারাজ লজ। মহারাজ লজটি জমিদার বাড়ির সর্ববৃহৎ স্থাপনা। এই দ্বিতল ভবনটিতে আছে সুপ্রশস্ত ১০টি কক্ষ। পশ্চিমা স্থাপত্যকলায় ভবনটি নির্মিত। ভবনটির পিছনে ছিল নাট মন্দির ও দুর্গা মন্দির। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে বড় তরফের ভবনটি নির্মিত হয়। গজেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী ছিলেন বড় তরফের কর্ণধার। ব্রিটিশ আমলে তিনি ছিলেন একজন বিচারক। তিনি বাঘ, হরিণ, ঘোড়া, ময়ূর, টিয়া ও ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী লালন-পালন করতেন। বর্তমানে ভবনটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষকদের ডরমিটরি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দ্বিতীয় তরফ : বড় তরফ সংলগ্ন দ্বিতীয় তরফের ভবনের অবস্থান। এই ভবনটির নাম আনন্দ লজ। একই সময় নির্মিত ভবনটিতে রয়েছে ১২টি কক্ষ। শৈল্পিক কারুকাজে ভরপুর ভবনটির নিচতলা ট্রেনিং সেন্টারের প্রশাসনিক অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই তরফের প্রধান কর্তা ছিলেন বকুল রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি। যাত্রাপালা গান-বাজনা ও থিয়েটার নিয়ে তিনি সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। এই তরফের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন রাধিকা লাল রায় চৌধুরী। তিনি ভারতবর্ষের দ্বিতীয় সুদর্শন পুরুষ হিসেবে ব্রিটিশ কর্তৃক নির্বাচিত হন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তৃতীয় তরফ : পশ্চিমা ও প্রাচ্যের শৈল্পিক কারুকাজে নির্মিত তৃতীয় তরফের ভবনটি। এই ভবনের নাম চৌধুরী লজ। এই তরফের প্রধান ব্যক্তির নাম সুধীন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। ভবনটিতে ছয়টি কক্ষ রয়েছে। ছোট তরফ : ছোট তরফের নাম হলো সিংহদ্বার ও কালীচরণ লজ। জমিদার কালীচরণ সাহা ভবনটি নির্মাণ করেন। এই ভবনের সামনে ছিল পূজাম-প। সেখানে রানী জমিদার নন্দন-নন্দনীগণ পূজা নিবেদন করতেন। বছরের সব সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জমিদার বাড়িতে বিনোদন পিপাসুরা বেড়াতে আসেন। তবে ঈদ ও দুর্গা পূজার সময় এই বিনোদন কেন্দ্রটিতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের এডিশনাল এসপি মোঃ রাজিবুল হাসানের সঙ্গে বিনোদন কেন্দ্রটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমিদার বাড়িটিতে বছরের সব সময় কমবেশি দর্শনার্থী আসেন। তবে ঈদের মধ্যে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাসহ বাড়তি কিছু ব্যবস্থা থাকে। ঈদ সামনে রেখে জমিদার বাড়ির সব আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
×